এরশাদ সাহেব ভাবি সাহেবের যত্ন করতে কার্পণ্য করেন নাই, রহস্যটা কী?

Slider গ্রাম বাংলা জাতীয় টপ নিউজ ঢাকা রাজনীতি সারাদেশ

46300_PM_Press-Confe-2
গ্রাম বাংলা ডেস্ক:  আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জিয়া হত্যার এতকাল পর জিয়ার স্ত্রী অভিযোগ নিয়ে এসেছেন আমরা নাকি জিয়াকে হত্যা করেছি। আমরা কেন হত্যা করতে যাবো? এরশাদ একটা বাক্স নিয়ে আসলো আপনি(খালেদা জিয়া) আপনার ছেলে তো দেখতে চাইলেন না সে বাক্সে লাশ আছে কি-না। ক্যাবিনেটের সিদ্ধান্ত একটি বাড়ি নিয়ে নিলেন দুই বাড়ি। এরশাদ সাহেব ভাবি সাহেবের যতœ করতে একটু কার্পণ্য করেন নাই। রহস্যটা কী?
শেখ হাসিনা বলেন, আমি যদি খালেদা জিয়াকে প্রশ্ন করি, এরশাদ কিভাবে ক্ষমতা নেয়ার সুযোগ পায় আপনি যদি তাকে মদদ না দেন? খুন করা তাদেরই অভ্যাস, খুন করতে তারাই পারদর্শি। তার স্বামী খুনি, নিজে খুনি, তার ছেলে খুনি, পুরো পরিবারই খুনি।
যারা আবোল-তাবোল বকে যাচ্ছেন আমরা তাদের মনের ব্যথা বুঝি। রাজনীতিতে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্বাচনে আসেননি, এখন এই নির্বাচন হয়ে গেছে ঠেকাতে পারেন নাই। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য দেশের মানুষের সমর্থন না পেয়ে এখন বিদেশি প্রভুদের পা ধরে কান্নাকাটি করছেন। আওয়ামী লীগ কখনো বিদেশি প্রভুদের পা ধরে কাঁদে না, আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের শক্তিতে শক্তিমান হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমি বিএনপি নেত্রীকে বলবো মানুষ খুন করা আর অন্যের কাছে গিয়ে কাঁদাকাদি  করে নালিশ করা একটু বন্ধ করেন।

শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ৬৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে টানা তিনদিনের ঘোষিত কর্মসূচীর শেষদিনের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে শুরু করে ৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট গঠন, ৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন ৬০ গণঅভ্যূত্থান ও ৭১ সালের স্বাধীনতা আন্দোলনসহ এ পর্যন্ত প্রত্যেকটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে দলের ভূমিকা ও সফলতার কথা তুলে ধরেন। এছাড়া শিক্ষা ক্ষেত্রে, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে  তথ্যপ্রযুক্তির অভাবনীয় সাফল্যসহ তার সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বলতো, বাংলাদেশকে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড হিসেবে গড়ে তোলা হবে। সুইজারল্যান্ড হিসেবেই বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। আমাদের রিজার্ভ এখন ২১ বিলিয়ন ডলার। আমাদের এখন কারো কাছে হাত পাততে হবে না। ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে একটি মধ্যম আয়ের রূপান্তরিত করা হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বের মানচিত্রে একটি উন্নত জাতি গড়ে তুলবো।

বিকেল সাড়ে তিনটায় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাপনী অনুষ্ঠান শুরু হয়। দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪টা ২০ মিনিটে মঞ্চে এসে উপস্থিত হন। এরআগে থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন থানা-ওয়ার্ড থেকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষকলীগ, শ্রমিক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ দলটির অঙ্গ-সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতাকর্মীরা ব্যানার, ফেষ্টুন ও হাতে প্লাকার্ড নিয়ে অনুষ্ঠানে ভিড় জমান।
অুনষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। এসময় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, সাহারা খাতুন, সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ছাত্রলীগের সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ প্রমুখ।
আওয়ামী লীগকে হিরের সাথে তুলনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,  আওয়ামী লীগের ওপর বারবার আঘাত এসেছে। যতবারই আঘাত এসেছে, ধ্বংস করতে চেয়েছে ততবারই ব্যর্থ হয়েছে। আওয়ামী লীগ হচ্ছে হীরের টুকরোর মতো যত কাটবে ততই উজ্জ্বল হবে। সেই আলোয় উদ্ভাসিত হবে সারাদেশের জনগণ। আওয়ামী লীগ জনগণকে দেয়, জনগণ পায়। আওয়ামী লীগই পারে জনগণের সেবা করতে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সঙ্গে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত আর কেউ নয় আওয়ামী লীগের কুলাঙ্গার খন্দকার মোশতাক। এই মোশতাকের ষড়যন্ত্রের কারা মদদ দিয়েছেন। খন্দকার মোশতাক সংবিধান পরিবর্তন করে নিজে রাষ্ট্রপতি হন। আর সেনা প্রধান হিসেবে পছন্দ করেছিলেন জিয়াউর রহমানকে। উপ-সেনা প্রধান ছিলেন জিয়াউর রহমন। উপ-সেনা প্রধান নামে কোন পদ ছিলো না। সেই পদ তৈরী করে জিয়াউর রহমানকে দেয়া হয়েছিলো। জিয়াউর রহমান গাদ্দারি করেছিলো খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে। তিনি বলেন, বেঈমানী করে যারা ক্ষমতায় আসে তারা ক্ষমতায় থাকতে পারে না। মীর জাফরও ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। খন্দকার মোশতাকও পারেনি। মোশতাক বিবিসিতে সাক্ষাৎকারে বলেছিলো জিয়াউর রহমান তাদের সমর্থন দিয়েছিলো। জিয়া ক্ষমতা দখলের পর ১৯ টা ক্যু হয়েছিলো। শত শত অফিসারকে হত্যা করেছে এই জিয়াউর রহমান। এই দেশটা যেন স্বাধীনতার সুফল না পায়, স্বাধীনতার চেতনায় যেন দেশের মানুষ না চলতে পারে সেই ষড়যন্ত্রই করা হয়েছিলো। তিনি আরো বলেন, জিয়াউর রহমানের হাতে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে। অনেক সেক্টর কমান্ডারকে হত্যা করেছে, এতবড় গাদ্দারি সে (জিয়াউর রহমান) বাংলার মানুষের সঙ্গে করেছে। ১৯৭৫-৯৬ পর্যন্ত হত্যা-গুম আর ষড়যন্ত্র পেয়েছে বাংলার মানুষ। স্বাধীনতার চিহ্নগুলোকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে।

জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা গ্রহণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কথায় আছে যে নালে আগমন সে নালেই গমন। অথাৎ বন্দুকের নলের মুখে ক্ষমতায় এসেছিলো। সায়েম সাহেবকে গিয়ে বলেছিলো আপনি অসুস্থ দেশ চালাতে পারেন না। সায়েম সাহেব বলেছিলেন-আমি তো অসুস্থ না, জিয়ার হাতে অস্ত্র, সায়েম সাহেব পদত্যাগ করতে বাধ্য হলো। জিয়াউর রহমান রেডিওতে গিয়ে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করলো। অথ্যাৎ নির্বাচিত নয়, ঘোষিত রাষ্ট্রপতি। আর রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর নিজেদের ক্ষমতার মসনদ টিকিয়ে রাখার জন্য যত রকমের অপকর্ম করার প্রয়োজন করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়া হত্যার এতকাল পর জিয়ার স্ত্রী অভিযোগ নিয়ে এসেছেন আমরা নাকি জিয়াকে হত্যা করেছি। আমরা কেন হত্যা করতে যাবো? এরশাদ একটা বাক্স নিয়ে আসলো আপনি-আপনার ছেলে তো দেখতে চাইলেন না সে বাক্সে লাশ আছে কি-না। ক্যাবিনেটের সিদ্ধান্ত একটি বাড়ি নিয়ে নিলেন দুই বাড়ি। এরশাদ সাহেব ভাবি সাহেবের যতœ করতে একটু কার্পণ্য করেন নাই। রহস্যটা কী?
শেখ হাসিনা বলেন, আমি যদি খালেদা জিয়াকে প্রশ্ন করি, এরশাদ কিভাবে ক্ষমতা নেয়ার সুযোগ পায় আপনি যদি তাকে মদদ না দেন? খুন করা তাদেরই অভ্যাস, খুন করতে তারাই পারদর্শি। তার স্বামী খুনি, নিজে খুনি, তার ছেলে খুনি, পুরো পরিবারই খুনি। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে গাড়িতে আগুন দিয়েছে কার নির্দেশে? বিএনপির নেত্রীইতো এর হোতা। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে পারে নাই। আমি তো সংলাপের জন্য টেলিফোন করেছিলাম। টেলিফোন ধরতে না কী উনার রেডি হতে হবে। আমি তো উনার চেহারা দেখবো না। ফোন ধরতে মেকআপ নিতে হবে কেন? উনি ফোনে কথা বলার নামে ডায়লগতো না ঝগড়াই করে গেছেন। আমি তো এই বিষয়ে পারদর্শী না।
তিনি বলেন, আর্মি ব্যাকড কেয়ার টেকার, দুই বছর ইমার্জেন্সি দিয়ে দম বন্ধ করা পরিবেশের মধ্যে কাটাতে হয়েছিলো দেশের মানুষকে তার জন্য দায়ী এই বিএনপি নেত্রীর দুশাসন। একটার পর একটা ঘটনা ঘটিয়ে বাংলাদেশকে একটা ফেইল্ড রাষ্ট্র বানাতে চেয়েছিলো। উনার যে পেয়ারে পাকিস্তান তা তিনি ভুলতে পারেনি। পরাজিতদের দোসর হিসেবে এই দেশকে ব্যর্থতার দিকে ঠেলে দিতে চেয়েছিলো। বিএনপি নেত্রী তারই ছেলের পাচারকৃত অর্থ প্রথম বাংলাদেশের আনতে পেরেছে এই আওয়ামী লীগ সরকার। সুইচ ব্যাংকে কার কার টাকা আছে সে তালিকাও আনবো। টাকা ফেরত কিভাবে আনতে হবে সেটাও করবো। বেগম জিয়ার এক ছেলের পাচার করা টাকা ফেরত এনেছি। কার কোথায় টাকা আছে খুজে বের করলে উনিও (খালেদা) ধরা খাবেন।  তিনি বলেন, যার একখানা শাড়ির দাম দুই লাখ টাকা। কোথা থেকে আসে এত টাকা? চোরাই টাকা ছাড়া তো হতে পারে না। সেই ভাঙ্গা সুটক্যাস কই? ওইটা তো এখন যাদুর বাক্স হয়ে গেছে। ১৫-১৬ ইন্ড্রাস্টির মালিক হয়েছে, কোথা থেকে আসে? এগুলো জনগণের টাকা, জনগণকে শোষণ করার টাকা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে একজন মজুর যা আয় করে তা দিয়ে চলতে পারে। এটা খালেদা জিয়ার শাসনামলে ছিলো না, এরশাদের শাসনামলে ছিলো না, জিয়ার শাসনামলে ছিলো না। আওয়ামী লীগ আসে মানুষকে দিতে, কারণ আওয়ামী লীগ দেশ স্বাধীন করেছে আওয়ামী লীগের অনেক দায় আছে। মনে রাখতে হবে মানুষের আশা-আকাঙ্খা আওয়ামী লীগকে ঘিরে। বিএনপি হোক আর এরশাদের পার্টি হোক এরা তো আসে লুটপাট করতে। এদের কাছে জনগণ প্রত্যাশা করে না।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আওয়ামী লীগের সংগ্রাম-আন্দোলন সব কিছু হয়েছিলো বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতার জন্য। যে স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিলো আওয়ামী লীগই পেরেছিলো সেই স্বাধীনতা অর্জন করতে। বাঙালি জাতি আজ পর্যন্ত যা কিছু পেয়েছে তার সব কিছু দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগই পারে, আওয়ামী লীগই পারবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে।

আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক সামসুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীসহ সর্বোপরি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। এসময় তিনি বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে সব অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনকে আওয়ামী লীগের হাতকে শক্তিশালী করার আহবান জানান। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন,
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ চলছে। বিচারের রায় কার্যকর করা শুরু হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার করে যেমন জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছি তেমনিভাবে সকল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *