করোনার নতুন সংস্করণ ‘এওয়াই.৪.২’র সংক্রমন বাড়ছে

Slider সারাবিশ্ব

দেশের কোভিড-১৯ পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণেই আছে। তবে শীতপ্রধান অনেক দেশে, বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপ এবং মধ্য এশিয়ায় করোনা সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। এদিকে যুক্তরাজ্যে চিহ্নিত হয়েছে করোনা ভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের নতুন একটি সংস্করণ। প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ কয়েকটি দেশে ‘এওয়াই.৪.২’ নামের এই ধরন পাওয়া গেছে। এ নিয়ে বিশেষজ্ঞ মহলে বেশ উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাজ্যে কোভিড ১৯-এর সংক্রমণ আবার বাড়তে শুরু করেছে। সেখানে ‘এওয়াই.৪.২’ ভ্যারিয়েন্টকে এরই মধ্যে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ হিসেবে তলিকাভুক্ত করা হয়েছ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাজ্য থেকে যারা বাংলাদেশে আসছেন, তাদের কোভিড ১৯-এর ছাড়পত্র অবশ্যই যাচাই করতে হবে। প্রয়োজনে তাদের কোয়ারেন্টিনে রাখতে হবে।

শীতে করোনার সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘এখন দেখা যাচ্ছে করোনা নেই, সবার মধ্যে একটু আয়েশি ভাব এসে গেছে। এখন সময় এসেছে আবার সতর্কতা অবলম্বনের। আর সতর্কতা অবলম্বন করতে পারলে ইনশাল্লাহ এই প্রাদুর্ভাব আমাদের বাংলাদেশকে আক্রান্ত করতে পারবে না। সমগ্র বাংলাদেশের মানুষকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি, যেন আবার এই করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা না দেয়। সবাইকে সাবধানে থাকতে হবে।’

সবাইকে মাস্ক পরার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘টিকা যারা নিয়েছেন, যদি তাদের কারও করোনা হয়, তিনি কিন্তু করোনা ছড়াতে পারেন। নিজে হয়তো অত বুঝবে না, কিন্তু দেখা যাচ্ছে তিনি অন্যকে সংক্রমিত করছেন। এ বিষয়ে আমার মনে হয় দেশবাসীকে এখন থেকে আরও সতর্ক হওয়া উচিত। এ বিষয়ে আমাদের আরও প্রচার ও মানুষকে সতর্ক করা দরকার।’

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সকাল ৮টা থেকে পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় কোভিড ১৯-এ আক্রান্ত হয়ে দেশে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে কোভিড শনাক্ত হয়েছে ৩০৫ জনের; যা আগের দিন ছিল ২৯৪ জন। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ছিল ১ দশমিক ৭১ শতাংশ, যা গতকাল ছিল ১ দশমিক ৫০ শতাংশ।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ড. মোশতাক হোসেন বলেন, ‘অনেক দেশে আবার নতুন করে করোনার সংক্রমণ শুরু করেছে। রাশিয়ার পরিস্থিতি ভালো নয়। ইউক্রেন, তুরস্ক ও সিঙ্গাপুরের অবস্থাও একই। বিশেষ করে মধ্য এশিয়া ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোয় আবারও করোনার সংক্রমণ শুরু হয়েছে। এসব দেশের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্যিক ও পর্যটনসহ নানা ধরনের যোগাযোগ রয়েছে। অর্থাৎ এসব দেশ থেকে আসা যাত্রীদের মাধ্যমে দেশে আবার নতুন করে সংক্রমণ শুরু হতে পারে। সাবধানতা অবলম্বন না করা হলে পরিস্থিতি আবার ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়লে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।’

এ প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আহমেদ পারভেজ জাবীন আমাদের সময়কে বলেন, “আমাদের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ঢেউ কেটে গেছে। তবে এওয়াই.৪.২ নতুন করে সতর্কবার্তা দিচ্ছে। ইতোমধ্যে এটিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ হিসেবে তলিকাভুক্ত করেছে। তাই এখনি বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, যাতে দেশে এই ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়তে না পারে।”

গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ৭ জনসহ দেশে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মোট ২৭ হাজার ৮৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৬৯ হাজার ১৬২ জনে। করোনা থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় সেরে উঠেছেন ২৭১ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন ১৫ লাখ ৩২ হাজার ৯৬৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৭ হাজার ৮১১ জনের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *