অবরোধের ৫৪ দিন দেড় হাজার মামলা, আসামি লক্ষাধিক, গ্রেপ্তার ১৬,০০০

Slider বাংলার সুখবর

65986_f5

  বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা টানা অবরোধ ও হরতালে গত ৫৪ দিনে সারা দেশে দেড় সহস্রাধিক মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে লক্ষাধিক ব্যক্তিকে। সারা দেশ থেকে প্রায় ১৬ হাজার বিরোধী নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ হিসেবে গড়ে প্রতিদিন ৩ শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এ সময়ে রাজধানী ঢাকাতে মামলা হয়েছে ৩২৫টি। এসব মামলা ১ হাজার ৫৬২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। পুলিশ সদর দপ্তর ও ডিএমপি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশ থেকে গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে বেশির ভাগই বিরোধী জোটের নেতাকর্মী। রাজধানী ঢাকাতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোসাদ্দেক আলী ফালুসহ বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঢাকার বাইরে প্রায় প্রতিটি জেলা-উপজেলা এবং বিভাগীয় শহরের বিরোধী জোটের শীর্ষ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের ডাকা অবরোধ-হরতাল ডাকার পর থেকে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে আসছে। নাশকতা প্রতিরোধে প্রতিটি জেলাতেই সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তারের নির্দেশনা রয়েছে। গ্রেপ্তার অভিযান জোরদারের পর নাশকতার পরিমাণও কমে এসেছে বলেও তারা দাবি করেন। সূত্র জানায়, রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলার বিরোধী জোটের নেতাকর্মীদের একাধিক তালিকা করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকায় সিটি এসবি ও গোয়েন্দা শাখা ছাড়াও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে বিরোধী জোটের নেতাকর্মীদের তালিকা করা হয়। ঢাকার বাইরে প্রতিটি মহানগরী এলাকাতেও একইভাবে তালিকা তৈরি করা হয়েছে। আর মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে প্রতিটি জেলায় পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে জেলা-উপজেলার বিরোধী জোটের নেতাকর্মীদের তালিকা তৈরি করে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, অবরোধ শুরু হওয়ার পর থেকেই গ্রেপ্তার আতঙ্কে রাজধানী ও জেলা-উপজেলার নেতাকর্মীদের বেশির ভাগই আত্মগোপনে চলে গেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের মোবাইল ট্র্যাকিং ও অন্যান্য সোর্সের মাধ্যমে তালিকা অনুযায়ী গ্রেপ্তার অভিযান পরিচালনা করছে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, গত ৫ই জানুয়ারি থেকে ৩১শে জানুয়ারি পর্যন্ত রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় মোট ৭৮৫টি মামলা হয়। এর মধ্যে আদালতে ৯৪টি মামলার অভিযোগপত্র ও ৪৭টি মামলায় চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগরী এলাকায় ১৭২, চট্টগ্রাম মহানগরে ৩৬, রাজশাহী মহানগরে ৬৬, খুলনা মহানগরে ১, বরিশাল মহানগরে ২৮, সিলেট মহানগরে ১৮, ঢাকা রেঞ্জে ৮৩, চট্টগ্রাম রেঞ্জে ৪৪, রাজশাহী রেঞ্জে ১১৭, রংপুর রেঞ্জে ৪৪, খুলনা রেঞ্জে ৪৭, বরিশাল রেঞ্জে ৮৯ ও সিলেট রেঞ্জে ৪০টি মামলা হয়েছে। সূত্র জানায়, ফেব্রুয়ারি মাসে প্রায় একই সংখ্যক মামলা হয়েছে। এ হিসেবে গত ৫৪ দিনে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে দেড় সহস্রাধিক মামলা হয়েছে। পুলিশ সূত্র জানায়, সারা দেশে করা এসব মামলায় জ্ঞাত ও অজ্ঞাত মিলিয়ে লক্ষাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। সারা দেশে গ্রেপ্তার করা হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার বিরোধী নেতাকর্মীকে।
এদিকে ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, গত ৫৪ দিনে রাজধানী ঢাকায় রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় ৩২৫টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ১ হাজার ৫৬২ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ডিএমপির হিসাব অনুযায়ী, গত ৫৪ দিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নাশকতাকালীন হাতেনাতে ২৩০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। এ ছাড়া নাশকতা নিবারণমূলক অভিযানে বিএনপির ৯০০ নেতাকর্মী, জামায়াত-শিবিরের ৩৮২ নেতাকর্মী ও হিযবুত তাহ্‌্‌রীরের ১৮ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় মোট ৩২ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩০ জন বিএনপি নেতাকর্মী ও দুজন জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী। ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, সহিংসতা-সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, রাজধানী ঢাকায় সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে। আর ঢাকার বাইরে ঢাকা রেঞ্জ ও রাজশাহী রেঞ্জের বিভিন্ন জেলায় তুলনামূলক মামলার সংখ্যা বেশি। এর কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, রাজশাহী রেঞ্জের রাজশাহী ও চাঁপাই নবাবগঞ্জ এলাকায় বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের আধিপত্য থাকায় মামলা ও গ্রেপ্তারের সংখ্যাও বেশি হয়েছে। এর বাইরে রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকাতেও সহিংসতার ঘটনা যেমন বেশি হয়েছে, তেমনি মামলা ও গ্রেপ্তারের সংখ্যাও বেশি হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *