‘মেয়র বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ নন, তার কোনো কথা শুনবো না’

Slider শিক্ষা

রাবি: ক্যাম্পাসে ট্রাক চাপায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী মাহবুব হাবিব হিমেলের মৃত্যুর প্রতিবাদে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাত ১টার দিকে সেখানে উপস্থিত হন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।

তবে শিক্ষার্থীরা তার কথা শুনেন নি। মেয়র বক্তব্য দিতে এলে শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন।
জানা যায়, মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। পরে রাত দেড়টার দিকে রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও স্থানীয় রাজনীতিবিদরা সেখানে আসেন। এ সময় মেয়রকে দেখে শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন।

শিক্ষার্থীরা মেয়রকে উদ্দেশ্যে করে বলেন বলেন, ‘মেয়র আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ নয়। উনি কেন এখানে আসবেন? আমরা উনার কোনো কথা শুনতে চাই না। ’ এ সময় আমার ভাইয়ের হত্যা নিয়ে রাজনীতি চলবে না বলে স্লোগান শুরু করেন তারা।

একপর্যায়ে মেয়র ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিলেও শিক্ষার্থীরা এ প্রস্তাবে রাজি হননি। উপাচার্য মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. লিয়াকত আলীকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো লিখিতভাবে গ্রহণ করেন। এরপরে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করেন।

জানা যায়, মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে শহীদ হবিবুর রহমান হলের সামনে দুর্ঘটনায় গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহবুব হাবিব হিমেল ক্যাম্পাসে ট্রাকচাপায় নিহত হন। তিনি শহীদ শামসুজ্জোহা হলের আবাসিক ছাত্র। এছাড়া তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ড্রামা অ্যাসোসিয়েশনের (রুডা) সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোটের দফতর সম্পাদক ছিলেন।

এ সময় সিরামিক ও ভাস্কর্য বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রায়হান প্রামাণিক আহত হন। তিনি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ক্যাম্পাসে দু’টি আবাসিক হল ও একটি একাডেমিক ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। এর মধ্যে একটি হল নির্মাণ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হলের সামনে। অন্যটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনের পাশে। শহীদ হবিবুর রহমান হলের সামনে একাডেমিক ভবন নির্মিত হচ্ছে। নির্মাণ কাজে ট্রাকযোগে বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী আনা-নেওয়া করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার রাতে হিমেল ও রায়হান মোটরসাইকেলযোগে ক্যাম্পাস থেকে হলে ফিরছিলেন। পথে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলের সামনে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা নির্মাণ সামগ্রীবাহী একটি ট্রাক মোটরসাইকেলটিকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই মাথা পিষ্ট হয়ে হিমেল মারা যান। রায়হানকে আহতাবস্থায় রামেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

নিহতের ঘটনা জানাজানি হলে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত পাঁচটি ট্রাক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। তারা প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করেন। পরে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *