প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের আমন্ত্রণে আজ ঢাকা আসছেন ভারতের প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দ। মহান বিজয় দিবসের সুবর্ণ জয়ন্তী, মুজিববর্ষের সমাপনী এবং বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বের ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে আসছেন তিনি। প্রেসিডেন্টের সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন তার সহধর্মিণী ও কন্যা, ভারতের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী, দুইজন সংসদ সদস্য, পররাষ্ট্র সচিবসহ বিভিন্ন দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন প্রেসিডেন্ট কোবিন্দের প্রথম বাংলাদেশ সফর প্রস্তুতির বিস্তারিত তুলে ধরেন। তুরস্ক সফরে থাকায় ভার্চ্যুূয়ালি ওই সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত হন তিনি। ভারতীয় প্রেসিডেন্টের সফরে কী কী বিষয়ে আলোচনা হতে পারে? জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের নেতাদের মধ্যে যখন সাক্ষাৎ হয়, তখন সব ধরনের সমস্যা নিয়েই কথা হয়। যদিও ভারতের প্রেসিডেন্ট একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আসছেন তথাপি বিদ্যমান ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। হাইব্রিড প্ল্যাটফরমে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত থাকা পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এ সময় বলেন, এবারের সফরে কোনো চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে না।
তবে ভারতের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের জাতীয় দিবসে অংশ নিতে আগামী জানুয়ারিতে দিল্লি যাচ্ছেন কিনা- এমন প্রশ্নে মন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘সে ধরনের কোনো কিছু হলে অবশ্যই জানাবো।’
প্রেসিডেন্ট কোবিন্দের আগমন এক ঘণ্টা পিছিয়েছে: এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, বিজয় দিবসের শুরুত্বপূর্ণ অতিথি প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দের সফরসূচিতে শেষ সময়ে কিছু পরিবর্তন এসেছে। সর্বশেষ তথ্য মতে, পূর্ব নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা পরে প্রেসিডেন্ট ঢাকা পৌঁছাবেন। দিল্লির পক্ষ থেকে ঢাকা সেই বার্তা পাওয়ার পর বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতাও এক ঘণ্টা পিছিয়ে দেয়া হয়। তবে এটি নিশ্চিত করা হয় যে, আবহাওয়া ঠিক থাকলে প্রেসিডেন্টকে বহনকারী স্পেশাল ফ্লাইটটি দুপুরের আগে আগেই ঢাকার মাটি স্পর্শ করবে। বিমানবন্দরে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ তার অতিথিকে স্বাগত জানাবেন। সেখানে ২১ দফা গান স্যালুটে তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে। বিমানবন্দর থেকে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন রামনাথ কোবিন্দ। সেখান থেকে ফিরে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে অবস্থিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন এবং তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করবেন। বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ হবে। ওই দিনই বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে। মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত একটি টি-৫৫ ট্যাংক এবং একটি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষণ এবং প্রদর্শনের জন্য প্রেসিডেন্টকে উপহার দেবেন ভারতের প্রেসিডেন্ট। সফরের দ্বিতীয় দিন ১৬ই ডিসেম্বর জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ভারতের প্রেসিডেন্ট ‘গেস্ট অব অনার’ হিসেবে বাংলাদেশের বিজয় দিবসের সুবর্ণ জয়ন্তী উদ্যাপন অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। এরপর বিকালে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তীর ঐতিহাসিক মুহূর্তে ‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান, স্পিকারসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অংশ নিবেন। সফরের তৃতীয় দিন (১৭ই ডিসেম্বর) ভারতের প্রেসিডেন্ট ঢাকার রমনাস্থ কালীমন্দিরে যাবেন। সেখানে সদ্য সংস্কারকৃত অংশের উদ্বোধন এবং মন্দির পরিদর্শন করবেন। মন্দির সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্যদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত মতবিনিময়ের আগ্রহও দেখিয়েছেন তিনি। একই দিনে রাষ্ট্রীয় সফর শেষে দুপুরে দিল্লির উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করবেন রামনাথ কোবিন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের বিস্তারিত: ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে পাঠ করা লিখিত বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, ভারত বাংলাদেশের প্রতিবেশী এবং অকৃত্রিম বন্ধু দেশ। বাংলাদেশ ও ভারত শুধু সীমান্ত সম্পর্কে আবদ্ধ নয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বন্ধুপ্রতিম এ দেশটির অকুণ্ঠ সমর্থন দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্কের ভিত্তি রচনা করেছে। পরবর্তীতে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় এবং গতিশীল হয়েছে। প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সুসম্পর্কের অনন্য নিদর্শন হিসেবে ভারতের প্রেসিডেন্ট ঢাকায় তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফর করছেন। মন্ত্রী বলেন, সফরের প্রথমদিনে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও আমার সৌজন্য সাক্ষাৎ হবে। সাক্ষাতে দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে বলে আমরা আশা করছি। পরবর্তীতে, তিনি রাষ্ট্র প্রধানের সঙ্গে বঙ্গভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এসময় ভারতের প্রেসিডেন্ট মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত একটি টি-৫৫ ট্যাংক এবং একটি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষণ এবং প্রদর্শনের জন্য উপহার হিসেবে প্রেসিডেন্টের হাতে তুলে দিবেন। বঙ্গভবনে তার (রাষ্ট্রীয় অতিথি) সম্মানে হোস্ট বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আয়োজিত নৈশভোজে সফরসঙ্গীদের নিয়ে অংশ নেবেন তিনি। একই বছরে একটি দেশের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিবেশী দেশে রাষ্ট্রীয় সফর যেকোনো দেশের ইতিহাসে বিরল ঘটনা আখ্যা দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ভারতের পক্ষ থেকে এসব সফর দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কেরই প্রতিফলন। এ বছর বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি এবং ৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে ভারত কর্তৃক বাংলাদেশকে স্বাধীন এবং সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের উপলক্ষকে আরও উপজীব্য করে তোলার জন্য বাংলাদেশ এবং ভারত সরকার ৬ই ডিসেম্বর ২০২১ তারিখকে “মৈত্রী দিবস’’ হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তারই প্রেক্ষিতে, ঢাকা এবং নয়াদিল্লি সহ বিশ্বের ২০টি দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ এবং ভারতের কূটনৈতিক মিশন মৈত্রী দিবস একযোগে উদ্?যাপন করেছে। বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ২০২১ সালে বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের এধরনের সফর দুই দেশের বিদ্যমান সম্পর্কের খাতায় মাইলফলক অধ্যায় হিসেবে স্বর্ণাক্ষরে উল্লেখ থাকবে বলেও উল্লেখ করেন মন্ত্রী।