বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ইমরান শরীফ ও জাপানি নাগরিক ডা. এরিকো নাকানোর দুই মেয়ে জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে নিয়ে তাদের মায়ের পক্ষে করা আপিল আবেদনের শুনানি আজ।
বিষয়টি রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ভার্চুয়াল বেঞ্চে শুনানি হবে।
এর আগে গত বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) ওই দুই শিশুকে মায়ের কাছে নিতে মায়ের পক্ষে নিয়মিত আপিল আবেদন (সিপি) করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।
ওইদিন তিনি বলেন, আমরা হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়টি হাতে পেয়েছি। রায় সংযুক্ত করে নিয়মিত আপিল (সিপি) দায়ের করেছি। এজন্য এই বিষয়ে শুনানিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে আপিল বিভাগের আদালত।
এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি সকালে আপিল বিভাগ ইমরান শরীফ ও ডা. এরিকো নাকানোর দুই মেয়েকে তাদের মায়ের সঙ্গে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত থাকার আদেশ দেন। তবে মায়ের কাছে থাকলেও প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টার মধ্যে যেকোনো সময় বাবা ইমরান শরীফ তাদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন।
জাপানি মায়ের আপিল শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি নুরুজ্জামান ননীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বিচারপতির বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে ওইদিন জাপানি মায়ের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি, অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম। তাদের সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। ইমরান শরীফের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফিদা এম কামাল, অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম। তাদের সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার মারুফুল ইসলাম।
ওইদিন শুনানিতে আপিল বিভাগ বলেন, প্রধান বিচারপতি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে আমরা এই মামলা শুনবো। আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আগের আদেশ বহাল থাকবে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ আবারও শুনানির জন্য বিষয়টি কার্যতালিকায় রয়েছে।
তার আগে গত ৩ জানুয়ারি এক আদেশে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বলেছিলেন, ওই দুই মেয়ে আগামী ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের মায়ের কাছে থাকবে। রাজধানীর বারিধারার হোটেল স্কট প্যালেসে থাকবে তারা। তবে মায়ের কাছে থাকলেও প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টার মধ্যে যেকোনো সময় বাবা ইমরান শরীফ শিশুদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন।
জাপানি মায়ের আপিল শুনানি নিয়ে ওইদিন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের তিন সদস্যের বেঞ্চ এই আদেশ দিয়েছিলেন।
তার আগে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর দুই মেয়েকে নিজের কাছে নেওয়ার জন্য জাপানি মা নাকানো এরিকোর করা আপিলের বিষয়ে আদেশ দিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আদেশে বলা হয়, ওই দুই মেয়ে ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের মায়ের কাছে থাকবে।
গত বছরের ২১ নভেম্বর দুই মেয়েকে তাদের বাবার জিম্মায় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। তবে জাপানি মা চাইলে ১০ দিন করে বছরে ৩০ দিন দেখা করতে এবং তাদের সঙ্গে একান্তে অবস্থান করতে পারবেন বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
আইনজীবী শিশির মনিরের তথ্যমতে, ২০০৮ সালের ১১ জুলাই শরীফ ইমরানের সঙ্গে বিয়ে হয় এরিকো নাকানোর। জাপানি আইনানুসারে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তারা টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। ১২ বছরের সংসারে তিনটি কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করে।
তারা হলো- জেসমিন মালিকা, লাইলা লিনা ও সাত বছরের সানিয়া হেনা। এরিকো পেশায় একজন চিকিৎসক। তিন মেয়ে টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের (এএসজেআই) শিক্ষার্থী ছিল।
গত বছরের ১৮ জানুয়ারি শরীফ ইমরানের সঙ্গে এরিকোর বিবাহবিচ্ছেদ হয়। এরপর ২১ জানুয়ারি ইমরান আমেরিকান স্কুল ইন জাপান কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। এতে এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ ইমরানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এরপর একদিন জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা স্কুলবাসে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্ট্যান্ড থেকে ইমরান তাদের অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান।
ওই বছরের ২৫ জানুয়ারি ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছ থেকে মেয়েদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। কিন্তু এরিকো ওই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে মেয়েদের নিজ জিম্মায় পেতে আদেশ চেয়ে ২৮ জানুয়ারি টোকিওর পারিবারিক আদালতে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি মেয়েদের সঙ্গে এরিকোর সাক্ষাতের অনুমতি দিয়ে আদেশ দেন।
কিন্তু ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়েকে সাক্ষাতের সুযোগ দেন। এরপর গত বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি ‘মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে’ ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্ট গ্রহণ করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে নিয়ে তিনি দুবাই হয়ে বাংলাদেশে আসেন।
এরপর একই বছরের ৩১ মে টোকিওর পারিবারিক আদালত জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে তাদের মা এরিকোর জিম্মায় হস্তান্তরের আদেশ দেন। তবে দুই মেয়ে বাংলাদেশে থাকায় বিষয়টি নিয়ে তিনি বাংলাদেশের একজন মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করেন। গত বছরের ১৮ জুলাই তিনি শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে আসেন।