ফুল বাজারে ভালোবাসা আর বসন্তের রং

অর্থ ও বাণিজ্য লাইফস্টাইল

‘বসন্ত আজ আসলো ধরায়/ফুল ফুটেছে বনে বনে/শীতের হাওয়া পালিয়ে বেড়ায় ফাল্গুনী মোর মন-বনে/ফুলগুলি হায় ঝরেছিল হিমেল হাওয়ার পরশনে/দখিন হাওয়ার হিল্লোলে আজ প্রিয়তমের স্পর্শ নে…।’ দ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার কবিতায় বসন্তের পদধ্বনি, ভালোবাসা আর ফুল গেঁথেছিলেন এক সুতোয়। আবার আসছে বসন্ত, আসছে ভালোবাসার দিন। দরজায় একসঙ্গে কড়া নাড়ছে বাঙালির জোড়া উৎসব। সেই রসায়নে ফুলের ব্যবসাও জম্পেশ।

লাল, হলুদসহ নানা রঙের চোখ জুড়ানো তাজা ফুলে সেজেছে পাইকারি আড়ত আগারগাঁও বাজারসহ রাজধানীর ফুলের দোকানগুলো। করোনার দাপট আটকাতে পারেনি চাষির মুখের হাসি। নব উল্লাসে, নব উদ্যমে দেশের ২৪ জেলার প্রায় দুই লাখ চাষিসহ এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সবাই ব্যস্ত সময় পার করছেন।

গতকাল শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পাইকারি ফুলের বাজার ঘুরে দেখা যায়, দুই দিবস একদিনে হওয়ায় হরেক রকমের ফুলের পসরা নিয়ে বসেছেন পাইকাররা। নিজস্ব নার্সারির পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ট্রাকে-পিকআপে এসেছে ফুল। এর মধ্যে দামে ও চাহিদার শীর্ষে ভালোবাসার প্রতীক লাল গোলাপ। আছে গাঁদা আর রজনীগন্ধার চাহিদা। স্তূপ করে রাখা হয়েছে হরেক রঙের গোলাপ। বালতিভর্তি দেখা গেছে বেশ কয়েক রঙের জারবেরা। বাজারে খুচরা বিক্রেতাদের পদচারণা ছিল চোখে পড়ার মতো।

ব্যবসায়ীরা জানান, পাইকারি বাজারটিতে একশ পিস গোলাপ একসঙ্গে বিক্রি হচ্ছে। চায়না গোলাপের অনেক চাহিদা। এখানে গোলাপি, হলুদ, সাদা ও লাল চায়না গোলাপ বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। ‘মিস্টার লিঙ্কন গোলাপ’ একশ পিস একসঙ্গে বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকায় আর ‘মিরিন্ডা গোলাপ’ একশ পিস বিক্রি হচ্ছে ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকায়। তবে এক পিস লাল গোলাপ কিনতে গেলেই গুনতে হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। গাঁদা ফুলের ২০টি মালা বিক্রি হচ্ছিল ২৫০ থেকে ৫০০ টাকায়। জারবেরা ১০ থেকে ২০ টাকা পিস। গ্লাডিওলাসের পিস ১০ থেকে ১৫ টাকা। রজনীগন্ধা ৫০ পিস ৫৫০ টাকায় বিক্রি হয়। এ বছরই চাষিরা বাণিজ্যিকভাবে টিউলিপ বিক্রি করছেন। টিউলিপ প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। প্রতি পিস গাজরা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে।

আগারগাঁও পাইকারি ব্যবসায়ী সমবায় লিমিটেডের সভাপতি নূর মোহাম্মদ বলেন, মাঝে করোনার প্রভাব পড়লেও এবার চাষির মুখে হাসি ফুটেছে। রাত ১২টা থেকে এ বাজারে চাষিরা ফুল নিয়ে আসেন। সরাসরি তারাই ফুল বিক্রি করেন। ভোর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ক্রেতাদের কাছে ফুল বেচেন এই বাজারের ২৮০ ব্যবসায়ী। এ ছাড়া বাজারে অসংখ্য ‘ফরিয়া’ আছেন, যারা নির্ধারিত ব্যবসায়ী ছাড়াও নিজেরাই চাষিদের কাছ থেকে ফুল কিনে তা বিক্রি করেন। তিনি আরও বলেন, বসন্ত আর ভালোবাসা দিবস ঘিরে ইতোমধ্যে ফুলের বাজার জমে উঠেছে। শনিবার একদিনেই এ বাজারে কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে। রোববার ও আগামীকাল রাতভর ফুল বেচাকেনা হবে।

ঢাকা ফুল ব্যবসায়ী কল্যাণ বহুমুখী সমিতি লিমিটেড থেকে জানানো হয়েছে, ‘ফেব্রুয়ারি মাস ঘিরেই (বসন্ত, ভালোবাসা ও একুশে ফেব্রুয়ারি) তারা প্রায় ৩০ থেকে ৪০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিলেন।’ শেফালী পুষ্পালয়ের কর্মী জয়নাল বলেন, ‘লক্ষ্য অনুযায়ী বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার- এই তিন দিনেই ভালো ফুল বিক্রি হয়েছে। এ দুই দিনেও কোটি টাকার বেশি ফুল বিক্রি হবে।’

শাহবাগের ফুলের দোকান ঘুরেও দেখা গেছে একই ছবি। ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার ফুল ব্যবসায়ীরা। শাহবাগের খুচরা ফুল বিক্রেতা মো. ইলিয়াস বলেন, পহেলা ফাল্কগ্দুন ও ভালোবাসা দিবস ঘিরে ফুলের বিক্রি গত দুই বছরের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এবার করোনা প্রভাব ফেলতে পারেনি বাজারে। নৃত্যশিল্পী সাগর আচার্য্য তার খুদে শিক্ষার্থীদের জন্য ফুল কিনতে শাহবাগে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘দুই উৎসব একদিনে হওয়ায় ফুলের দাম অনেক চড়া। তবুও শিক্ষার্থীরা এ ফুল পেয়ে খুশি হবে। তারা সবাই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *