মাঠজুড়ে সবুজ পাতার মধ্যে হালকা বেগুনি রঙের ফুল কৃষকের মনে দোলা দিচ্ছে রঙিন স্বপ্ন। যতদূর চোখ যায়, মাঠের পর মাঠ শিম আর শিম। এ চিত্র সবচেয়ে বেশি পাবনা সদর, আটঘরিয়া ও ঈশ্বরদী উপজেলার। আর মাঠে মাঠে এখন চলছে শিম তোলা ও পরিচর্যার কাজ। চলতি মৌসুমে পাবনা জেলায় চার হাজার হেক্টর জমিতে শিম আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধারা হয়েছে এক লাখ ২০০ টন।
এ দিকে আগাম জাতের শিম আবাদ করে ভাগ্য বদলেছে আলহাজ উদ্দিনের। কিনেছেন জমি, হয়েছে নতুন ঘর। পাবনার আটঘড়িয়া উপজেলার খিদিরপুর গ্রামের এই শিমচাষির অবস্থা পাঁচ বছর আগেও ভালো ছিল না। পাঁচ বছর আগে গ্রামের বিভিন্ন জমিতে আগাম জাতের শিম চাষ করতে দেখে তিনিও তার বাড়ির পাশে এক বিঘা জমিতে শিমের আবাদ শুরু করেন। সেই থেকে শুরু, আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। মাত্র পাঁচ বছরেই পাল্টে গেছে তার সংসারের চিত্র।
বেড়া উপজেলার পদ্মা-যমুনা নদী বেষ্টিত পলি মাটির ঢালার চরের কৃষকরা বাণিজ্যিকভিত্তিতে শিমচাষ করছেন। গত পাঁচ বছর ধরে এ চরে শিম আবাদ হচ্ছে। শিমচাষি আফজাল জানান, তার এলাকায় বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পর জমিতে আগাম জাতের শিম লাগানো হয়। ইতোমধ্যে জমি থেকে তিনবার শিম তুলে বিক্রি করেছেন। যেভাবে গাছে ফুল আসছে তাতে ভালো ফলন পাওয়া যাবে। আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস পর্যন্ত জমি থেকে শিম তোলা যাবে।
আটঘড়িয়া উপজেলার নাদুরিয়া গ্রামের একাধিক চাষি জানান, এসব জমি ধান চাষের উপযুক্ত নয়। তাই তাদের মতো অনেকেই শিমচাষ বিকল্প হিসেবে বেছে নিয়েছেন। আলহাজ উদ্দিনের মতো আগাম জাতের শিমচাষ করে ভাগ্য ফিরেছে পাবনা জেলার অনেক কৃষকের। অটো ও রূপবান নামে দুই রকমের শিমের বেশ ভালো চাহিদা রয়েছে। দামও ভালো পাচ্ছেন চাষিরা। শুরুতে পাঁচ হাজার টাকা মণ বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে দাম কমে তিন হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে।
পারখিদিরপুর গ্রামের ইউনুস আলীর স্ত্রী শেফালি খাতুন জানান, বেশি লাভের কারণে তিন ছেলেমেয়েসহ শিম ক্ষেতে কাজ করে আনন্দ পান। সোনাতলা, সরাবাড়িয়া গ্রামের কৃষকরা জানান, শিম আবাদের ক্ষেত্রে সরকার সহায়তা দিলে বিশেষ করে সার, কীটনাশকের ক্ষেত্রে ভর্তুকি দিলে কৃষক আরো বেশি লাভবান হতো।
আটঘড়িয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় ও স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার নাছিরামপুর, রামেশ্বর, কাঁকমাড়ি, কচুয়ারামপুর, দুর্গাপুর, রোকনপুর, খিদিরপুর, পারখিদিরপুর চাঁদভা, নাদুরিয়া, সাড়াবাড়িয়া, কলমনগর, সোনাকান্দার, সঞ্জয়পুর, বাচামারা, হাপানিয়া, বেরুয়ান, কুমারেশ্বর ও লহ্মণপুর গ্রামের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে শিমের আবাদ হচ্ছে। দিগন্ত বিস্তৃত এই শিমক্ষেতের জন্য এলাকার পরিচিতিই বদলে গেছে। লোকমুখে এই এলাকার নাম এখন ‘শিম সাগর।’
উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তম শিমের আড়ত ঈশ্বরদীর মুলাডুলি গিয়ে দেখা যায়, জায়গা সঙ্কুলান না হওয়ায় আশপাশের এলাকায় শিম রাখা হয়েছে।