এসএসসিতে পরীক্ষা না থাকলে গুরুত্ব হারাবে ইসলামী শিক্ষা

Slider শিক্ষা

চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় ইসলাম শিক্ষা বাদ দেয়া হয়েছে। শিক্ষা জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক পরীক্ষা হচ্ছে মাধ্যমিক পর্যায়ের এই এসএসসি পরীক্ষা। আর এই পরীক্ষাতেই এবার ইসলাম শিক্ষা বিষয়ে কোনো পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে না। ইসলামী চিন্তাবিদ ও শিক্ষাবিদরা বলছেন সরকারের এই সিদ্ধান্তের কারণে মূলত ইসলামী শিক্ষা গুরুত্ব হারাবে। শিক্ষার্থীদের উঠতি বয়সে যেখানে নৈতিক শিক্ষার প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি সেখানেই গুরুত্বহীন করা হয়েছে ইসলাম শিক্ষাকে। অন্য দিকে শিক্ষা বোর্ড সূত্র বলছে করোনার কারণে এবার সাবজেক্ট ম্যাপিং করার সুবিধার্থে ইসলামী শিক্ষা বিষয়ে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে না। আর বোর্ড পরীক্ষায় ইসলাম শিক্ষা না থাকলেও ক্লাস এবং অন্যান্য সব ক্ষেত্রেই ইসলামী শিক্ষা পড়ানো হবে।

এ দিকে গতকাল মঙ্গলবার বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির এক বৈঠকে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার সময় নির্ধারণ ও তারিখ নির্ধারণ বিষয়ে বৈঠক হয়েছে। সেখানে পরীক্ষার তারিখ ও কোন কোন বিষয়ে পরীক্ষা এবং নম্বর ও সময় নির্ধারণ বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

সভা সূত্রে জানা যায়, এবার এসএসসিতে তিনটি বিষয় বাদ দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। বিষয়গুলো হলোÑ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, ধর্ম এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়। আর এইচএসসিতে বাদ যাবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি। আর নম্বর বিভাজন নিয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে, যেসব বিষয়ে ব্যবহারিক শিক্ষা নেই, সেসব বিষয়ে ৫৫ নম্বরের (সৃজনশীল ৪০, এমসিকিউ ১৫) পরীক্ষা হবে। আর যেসব বিষয়ে ব্যবহারিক শিক্ষা আছে, সেসব বিষয়ে ৪৫ নম্বরের (সৃজনশীল ৩০, এমসিকিউ ১৫) পরীক্ষা নেয়া যেতে পারে। এ ছাড়া এসএসসি ও এইচএসসিতে টেস্ট পরীক্ষা না নেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন অধিকাংশ বোর্ড চেয়ারম্যান। সূত্র আরো জানায় এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় যে তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা হবে না, সে বিষয়ে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে।

এসএসসি পরীক্ষায় ইসলাম শিক্ষা বিষয় বাদ দেয়ার বিষয়ে সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহসানুল হক মিলন গতকাল সন্ধ্যায় জানান, কোনো পর্যায়েই ধর্মীয় শিক্ষা বিষয়ে গুরুত্ব কম দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমার বিবেচনায় এটা করা হলে আমাদের ভিত্তিমূলে আঘাত করার শামিল হবে। কেননা আমি মনে করি এসএসসিতে ইসলামী শিক্ষাই শুধু নয়, অন্য কোনো ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা বাদ দেয়া হলে আমাদের প্রজন্ম ধর্ম শিক্ষা এবং মূল্যবোধ থেকে অনেক দূরে সরে যাবে। কোনো ধর্মীয় শিক্ষাকেই কম গুরুত্ব দেয়া বা পরীক্ষায় ওই বিষয় বাদ দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির আহমদ আলী কাসেমী বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের দেশে কোনো পাবলিক পরীক্ষায় ইসলামী শিক্ষা বিষয় বাদ দেয়া কোনো মতেই গ্রহণযোগ্য নয়। পরীক্ষায় যদি কোনো বিষয় বাদ দেয়া হয় তাহলে স্বাভাবিকভাবেই ওই বিষয়ের প্রতি শিক্ষার্থীদের গুরুত্ব কমে যাবে। পরীক্ষা না হলে ওই বিষয় শিক্ষার্থীরাও আর পড়বে না। এ ছাড়া আমাদের পাঠ্যসূচিতে যেভাবে ইসলাম শিক্ষার বিষয়বস্তু সাজানো হয়েছে সেখানে সব কিছু ভালোভাবে জানা বোঝার সুযোগও শিক্ষার্থীদের তেমন থাকে না। আমরা মনে করি এটা একটি বড় ধরনের ষড়যন্ত্র। আমরা দাবি জানাবো পরীক্ষা থেকে যেন ইসলাম শিক্ষা বিষয়টি বাদ দেয়া না হয়। অন্যথায় এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনগণকে সাথে নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ গড়ে তুলব।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক তপন কুমার সরকার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে করোনার কারণে চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা হবে না। এসব বিষয়ে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে। তিনি আরো জানান, গত রোববার শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানদের সংগঠন ‘আন্তঃশিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানস কমিটির’ সভায় এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাসংক্রান্ত বিভিন্ন প্রস্তাব করা হয়েছিল। এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা বোর্ড।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *