গুম নিয়ে পর্যালোচনায় বসছে জাতিসংঘ বাংলাদেশের ৭৬টি ঘটনা উঠবে বৈঠকে

Slider সারাবিশ্ব


গুমের ঘটনা নিয়ে পর্যালোচনায় বসছে জাতিসংঘ। আজ থেকে এই পর্যালোচনা বৈঠক শুরু হচ্ছে। এতে বাংলাদেশের ৭৬টি গুমের ঘটনা নিয়েও আলোচনা হবে। পাশাপাশি আরও ২৩টি দেশের তিন শতাধিক ঘটনা পর্যালোচনা করবে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ। এটি এই গ্রুপের ১২৬তম বৈঠক।

ভার্চুয়াল ওই বৈঠকে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজন, ২৪টি দেশের সরকারের প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও অন্য অংশীজনের সঙ্গে অভিযোগ নিয়ে আলোচনা করবে দক্ষিণ কোরিয়ার তায় উং বাইকের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের কমিটি।

জাতিসংঘ জানায়, বিশেষজ্ঞরা গুমের অভিযোগগুলোর প্রেক্ষাপটে ‘গুম থেকে সুরক্ষাবিষয়ক ঘোষণা’ বাস্তবায়নের বাধাগুলোও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন। ওই ঘোষণার ৩০তম বার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ, ২০২২ ও ২০২৩ সালে বিভিন্ন দেশ সফরসহ অন্যান্য কর্মসূচিও এবারের বৈঠকে চূড়ান্ত হবে।

জাতিসংঘের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের এক নথিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গুমের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। কয়েক বছর ধরে এ নিয়ে উদ্বেগ জানালেও বাংলাদেশ কোনো সাড়া দিচ্ছে না। ১৯৯৬ সাল থেকে ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশের কাছে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছে। বাংলাদেশ কেবল একটি গুমের অভিযোগের বিষয়ে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে। বাংলাদেশে গুমের ক্ষেত্রে র‌্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।

গুমবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ কমিটির তথ্য অনুযায়ী, তারা ৮৩টি গুমের অভিযোগের বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে গুম হয়েছে এমন ৭৬ জনের একটি তালিকা দিয়েছে ওয়ার্কিং গ্রুপ। যা এখনো নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে। গত বছর ডিসেম্বরে এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের গুমের অভিযোগ ওঠে।

জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেন, জাতিসংঘের কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান গুমের তালিকায় যে লোকজনের নাম দিয়েছিল, তাদের অনেকের ভূমধ্যসাগরে সলিল সমাধি হয়েছে। বাংলাদেশি একটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে তারা (জাতিসংঘের কমিটি) প্রতিবেদন তৈরি করেছে। তাদের নিজেদের কোনো গবেষণা নেই। খুবই পক্ষপাতিত্বমূলক প্রতিষ্ঠানের তথ্য দিয়ে তারা (জাতিসংঘের কমিটি) বলল, আপনার দেশে অতজন লোক (গুম হয়েছে)। তারপর কিছু লোকের নাম দিয়েছে। নাম দেওয়ার পর দেখা গেল, আমাদের লোকজন দুয়েকজন ছাড়া ওই তালিকার কাউকেই চেনেন না। আপনারা তাদের নাম জানেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, গুম হওয়া লোকজনের বিষয়ে তথ্য নিতে পুলিশ তাদের পরিবারের কাছে দু-একবার গেছে। পুলিশের ধারণা, দিনের বেলায় তারা থাকবেন না, তাই রাতের বেলায় গেছে। তখন তারা (পরিবারের সদস্যরা) অভিযোগ করেছেন, তাদের হয়রানি করা হচ্ছে। পুলিশ জানতে চায়, তাদের পরিবারের সদস্য কবে, কোথায়, কেন গেছেন- কিছু জানেন কিনা। কারণ অনেকেই আবার ফেরত চলে আসেন। দু–এক দিন এ রকম করার পর তারা অভিযোগ করলেন।

ওয়ার্কিং গ্রুপের ১২৫তম অধিবেশন শেষে তৈরি করা প্রতিবেদনে বাংলাদেশের গুম পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য তুলে ধরা হয়। গত ২০ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর ওয়ার্কিং গ্রুপের ওই বৈঠক হয়। গত ৬ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন হালনাগাদ করে ওয়ার্কিং গ্রুপ।

হালনাগাদ প্রতিবেদনে গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ বলেছে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও ভিন্নমতাবলম্বীদের নিশানা করতে গুমকে অব্যাহতভাবে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধে। গুমের এসব অভিযোগের বিষয়ে তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য রয়েছে। গুমের শিকার হওয়া থেকে প্রত্যেক ব্যক্তির সুরক্ষাসংক্রান্ত ঘোষণার (ডিক্লারেশন অন দ্য প্রটেকশন অব অল পারসনস ফ্রম এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স) লঙ্ঘন ও এ ঘোষণা বাস্তবায়নে বাংলাদেশে বাধা দেওয়ার অভিযোগ বিষয়ে বিভিন্ন সূত্র থেকে তথ্য পেয়েছে ওয়ার্কিং গ্রæপ। এ সাধারণ অভিযোগ ২০১১ সালের ৪ মে, ২০১৬ সালের ৯ মার্চ, ২০১৭ সালের ২২ ফেব্রæয়ারি ও ২০১৯ সালের ২২ মে বাংলাদেশ সরকারের কাছে পাঠানো অভিযোগগুলোর অতিরিক্ত হিসেবে বিবেচনায় নিতে হবে। এখনো পর্যন্ত এসব অভিযোগের কোনো জবাব দেওয়া হয়নি। এসব অভিযোগের বিষয়ে সরকারের কাছ থেকে যেমন সাড়া পাওয়ার অভাব ছিল; তেমনি বাংলাদেশে সফরের অনুরোধে সাড়া না পাওয়ার বিষয়টিও রয়েছে। ২০১৩ সালের ১২ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত জবাব দেওয়া হয়নি, যা আরও বেশি অস্বস্তির। মনে রাখা দরকার, যত অভিযোগ পাওয়া গেছে, এর সবই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা ও গোয়েন্দা বাহিনীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এসব সংস্থা ও বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা বিশেষ করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বা অন্য ভিন্নমতাবলম্বীদের নিশানা করার জন্য বারবার ও অব্যাহতভাবে গুমকে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *