চির অম্লান হোক আত্মীয়তার বন্ধন

লাইফস্টাইল

মানুষ সামাজিক জীব। আত্মীয়তার বন্ধন মানুষের মধ্যে প্রেম-প্রীতি আর ভালোবাসার সৌধ নির্মাণ করে। মানুষকে দুঃখ-কষ্ট ও প্রতিকূল অবস্থায় সহযোগিতা করে। অন্তরে আনন্দ জোগায়, মনোবল সৃষ্টি করে। আত্মীয়, বন্ধুবান্ধব ছাড়া এ জীবন অচল। আত্মীয়দের সহযোগিতা ও ভালোবাসা নিয়েই মানুষ এ পার্থিব জীবনে বেঁচে থাকে। সুন্দর সফল সমাজ এবং আনন্দময় পরিবার গঠনে আত্মীয়তার সুসম্পর্ক অপরিহার্য। আত্মীয়স্বজনের অধিকার আদায়, তাদের সঙ্গে সুসম্পর্কের ধারাবাহিক আস্থা স্থাপন এবং নির্মল সেতুবন্ধ প্রতিষ্ঠা মানবিক দায়িত্ব, মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি ও প্রকৃতিগত চাহিদা। আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা ইসলামের অন্যতম বিধান, রসুল (সা.)-এর অনুপম আদর্শ, কোরআন-হাদিসের অপরিহার্য নির্দেশনা। আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার তাৎপর্য হলো, তাদের সার্বিক খোঁজখবর নেওয়া এবং তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করা। প্রয়োজনে সাধ্যমতো তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করা। অসুস্থ হলে তাদের সেবা করা, মেহমানদারি করা এবং দীন ধর্মের ব্যাপারে তাদের সৎ পরামর্শ দেওয়া ও সতর্ক করা। মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘আল্লাহকে তোমরা ভয় কর, যাঁর নামে তোমরা একে অন্যের কাছে সাহায্য চাও এবং আত্মীয়স্বজনের সম্পর্ক ছিন্ন করার ক্ষেত্রে তোমরা আল্লাহকে ভয় কর।’ সুরা নিসা আয়াত ১। অন্য আয়াতে তিনি নির্দেশ করেন, ‘আর আত্মীয়স্বজনকে দেবে তার প্রাপ্য এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকে এবং কিছুতেই অপব্যয় কোরো না।’ সুরা বনি ইসরাইল আয়াত ২৬। আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীদের প্রতি কোরআন-হাদিসে ভয়ংকর ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে যারা আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করে তাদের। আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘ক্ষমতা লাভ করলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। আল্লাহ এদের ওপর লানত (অভিশাপ) করেন। এরপর তাদের বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন করেন।’ সুরা মুহাম্মদ আয়াত ২২-২৩। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের ওপর ইমান রাখে সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে এবং আত্মীয়তার বন্ধন যেন রক্ষা করে।’ বুখারি, মুসলিম। মহানবী (সা.) অন্য হাদিসে বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার জীবিকা ও আয়ু বৃদ্ধির প্রত্যাশা করে সে যেন তার আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করে।’ বুখারি। ইসলামের দৃষ্টিতে মা-বাবার সঙ্গে আন্তরিকতা বজায় রাখা ফরজ। পারিবারিক সুসম্পর্ক ও নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করা ওয়াজিব- একান্ত অপরিহার্য। এমনকি একজন মুসলমানের অন্য মুসলমানের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা ইসলামের বিধান। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো মুসলমান তার মুসলিম ভাইকে তিন রাতের বেশি বর্জন করা বৈধ নয়।’ বুখারি, মুসলিম। আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা শুধু মারাত্মক অপরাধ নয় বরং একটি সামাজিক ব্যাধি। যা একটি সুস্থ সমাজ ও সুন্দর পরিবেশ গড়া এবং মানবতাবোধ জাগ্রত হওয়ার অন্তরায়। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন, সামাজিক শান্তিশৃঙ্খলা ও একটি স্বর্গীয় সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিবন্ধক। ফলে ইসলাম আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখার সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করেছে। ছিন্নকারীদের প্রতি কঠিন হুঁশিয়ারি ও শাস্তির ঘোষণা দিয়েছে। আল কোরআনের ইরশাদ, ‘যারা আল্লাহর অঙ্গীকার দৃঢ় করার পর ভঙ্গ করে, আল্লাহ যে সম্পর্ক বজায় রাখতে আদেশ করেছেন তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে ওরা ওই সব লোক যাদের জন্য রয়েছে লানত এবং তাদের জন্য রয়েছে কঠিন আজাব।’ সুরা আরবাদ আয়াত ২৫।

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা ঢাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *