মুরাদ কী আত্মগোপনে!

Slider ফুলজান বিবির বাংলা


বেফাঁস মন্তব্য এবং অশ্লীল বাক্যবাণের কারণে মন্ত্রিত্ব হারানো ডা. মুরাদ হাসানের দেখা মিলেনি গত দুইদিনে। তিনি এখন কোথায় আছেন তাও স্পষ্ট নয়। মঙ্গলবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে নারীদের নিয়ে মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। এর বাইরে তিনি কোনো গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পাওয়ার পর মঙ্গলবার দুপুরে ই-মেইলের মাধ্যমে নিজের পদত্যাগপত্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেন। পরে তা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়।

গতকাল সন্ধ্যায় তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছে দেয়া হয়। মন্ত্রিসভা ছাড়ার দিনেই জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের পদ খুইয়েছেন ডা. মুরাদ হাসান। বলা হচ্ছে তিনি দল থেকেও বহিষ্কার হবেন। দলের পরবর্তী কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। দল থেকে বহিষ্কার হলে সংসদ সদস্য পদও হারাবেন তিনি। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু নৈতিক স্খলনের অভিযোগ ওঠার পর তাকে মন্ত্রিসভা থেকে সরানো হয়েছে তাই তিনি সংসদ সদস্য পদে থাকারও যোগ্য নন।

কয়েকটি বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর ডা. মুরাদের বিরুদ্ধে সারা দেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ায় সোমবারই ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যান মুরাদ। সেখানে এক বন্ধুর বাসায় উঠার কথা থাকলেও তিনি উঠেন হোটেল রেডিসনে। হোটেলে থাকা অবস্থায় মন্ত্রিত্ব ছাড়ার নির্দেশ পান তিনি। পরে রাতে হোটেল ছেড়ে এক বন্ধুর বাসায় কিছু সময় কাটিয়ে তিনি বের হয়ে যান। এরপর থেকে তিনি কোথায় আছেন তা জানা যাচ্ছে না। বলা হচ্ছে- পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে ডা. মুরাদ আত্মগোপনে চলে গেছেন। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ডা. মুরাদ প্রকাশ্যে আসেননি। তার ব্যবহৃত ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। গতকাল রাতেই তার বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় একটি জিডি করা হয়েছে। জিডিটি’র আবেদনকারী হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সলিমুল্লাহ মুসলিম হল সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জুলিয়াস সিজার তালুকদার। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগটি জিডি হিসেবে নেয়া হয়েছে। সেটি তদন্ত চলছে। জিডিতে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর নামে করা অভিযোগে জুলিয়াস সিজার তালুকদার উল্লেখ করেন, বিবাদী সাবেক তথ্য ও সমপ্রচার প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান কর্তৃক একটি ফেসবুক পেজ থেকে গত ০৫/১২/২০২১-ইং তারিখ বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে একটি বিকৃত যৌনাচার ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ দেখতে পাই। যাতে তিনি স্পষ্ট করে উল্লেখ করেন ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি)…সময়ও আমার নেই।’ এতে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, দেশের সর্ব প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠকে তিনি উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাচ্ছিল্য করেছেন। ঢাবি’র ঐতিহ্যবাহী রোকেয়া হল এবং শামসুন্নাহার হলের নারী শিক্ষার্থীদের চরিত্র হননের অপচেষ্টা করে বলেন, ‘তারা রাতে নিজের হলে অবস্থান না করে বিভিন্ন পাঁচ তারকা হোটেলে গিয়ে রাত্রিযাপন করে।’ এই বাক্য দ্বারা তিনি ঢাবি’র নারী শিক্ষার্থীদের চরিত্র হননের অপচেষ্টা করেছেন। অভিযোগে আরও বলা হয় যে, আমরা মনে করি যে কোনো বিদ্যাপীঠই পবিত্র স্থান এবং একজন নাগরিকের চারিত্রিক বিষয়ে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে একটি সীমারেখা রক্ষা করা সবার দায়িত্ব। তাই উপরোক্ত দুই মন্তব্যের মাধ্যমে শুধু ঢাবি নয়, বরং সব বিদ্যাপীঠের প্রতি তীব্র অশ্রদ্ধা প্রদর্শনের মাধ্যমে তিনি মধ্যযুগীয় কায়দায় ঘৃণার রাজনীতি করার অপপ্রয়াস দেখিয়েছেন। এ বিষয়ে রমনা জোনের পুলিশের ডিসি মো. সাজ্জাদুর রহমান জানান, একজন ব্যক্তি শাহ্‌বাগ থানায় সাবেক প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছেন সেটি জিডি হিসেবে নেয়া হয়েছে।

ওদিকে মন্ত্রিপরিষদের একজন কর্মকর্তা গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ডা. মুরাদ হাসানের পদত্যাগপত্র আমরা পেয়েছি। এর সারাংশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন।

রাষ্ট্রধর্ম ও ৭২-এর সংবিধানে ফিরে যাওয়া নিয়ে বক্তব্য দিয়ে প্রথম আলোচনায় এসেছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। এরপর বিভিন্ন বিষয়ে একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন তিনি। সর্বশেষ রোববার রাতে এক চিত্রনায়িকার সঙ্গে কথোপকথনের অডিও ভাইরাল হলে সেই সমালোচনার ঝড় আরও তীব্রতর হয়। এমন প্রেক্ষাপটে গতকাল মঙ্গলবারের মধ্যে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে তাকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। গত অক্টোবরে প্রথম রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বিরোধিতা করে আলোচনায় আসেন মুরাদ হাসান। সে সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশ কোনো ধর্ম ব্যবসায়ী, মৌলবাদীদের আস্তানা হতে পারে না। যেকোনো মূল্যে ৭২-এর সংবিধানে ফিরে যেতে হবে। বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। এই ঘটনার পর পর প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদের পুরনো কিছু ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম নিয়ে সমালোচকদের উদ্দেশ্যে ডা. মুরাদ হাসান হুঙ্কার দিয়ে বলেছিলেন, ‘ডা. মুরাদ মাথা নিচু করে কথা বলবে না। মাথা উঁচু করেই কথা বলবে। কাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করো, কুশপুত্তলিকা দাহ করো। আমরা যদি শুরু করি তাহলে ঢাকার মাটিতে টিকতে পারবেন না। ডাক্তার মুরাদ হাসান সম্পর্কে ভালো করে জেনে নিয়েন। তারপরে কথা বলেন। আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, আমাকে সম্মান দিয়ে কথা বলুন।’ একের পর এক বিকৃত অশালীন বক্তব্য, প্রতিহিংসামূলক আক্রমণাত্মক অঙ্গভঙ্গি সব মিলিয়ে ভাইরাল হয়ে আলোচনায় ছিলেন ডা. মুরাদ হাসান। সর্বশেষ ঐতিহ্যবাহী একটি সামাজিক ক্লাবে ঘটিয়েছেন অশোভন কাণ্ড। ক্লাব কর্তারা সদস্যদের তুমুল আপত্তির মুখে তাকে বের করে দেন। এরপর তার দুটি টেলিফোন অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়ে ভাইরাল হয় যেখানে কান রাখা যায় না। এমন অশালীন কথাবার্তা ও আচরণের পরেও তিনি কীভাবে মন্ত্রিসভায় থাকেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। গত শনিবার একটি টিভি টকশোতে উপস্থিত বিএনপির একজন সাবেক নারী এমপিকে ‘মানসিক রোগী’ বলে অভিহিত করে তার সঙ্গে বিতণ্ডায় লিপ্ত হন তিনি। রোববার রাতে তার সঙ্গে এক চিত্রনায়িকার কথোপকথনের অডিও ভাইরাল হলে সেই সমালোচনার ঝড় আরও তীব্রতর হয়েছে। এসব ঘটনায় আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীও তথ্য প্রতিমন্ত্রীর ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। তার সমালোচনা করে বক্তব্য আসছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেই। এর পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিষয়টি নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বেসরকারি নারী সংগঠন নারীপক্ষ।

গতকাল সচিবালয়ে পদত্যাগপত্র পাঠানোর পর পরই দেশবাসী ও মা-বোনদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন ডা. মুরাদ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে মুরাদ বলেন, ‘আমি যদি কোনো ভুল করে থাকি অথবা আমার কথায় মা-বোনদের মনে কষ্ট দিয়ে থাকি তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মমতাময়ী মা দেশরত্ন বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সব সিদ্ধান্ত মেনে নেবো আজীবন।

১৯৭৪ সালের ১০ই অক্টোবর জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার দৌলতপুর গ্রামে জন্ম মুরাদ হাসানের। তার বাবা মতিয়ার রহমান তালুকদার জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক। ২০০১ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন মুরাদ। ২০০৫ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে প্লাস্টিক রিকনস্ট্রাকটিভ সার্জারির ওপর পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ট্রেনিং শেষ করেন। ২০১১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে রেডিয়েশন অনকোলজির ওপর এমফিল ডিগ্রি নেন। ২০০০ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ শাখার ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০০৩ সালে আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৩ সালে আওয়ামী লীগের জামালপুর জেলা শাখার সদস্য, ২০১৪ সালে জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং ২০১৫ সালে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন মুরাদ। ২০১৭ সালে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে জামালপুর-৪ আসন থেকে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মুরাদ হাসান। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও নৌকা প্রতীকে জামালপুর-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ২০১৮ সালে গঠিত আওয়ামী লীগ সরকারে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান মুরাদ হাসান। ২০১৯ সালের ১৯শে মে তৎকালীন সরকারের মন্ত্রিসভায় প্রথম রদবদল আনা হয়। এতে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়।

ডিবি-র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে ইমনের কাছে যা জানতে চাওয়া হয়
পদত্যাগী তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান ও চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির ফোনালাপের বিষয়ে চিত্রনায়ক ইমনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে গোয়েন্দা পুলিশ ও র‌্যাব। সোমবার গোয়েন্দা পুলিশের জেরার পর গতকাল র‌্যাব কার্যালয়ে ডেকে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে ডা. মুরাদের সঙ্গে ইমনের কতোদিন আগে এবং কী ধরনের সম্পর্ক রয়েছে তা জানতে চাওয়া হয়। মাহিয়া মাহির সঙ্গে তার কতো দিনের সম্পর্ক। তাদের এই ত্রিমুখী সম্পর্কের জালে বড় কোনো প্রভাবশালী আর কেউ যুক্ত আছে কিনা? দুই বছর আগের ঘটনা হঠাৎ করে কীভাবে ভাইরাল হয়েছে। যে কল রেকর্ডটি ফাঁস হয়েছে সেটা ইমন, মাহিয়া মাহি এবং ডা. মুরাদের ছিল কিনা তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, অডিওটি তাদের মধ্যেকার ছিল কিনা এবং এটি ফাঁসের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে কার্যালয়ে ডাকা হয়েছিল। এ বিষয়ে যেহেতু কেউ এখন পর্যন্ত অভিযোগ করেনি তবে অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান এই গোয়েন্দা কর্র্মকর্তা।

এদিকে গতকাল বিকাল পাঁচটায় ডা. মুরাদের সঙ্গে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি ও চিত্রনায়ক মামনুন হাসান ইমনের ফাঁস হওয়া ফোনালাপটির বিষয়ে জানতে ইমনকে র‌্যাব সদর দপ্তরে ডাকা হয়েছে। এ বিষয়ে র?্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন মানবজমিনকে বলেন, অডিও ফাঁস সংক্রান্ত সার্বিক বিষয়ে খোঁজ নিতে ইমনকে কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে।
সূত্র জানায়, তথ্য প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পরপরই রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে ডা. মুরাদের ঘনিষ্ঠ একজন বন্ধুর নামে একটি স্যুট ভাড়া নেন। যেখানে তার ছিল নিয়মিত যাতায়াত। সেখানে তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অনেকে মুরাদের সঙ্গী হতেন। এখন পর্যন্ত মুরাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা সম্পর্কে একাধিক নায়িকা এবং মডেলের নাম উঠে এসেছে।

এক বছর আগে গুলশানের একটি পাঁচ তারকা হোটেলে অতিথিদের সঙ্গে ঝামেলায় জড়ান মুরাদ। এ সময় তিনি অতিথি ও কর্মচারীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারের এক পর্যায়ে মারমুখী হন। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ফুটেজ থাকলেও তা তৎক্ষণাৎ সরিয়ে নেয়া হয়। এ বিষয়ে জানতে হোটেলে ফোন দিলে তাদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই বলে জানায় হোটেল সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া খিলক্ষেতে অবস্থিত আরেকটি পাঁচ তারকা হোটেলে বিভিন্ন সময় ডান্সবারসহ রাতের পার্টিতে অংশ নিতেন তিনি। এ ছাড়া ডা. মুরাদের নিয়মিত যাতায়াত ছিল গুলশান ও বনানীর কিছু ক্লাবে।

মাহির সঙ্গে ফোনালাপ ফাঁস: মামলা হলে মুরাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে ডিবি
চিত্র নায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে অশালীন ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনায় সদ্য পদত্যাগ করা তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তবে এখনো এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। যদি মামলা হয় তাহলে দ্রুত তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আর মামলা না হলেও প্রয়োজনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। কারণ এ ঘটনার ছায়া তদন্ত করছে ডিবি। এ ছাড়া আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পেলে চিত্র নায়িকা মাহিয়া মাহি ও চিত্র নায়ক ইমনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। গতকাল ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এমনটি বলেছেন ডিবির যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশিদ। এদিকে ভাইরাল হওয়া ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল র‌্যাব সদর দপ্তরে তলব করা হয়েছে চিত্র নায়ক ইমনকে। এর আগে গত সোমবার রাতে ডিবি কার্যালয়ে গিয়েছিলেন চিত্র নায়ক ইমন। তিনি ফোনালাপ ফাঁসের বিষয়ে ডিবি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বলেছেন।

ডিবি সূত্র জানিয়েছে, সোমবার রাতে একটি অনুষ্ঠানের দাওয়াত দিতে ইমন ডিবি কার্যালয়ে যান। সেখানে ফোনালাপ ফাঁসের বিষয়টি উঠে আসে। পরে ইমন নিজেই ফোনালাপ ফাঁসের বিষয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন। তিনি ডিবি কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, ওইদিন হঠাৎ করে মুরাদ হাসানের ফোন পেয়ে তিনি অনেকটা ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। এ ছাড়া ফোন দিয়ে তিনি নানা রকম কথাবার্তা শুরু করেন। এমন পরিস্থিতিতে তিনি চেষ্টা করেছেন মুরাদ হাসানকে শান্ত রাখার। মুরাদ মাহিকে চাওয়া মাত্রই তিনি মাহির কাছে ফোন দিয়েছেন। তবে তারা কি কথা বলেছেন সেটি তিনি জানতেন না। এ ছাড়া ইমন এরকম পরিস্থিতিতে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। কারণ সবাই ধারণা করছেন ইমন নিজেই তার মোবাইল থেকে রেকর্ডটি ছড়িয়ে দিয়েছেন। তবে ডিবি কর্মকর্তারা দুই বছর আগের ফোনালাপ কীভাবে ফাঁস হয়েছে, কার কাছ থেকে ফাঁস হয়েছে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কিছু বলতে চাননি। তদন্ত সাপেক্ষে বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানিয়েছেন।

এদিকে গতকাল মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে ডিবির যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশিদকে ফোনালাপ ফাঁস প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। ফাঁস হওয়া ফোনালাপে ডা. মুরাদ হাসানের মুখে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহারের কথা বলতে শোনা যায়। এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি অন্য কোনো বাহিনীর কথা বলবো না। যেহেতু তিনি ডিবির কথা উল্লেখ করেছেন তাই প্রয়োজনে আমরা তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবো। নায়ক ইমনের মোবাইল থেকে অডিওটি ছড়িয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। আমরা এখনো তদন্তের পর্যায়ে আছি। ইমন ও মাহি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ যদি তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দায়ের করে এবং অভিযোগটি যদি ডিবিতে আসে তাহলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো। কোনোকিছু ভাইরাল হলে ডিবির সাইবার ইউনিট দেখভাল করে ও তদন্ত করে। মাহি যদি দেশে আসে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা মাহিকেও জিজ্ঞাসাবাদ করবো। ফাঁস হওয়া ফোনালাপে ধর্ষণের বিষয়ে কথা হয়েছিল। পরে ধর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেছিল কিনা? জবাবে হারুন বলেন, এ ধরনের অভিযোগ আমরা পাইনি। নায়ক ইমন নায়িকাদের বিভিন্নভাবে ব্যবহার করেন এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ পেলেই বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখবো।

জেলা আওয়ামী লীগ থেকে অব্যাহতি, আনন্দ মিছিল, কুশপুত্তলিকা দাহ
এমএ রউফ, সরিষাবাড়ী (জামালপুর) থেকে জানান, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের পদত্যাগের খবরে তার নির্বাচনী এলাকা জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে আনন্দ মিছিল করেছে আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। গতকাল উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আল-আমিন হোসাইন শিবলুর নেতৃত্বে একটি আনন্দ মিছিল আরামনগর বাজার ট্রাক মালিক সমিতির মোড় থেকে শুরু করে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা করা হয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা মুরাদ হাসানের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন। এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক পদ থেকেও ডা. মুরাদ হাসানকে অব্যাহতি দিয়েছেন জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগ। মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় শহরের বকুলতলাস্থ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ ও সাধারন সম্পাদক ফারুক আহম্মেদ চৌধুরীর স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিও প্রচার করা হয়েছে। এর সোমবার রাতে মুরাদের পদত্যাগের খবর বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার হলে তারাকান্দি শহীদ মিনার চত্বরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলামের কর্মী-সমর্থকরা আনন্দ মিছিল বের করেন। মিছিল পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে পথসভা ও মিষ্টি বিতরণ করেন। উপজেলার বিভিন্নস্থানে লোকজন পটকা ফুটিয়ে উল্লাস প্রকাশ করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও রীতিমতো নানা প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও আনন্দ প্রকাশ করছেন ফেসবুকে।

উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আল আমিন হোসাইন শিবলু তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, মুরাদ হাসান মন্ত্রণালয়ের দাপটে এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের নির্যাতন করেছে। তার নানা অপকর্মে আমরা লজ্জিত ছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে আনন্দ মিছিলের আয়োজন করেছি। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ ছানোয়ার হোসেন বাদশা বলেন, এই তথ্যপ্রযুক্তির যুগে একজন তথ্য প্রতিমন্ত্রী যেভাবে অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলে, তা দলের জন্য সত্যিই লজ্জাজনক। প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাকে আমরা স্বাগত জানাই। আনন্দ মিছিল মানুষের দীর্ঘদিনের অভিব্যক্তির বহিঃপ্রকাশ বলেও তিনি জানান।

মঙ্গলবার দুপুরে জামালপুর জেলা পরিষদ কার্যালয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী এক ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান ও একমত পোষণ করে বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা যেটা করেছেন দেশ ও জাতির স্বার্থেই করেছেন। এ জন্য কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে ডাক্তার মুরাদের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, তার এসব বক্তব্যে দেশবাসী আহত হয়েছে। এতে জামালপুরবাসী দেশবাসীর কাছে লজ্জিত ও ব্যথিত। তার এসব কর্মকাণ্ডের জন্য ধিক্কার জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে জামালপুরের সকল নেতাকর্মীকে দেশ ও দলের স্বার্থে সচেতন থাকার আহ্বান জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *