জানুয়ারিতে মৃতদের ৭৩% টিকা নেননি: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

Slider জাতীয়

চলতি বছর জানুয়ারিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ৭৩ শতাংশ টিকা নেননি বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে যুক্ত হয়ে বুধবার দুপুরে এই তথ্য দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম।
অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম জানান, চলতি বছর জানুয়ারিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৩১ জন মারা গেছেন সারাদেশে। তাদের মধ্যে প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছিলেন ৭৮ জন, দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়েছেন ৬৮ জন।

এসময়ে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ঢাকা বিভাগে। জানুয়ারিতে ঢাকা বিভাগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৯ জন। সবমিলিয়ে ঢাকায় মৃত্যু হয়েছে ১২ হাজার ৪৫১ জনের; মৃত্যুর হার ৪৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ।

ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে করোনায় শনাক্তের ৩১ শতাংশ থেকে নেমে ২৯ শতাংশের কিছু বেশি রয়েছে। তবে একে খুব পরিবর্তন বলে নারাজ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘গত সাত দিনে সংক্রমণ পরিস্থিতি আমরা যা দেখেছি তা ৩০ শতাংশের উপরে ও খানিক নিচে ঘুরপাক খেয়েছে। সংক্রমণের হার ছিল ৩১ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ১ ফেব্রুয়ারি সেটি নেমে এসেছে ২৯ দশমিক ১৭ শতাংশে। কিন্তু সেটি খুব বড় পরিবর্তন নয়। সপ্তাহের শুরুতে রোগী শনাক্ত হয়েছিলেন ১৫ হাজার ৫২৭ জন, ১ ফেব্রুয়ারি তা ছিল ১৩ হাজার ১৫৪ জনে। পুরো সপ্তাহজুড়ে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১০ থেকে ১৫ হাজারের মধ্যে রয়েছে।’

করোনায় শনাক্ত ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, গত ২০২০ সালে জুন-জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ৫ লাখ ১৩ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৭ হাজার ৫৫৯ জনের। সবচেয়ে বেশি রোগী ছিল ২০২১ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে। জুলাই মাসে ৩ লাখ ৩৬ হাজারের বেশি, আগস্ট মাসে ২ লাখ ৫১ হাজারেরও বেশি। মৃত্যুর ঘটনাও এ দুই মাসে সবচেয়ে বেশি ছিল। জুন মাসে ৬ হাজার ১৮২ জন, আগস্ট মাসে ৫ হাজার ৫১০ জন। তারপর শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কমতে শুরু করলেও ২০২২ সালের জানুয়ারিতে আবার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ছিল বেশি।

গত ২৮ জানুয়ারি সংক্রমণের হার ছিল সবচেয়ে বেশি, ৩৩ শতাংশ। আর সর্বনিম্ন ছিল ২০২০ সালের ৩০ মার্চ, দশমিক ৬৫ শতাংশ।

অধ্যাপক নাজমুল বলেন, ‘২০০২ জানুয়ারি পর্যন্ত ২ লাখ ১৩ হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছেন সারাদেশে। রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকলে তা কিন্তু স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর চাপ সৃষ্টি করে।’

তিনি জানান, এ পর্যন্ত ৯ কোটি ৭৭ লাখ লোক প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন, দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়েছেন ৬ কোটি ২১ লাখ মানুষ। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ১ কোটি ৮১ লাখ মানুষকে প্রথম ডোজ ও ১ কোটির বেশি মানুষকে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া ১ কোটি ৩৯ লাখ স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে ২২ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থীকে।

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের দাপটের মধ্যে এর আরেকটি উপ ধরনের বিস্তার নাটকীয়ভাবে বাড়ছে কয়েকটি দেশে। বিজ্ঞানীরা ওমিক্রনের সাধারণ রূপটির নাম দিয়েছেন বিএ.১, বর্তমানে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে অধিকাংশ কোভিড সংক্রমণের জন্য এ ধরনটিকেই দায়ী করা হচ্ছে।

এর মধ্যেই ওমিক্রনের আরেকটি উপধারা বিএ.২ ইউরোপ এবং এশিয়ার কিছু দেশে বিএ.১ কে ছাপিয়ে যেতে শুরু করেছে, যা নিয়ে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা।

পাবলিক ভাইরাস ট্র্যাকিং ডেটাবেজ ‘জিআইএসএআইডি’রতথ্য অনুযায়ী গত বছরের নভেম্বরে প্রথমবার ওমিক্রন ধরনটি শনাক্তের পর ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ৯৮ দশমিক ৮ শতাংশ সংক্রমণের জন্য দায়ী এর বিএ.১ ধরনটি। কিন্তু কিছু কিছু দেশে বিএ.২ উপধারাটির সংক্রমণ এখন বাড়ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

ফ্রেড হাচিনসন ক্যান্সার সেন্টারের কম্পিউটেশনাল ভাইরোলজিস্ট ট্রেভর বেডফোর্ড জানিয়েছেন, ডেনমার্কে ৮২ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ৯ শতাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ৮ শতাংশ সংক্রমণের কারণ এখন বিএ.২। জিআইএসএআইডি ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডেটা’ প্রকল্প থেকে উপাত্ত নিয়ে বিশ্লেষণের পর ওই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন তিনি।

নতুন এই ধরনটি নিয়ে দেশবাসীকে সতর্ক করে দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ‘ওমিক্রনের নতুন এই ধরনটি ৫৭টি দেশে ছড়িয়েছে। এই ভেরিয়েন্ট আগের ভেরিয়েন্টগুলোর তুলনায় আরও বেশি সংক্রামক হতে পারে। আমাদের আত্মতুষ্টির কোনো সংযোগ নেই। রোগীর সংখ্যা যেন না বাড়ে সেজন্য স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে যথাযথভাবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *