সংসদে যৌন হয়রানি, ক্ষমা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

সারাবিশ্ব

অস্ট্রেলিয়ার সংসদের বিভিন্ন দপ্তরে যৌন হয়রানির ঘটনায় ক্ষমা চেয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন।

প্রায় এক বছর আগে প্রথম ধর্ষণের অভিযোগ এনেছিলেন সংসদের কর্মী ব্রিটনি হিগিনস।
তার দেখাদেখি আরও কয়েকজন নারী কর্মী যৌন হয়রানি ও কর্মক্ষেত্রে তাদের বিব্রত করার অভিযোগ আনেন। এ নিয়ে দীর্ঘ রাজনৈতিক ‘চাপান-উতোর’ শুরু হয় দেশটিতে। চাপে পড়ে একাধিক তদন্তের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী মরিসন।

মঙ্গলবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) সংসদে দাঁড়িয়েই ব্রিটনির কাছে সবার হয়ে ক্ষমা চেয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী। শুধু তাই নয়, যৌন হয়রানির শিকার হওয়া অন্য নারীদের কাছেও ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন তিনি।

স্কট মরিসন বলেন, মিস হিগিনসের কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। এখানে তার যা ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হয়েছে তা ভাবা যায় না। সেই সঙ্গে আমি ক্ষমাপ্রার্থী তাদের কাছেও যারা আগে এ ধরনের ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন।

সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী মরিসন কার্যত মেনে নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার রাজনীতিতে এ ধরনের ঘটনা নতুন নয়।

দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে সংসদের নারী কর্মীদের ওপরে এ ধরনের যৌন অত্যাচার হয়ে এসেছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, নারী কর্মীদের অভিযোগ আগে সে ভাবে গুরুত্ব দিয়ে শোনা হতো না।

২০১৯ সালে এক মন্ত্রীর দপ্তরে ব্রিটনিকে ধর্ষণ করেছিল তারই এক সহকর্মী। ব্রিটনির অভিযোগ, তাকে পুলিশের কাছে যেতে প্রথমে বাধা দেওয়া হয়েছিল। প্রায় এক বছর পরে নিজের অভিযোগ নিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হন। তার দেখাদেখি সংসদের আরও অনেক নারী কর্মী নিজেদের হেনস্থার অভিযোগ প্রকাশ্যে আনেন।

নারীদের ওপরে হওয়া যৌন নির্যাতন নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সরকার যে কয়েকটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল, তার মধ্যে অন্যতম জেনকিন্স রিভিউয়ের ৪৫০ পাতার রিপোর্ট জানিয়েছে, দেশটিতে কর্মরত নারীদের এক-তৃতীয়াংশ কর্মক্ষেত্রে নিয়মিত যৌন হয়রানির শিকার হন। নিজের বক্তৃতায় কার্যত সেই সব অভিযোগকে স্বীকার করে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মরিসন।

তিনি বলেন, এই পরিস্থিতির পরিবর্তন প্রয়োজন। এর পরিবর্তন হচ্ছে এবং আমার বিশ্বাস এর পরিবর্তন হবেই।

ব্রিটনির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন বিরোধী দলনেতা লেবার পার্টির অ্যান্টনি অ্যালবানিজও। ব্রিটনির উদ্দেশে তিনি বলেন, নীরবতার সংস্কৃতিকে ভেঙে তছনছ করে দিয়েছেন আপনি।

পুরো বক্তৃতা সংসদের পাবলিক গ্যালারিতে বসে শুনেছেন ব্রিটনি। তার সঙ্গী হয়েছিলেন যৌন হয়রানির শিকার হওয়া সংসদের আরও তিন প্রাক্তন নারী কর্মী।

এ ঘটনায় বুধবার (০৯ ফেব্রুয়ারি) ক্যানবেরায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে বক্তব্য রাখেন ব্রিটনি।

তিনি বলেন, ক্ষমা চাওয়াই সবকিছু নয়। ব্যবস্থা নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। টাস্কফোর্স দুর্দান্ত, আচরণবিধিও। যদি এটি প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত হয়।

এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন যৌন হেনস্থার শিকার হওয়া আর এক নারী গ্রেস টেমও। অবশ্য গ্রেসের বক্তব্য, নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই এখন ক্ষমা চাওয়ার নাটক করছেন প্রধানমন্ত্রী মরিসন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *