লন্ডন থেকে আগামী মাসেই দেশে ফিরছেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক
রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান। দলের চেয়ারপারসন ও শাশুড়ি বেগম খালেদা জিয়াকে সহযোগিতা করাই তার মূল লক্ষ্য।তবে কোনো মামলায় খালেদা জিয়া দণ্ডিত
কিংবা কারান্তরীণ হলে বিএনপির ঐক্য ধরে রাখতে তুরুপের তাস হিসেবে মেধাবী চিকিৎসক
জোবায়দার রাজনীতিতে দ্রুত অভিষেক ঘটবে।সে ধরনের প্রস্তুতিই নিতে বলা হয়েছে তাকে।দায়িত্বশীল সূত্রগুলো এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেছে,বিএনপিতে বিপর্যয়ের সৃষ্টি হলে হাল
ধরতেই দেশে ফিরছেন ডা. জোবায়দা। সিলেটের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে জোবায়দা রহমানের পিতৃকুলেরও আলাদা পরিচয় রয়েছে। সিলেটবাসীর কাছে সাবেক নৌবাহিনী প্রধান
মরহুম মাহবুব আলী খানের ছোট মেয়ে জোবায়দা ও তার পরিবারের রয়েছে বিশেষ গ্রহণযোগ্যতা।তা ছাড়া তারেক রহমান একের পর এক মামলায় জড়িয়ে পড়ায় তার আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি অনিশ্চিত।সে কারণে জোবায়দা রহমানকেই দলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হতে পারে।বেগম জিয়ার পুত্রবধূর এ আগমন দলের ভাবমূর্তিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদী সিনিয়র নেতারা।আগামী জাতীয় নির্বাচনে ডা. জোবায়দার প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টিও নিশ্চিত। সিলেট সদর অথবা ঢাকা-১৩ আসনে তিনি প্রার্থী হতে পারেন।বিএনপির একজন প্রভাবশালী ভাইস চেয়ারম্যান বলেন,’জোবায়দা রহমান রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য। একই সঙ্গে তার যোগ্যতাও আছে।তিনি রাজনীতিতে আসতেই পারেন। আর দেশে ফেরার ক্ষেত্রে তার তো কোনো বাধা নেই।তবে রাজনীতিতে আসবেন কি,
না আসবেন- সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার একান্তভাবে তার পরিবারেরই।’সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া সম্প্রতি এ নিয়ে জোবায়দা রহমান ও তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। এরপরই ডা. জোবায়দার রাজনীতিতে আসার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। দলের দুঃসময় ও রাজনৈতিক সংকটময় এ পরিস্থিতিতে অনেক চিন্তাভাবনা করে জোবায়দা রহমানের ক্লিন ইমেজকে কাজে লাগাতে চায় বিএনপি। ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের পর থেকেই মূলত এ নিয়ে আলোচনা চলে।বেগম জিয়া তখনই এ বিষয়ে ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। আর এখন আরও দৃঢ় অবস্থান তার। সে সময় জোবায়দা রহমান ও তারেক রহমান- দুজনের অনিচ্ছার কারণেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।সূত্রমতে, সক্রিয় রাজনীতিতে জোবায়দা রহমানের অংশগ্রহণের ব্যাপারে চেয়ারপারসন ছাড়াও আগ্রহী দলের অধিকাংশ সিনিয়র নেতা। তৃণমূল নেতা-কর্মীরাও যেন এক
পায়ে দাঁড়িয়ে। তারেক রহমানের অনুপস্থিতিতে দেশে ফিরে জোবায়দা রহমান দলের জন্য
ভূমিকা রাখবেন, তা-ই চান তারা। অত্যন্ত মেধাবী, ক্লিন ইমেজ ও স্বল্পভাষিণী এই চিকিৎসক
দ্রুত দেশের রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য স্থান করে নিতে পারবেন বলে মনে করছেন নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন মহল। তাদের মতে,জিয়া পরিবারের পাশাপাশি পিতৃকুলের পক্ষ থেকেও যথেষ্ট
সুপরিচিতি রয়েছে তার। যোগাযোগ ও কৃষি মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে সিলেট বিভাগে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য তার বাবা মরহুম মাহবুব আলী খানের রয়েছে আলাদা ইমেজ। ফলে সিলেটের মানুষের মধ্যে জোবায়দা রহমানের নেতৃত্বের জন্য আগ্রহ বেশি। ওয়ান-
ইলেভেনের প্রেক্ষাপটে তারেক রহমান,আরাফাত রহমান কোকো ও খালেদা জিয়া কারাগারে গেলে পরিবারের দেখভাল করতে গিয়ে তিনি আলোচনায় আসেন। চিকিৎসার জন্য তারেক রহমান যুক্তরাজ্যের লন্ডনে গেলে পরে জোবায়দা রহমানও সেখানে যান।বর্তমানে স্বামী-সন্তান নিয়ে লন্ডনেই অবস্থান করছেন। এর মধ্যে তিনি এফসিপিএসসহ
চিকিৎসা বিজ্ঞানে বেশ কয়েকটি উচ্চতর কোর্স সম্পন্ন
করেছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তারেক রহমানের দেশে ফেরা সম্ভব না হওয়ায় স্বামীর অবর্তমানে দলের হাল ধরতে দেশে আসছেন জোবায়দা রহমান। চলমান রাজনৈতিক সংকটে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াও বেশ নিঃসঙ্গতা অনুভব করছেন। এ অবস্থায় পরিবারের সদস্যদের জন্য
তিনি রীতিমতো ব্যাকুল। বিশেষ করে নাতনি জায়মা রহমানের খুবই অভাববোধ করছেন তিনি।’
জোবায়দা রহমান কবে নাগাদ ফিরবেন, দিন-তারিখ চূড়ান্ত না হলেও তার দেশে ফেরার খবরে দলের তরুণ নেতা- কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে।
তার দেশে ফেরার দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে দল ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে বিমানবন্দরে জনসমাগম করারও পরিকল্পনা রয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য
লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যা রটে, তা কিছু না কিছু ঘটেই। ডা. জোবায়দা রহমানের দেশে আসতে কিংবা রাজনীতি করতে তো কোনো বাধা নেই। তা ছাড়া দেশের গোটা রাজনীতিতেই এখন একটা ক্রান্তিকাল চলছে। আর বিএনপির সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। সেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যা যা করা দরকার, যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার, তার সবই চেয়ারপারসনকে নিতে হবে। কাজেই
জিয়া পরিবারের সদস্য ডা. জোবায়দা রাজনীতিতে পদার্পণ করবেন কি না, সে সিদ্ধান্তও চেয়ারপারসন ও তার পরিবারই নেবে।’
জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় সাবেক চিফ হুইপ, বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, ‘জোবায়দা রহমান একজন চিকিৎসক। তার জীবনের ব্রতই হচ্ছে মানুষের সেবা করা। তিনি একটি রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য। পরিবারের
সিদ্ধান্তে তিনি রাজনীতিতে আসতেই পারেন। তা ছাড়া তারেক রহমানকে মানুষ যেমন
শ্রদ্ধা করে, ভালোবাসে, ঠিক ততটুকুই জোবায়দা রহমানকেও মানুষ ভালোবাসে এবং শ্রদ্ধা করে।’ ফারুক আরও বলেন, ‘জিয়াউর রহমান বেঁচে থাকতে বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতিতে ছিলেন না। জিয়াউর রহমানের সঙ্গে সঙ্গেই থাকতেন। কিন্তু পরে তাকেও
রাজনীতিতে আসতে হয়েছে। জোবায়দা রহমানও একটি বিশেষ রাজনৈতিক পরিবারের
সদস্য। কাজেই পরিবেশ-পরিস্থিতিতে তার পরিবার যখন যে সিদ্ধান্ত নেবে, সে অনুযায়ীই তিনি কাজ করবেন। এতে অবাক হওয়ার তো কিছু নেই।’