প্রথম দিন ছিল দৃশ্যত বাধাহীন। দ্বিতীয় দিনে কিছুটা প্রতিরোধের মুখে পড়ে রাশিয়ানরা। দিন শেষে এবং তৃতীয় দিনে রাজধানী কিয়েভে প্রচণ্ড প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী। সেখানে তীব্র থেকে তীব্র হয়ে উঠেছে লড়াই। রাজধানীর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে ফেলতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা সহ সব রকম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। কিন্তু এতে তারা ব্যর্থ হচ্ছে। গুঞ্জন উপেক্ষা করে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাননি। দেশ রক্ষায় লড়াই অব্যাহত রাখবেন। আত্মসমর্পণ করবেন না তিনি। অস্ত্রও সমর্পণ করবে না তার বাহিনী। একই সঙ্গে তিনি এখনই ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ অনুমোদন করার আহ্বান জানিয়েছেন। এ অবস্থায় ইউক্রেনকে আরও সামরিক সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বৃটেন ও অন্য ২৫টি দেশ।
ওদিকে রাশিয়ান সেনাদেরকে ব্যারাকে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ। রাশিয়ান সেনারা যাতে রাজধানী কিয়েভে প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য চারদিকে সেতু, সড়ক ধ্বংস করে দিয়েছেন ইউক্রেনের সেনাবাহিনী। ফলে রাজধানী দখলে নেয়া খুব সহজ কাজ নয় রাশিয়ানদের জন্য। তবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মেলিতোপল শহর নিজেদের দখলে নেয়ার দাবি করেছে রাশিয়ান সেনারা। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এই যুদ্ধে উভয়পক্ষে কমপক্ষে ৩৭০০ নিহত হয়েছে। ইউক্রেন দাবি করেছে, এর মধ্যে রাশিয়ার ৩৫০০ সেনা নিহত হয়েছে। প্রায় ৩০০ ইউক্রেনের সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছেন। রাশিয়ার নিহত সেনাদের লাশ উদ্ধার করে রাশিয়ায় ফেরত পাঠাতে রেডক্রসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউক্রেন। জাতিসংঘ বলছে, মস্কোর এই আগ্রাসন শুরুর পর থেকে কমপক্ষে এক লাখ ২০ হাজার নাগরিক ইউক্রেন ছেড়ে অন্য দেশে আশ্রয় নিয়েছে। আগামী মাসে মস্কোতে রাশিয়ার সঙ্গে বিশ্বকাপ ফুটবল ম্যাচ বাতিল ঘোষণা করেছে পোল্যান্ড। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী ফেসবুকে দেয়া পোস্টে দাবি করেছে, রাশিয়ান সেনারা রাজধানী কিয়েভে সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। কিন্তু ইউক্রেনের সেনারা সেই হামলা প্রতিহত করেছে। আলাদাভাবে ইন্টারফ্যাক্স ইউক্রেন বার্তা সংস্থা বলছে, রাশিয়ান সেনারা শহরের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর একটি দখলে নেয়ার চেষ্টা করছিল। অন্যদিকে বৃটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, রাশিয়ার সেনাদের হামলার পর হামলা সত্ত্বেও ইউক্রেনের সেনারা গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাশিয়ান সেনারা রাজধানী কিয়েভে বিভিন্ন দিক থেকে আক্রমণ করেছে। কিন্তু ইউক্রেনিয়ান আর্মড ফোর্সেস তাদের সামনে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।
রাশিয়ার উৎখাত পরিকল্পনা ভণ্ডুল হয়েছে
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি ভিডিও মারফত ভাষণ দিয়েছেন। তাতে তিনি বলেছেন, রাশিয়ানদের পরিকল্পনা তার বাহিনী থামিয়ে দিয়েছে। রাশিয়ানদের পরিকল্পনা ছিল রাতারাতি জেলেনস্কিকে ক্ষমতাচ্যুত করে কিয়েভে নিজেদের পছন্দমতো নেতা বসানো। এতে তিনি আগ্রাসন বন্ধ করতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে রাশিয়ানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, তার পরিকল্পনা আমরা ভণ্ডুল করে দিয়েছি। কিয়েভ ও মূল শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণে আছে ইউক্রেনের বাহিনী। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার অধিকার অর্জন করেছে তার দেশ। বর্তমানে ইউক্রেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য নয়। কিন্তু এতে যোগ দেয়ার এখনই উত্তম সময় বলে মন্তব্য করেছেন জেলেনস্কি। তিনি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, তাদেরকে এখনই সদস্য করে নেয়ার।
মস্কো থেকে দূতাবাসকর্মীদের সরিয়ে নেয়া হচ্ছে:মস্কোতে অবস্থিত ইউক্রেনের দূতাবাসের স্টাফদের উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে লাতভিয়াতে। লাতভিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এই তথ্য জানানো হয়েছে। মুখপাত্র জ্যানিস বেকেরিস বলেছেন, তারা আমাদের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। আমরা দ্রুত তাতে সম্মত হয়েছি। তাদেরকে নিয়ম অনুযায়ী সহায়তা করছি এবং সমস্যার সমাধান করছি। এরই মধ্যে দূতাবাসকর্মীরা লাতভিয়ায় পৌঁছেছেন কিনা নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ থাকার জন্য সে বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি ওই মুখপাত্র।
আবাসিক ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা: রাজধানী কিয়েভে একটি আবাসিক ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। শহরের মেয়র ভিতালি ক্লিটশ্চকো বলেছেন, তাৎক্ষণিকভাবে এতে হতাহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। দ্রুত সেখানে হাজির হয়েছে জরুরি ও উদ্ধার সার্ভিসের লোকজন। কিয়েভের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে আবাসিক একটি টাওয়ারে এই হামলা হয়েছে শনিবার। তিনি একটি ম্যাসেজিং অ্যাপে ছবি পোস্ট করেছেন। তাতে দেখা যাচ্ছে ভবনটির একদিকে বড় গর্ত হয়ে গেছে। এতে কয়েকটি তলা পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ওই ভবন। এ জন্য অধিবাসীদের নিরাপদে আশ্রয় নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, এখন আকাশপথে হামলা চালাবে শত্রুরা।
ব্যারিকেড গড়ে তোলার আহ্বান: বেসামরিক জনসাধারণকে ব্যারিকেড গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী। এ ছাড়া রাশিয়ার সেনাদের থামাতে পেট্রোল বোমা ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছে। যেকোনো মূল্যে রাশিয়ানদের প্রতিহত করার জন্য জনগণকে জেগে উঠতে বলা হয়েছে। ফেসবুকে দেশটির সশস্ত্র বাহিনী একটি পোস্ট দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে- গাছ কেটে ফেলুন। রাস্তায় ব্যারিকেড দিন। টায়ারে আগুন দিন। যা পারেন তাই দিয়ে রাশিয়ানদের প্রতিরোধ করুন। দখলদারদের অবশ্যই বুঝতে হবে, এই জনগণ তাদেরকে চায় না। তাদেরকে প্রতিটি সড়কে প্রতিরোধ করতে হবে।