‘গুডলাক বাংলাদেশ’

Slider জাতীয়

64232_s2
বাংলাদেশের হয়ে টানা তিনটি বিশ্বকাপ খেলেছে এমন ক্রিকেটারের সংখ্যা অনেক কম। এর মধ্যে অন্যতম জাতীয় দলের এক সময়ের সেরা স্পিনার মো. রফিক। দেশের হয়ে ১৯৯৯, ২০০৩ ও ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছেন এই স্পিনার। সেবার ভারতের বিপক্ষে ৩টি উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি। আর সেই জয়টির কারণে বাংলাদেশ দল সেবার বিশ্বকাপে দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে পেরেছিল। নিজের খেলা তিনটি বিশ্বকাপে মোট ১২টি উইকেট নিয়ে এখনও দেশের পক্ষে চতুর্থ সেরা উইকেট শিকারি এই স্পিনার। এবার পঞ্চম বারের মতো বিশ্বকাপ আসরে খেলতে যাচ্ছে দল। তবে ক্রিকেটের বাইরে থাকলেও মো. রফিক মনে প্রাণেই আছেন ক্রিকেটের মাঝে। দলের জন্য ছোট্ট বাক্যেই বলেছেন ‘গুডলাক বাংলাদেশ।’ মো. রফিক নিজেদের দেখা বিশ্বকাপ অভিজ্ঞতা ও বর্তমান দলের সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন মানবজমিনের স্পোর্টস রিপোর্টার ইশতিয়াক পারভেজের সঙ্গে। সেই কথোপকথনের মূল অংশ তুলে ধরা হলো-
প্রশ্ন: আপনার খেলা তিনটি বিশ্বকাপের সঙ্গে এবারেরটির পার্থক্য কি দেখছেন?
মো. রফিক: আসলে বিশ্বকাপের সব আসরই আলাদা ভাবে সেরা। আমি প্রথম বিশ্বকাপে খেলেছি। সেই বিশ্বকাপে না খেলতে পারলে তো আর আজ পঞ্চম বিশ্বকাপ খেলা হতো না। এরপর ২০০৩ সালের দলটি ছিল একরকম, ২০০৭ সালের দল ছিল আরেক রকম। আমি বলবো যখন বিশ্বকাপের জন্য নির্বাচকরা দল করেন তখন সেরা দলটিই পাঠানোর চেষ্টা করেন। আমি বলবো এবারও তাই হয়েছে। আর আগের বিশ্বকাপগুলোর সঙ্গে এই বিশ্বকাপের অন্যতম পার্থক্য হলো, আমাদের চাওয়াটা এখন অনেক বড়।
প্রশ্ন: এ বিশ্বকাপে বেশ কিছু ম্যাচ এরই মধ্যে মাঠে গড়িয়েছে। উইকেট দেখে কেমন মনে হয়েছে?
মো. রফিক: আমার মনে হয়, আমার দেখা বিশ্বকাপগুলোর মধ্যে এই বিশ্বকাপের উইকেট অনেক ভাল। এত ভাল উইকেট বিশ্বকাপে ছিল বলে আমার মনে পড়ে না। এবার আইসিসি উইকেটের দিকে মনে হয় অনেক বেশি  জোর দিয়েছে। এখানে ব্যাটসম্যানরা চাইলে ব্যাট করতে পারবেন আবার বোলাররা চাইলেও উইকেট তুলে নিতে পারবেন। তবে বোলারদের তুলনায় ব্যাটসম্যানরাই এ বিশ্বকাপে ভাল করবেন। কারণ এখানে প্রচুর রান হচ্ছে যা আমরা প্রথম পাঁচটি ম্যাচেই দেখেছি। প্রত্যেকটি দলের কেউ না কেউ সেঞ্চুরি করছেন যেটি আগে আমি দেখিনি। কিন্তু আজকের (গতকাল) নিউজিল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের ম্যাচটি দেখলে আবার কিছুটা হতাশ হবেন ব্যাটসম্যানরা। এটি সত্য যে, সব উইকেট একই রকম হবে না। তবে আমার মনে হয় অস্ট্রেলিয়ার বেশির ভাগ উইকেটই ব্যাটিং বান্ধব হবে। নিউজিল্যান্ডের গুলোতে হয়তো কিছুটা কম রান আসবে।
প্রশ্ন: এই উইকেটে পেসারদের তুলনায় স্পিনারদের সম্ভাবনা কতটুকু বলে মনে করেন?
মো. রফিক: এটি সত্য যে, অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে পেসাররা সুবিধা একটু বেশি পাবে। তবে যেমন উইকেট দেখছি, তাতে মনে হয় পেসার হোক আর স্পিনার সবারই বিপদ আছে। আমি বলবো এখানে উইকেট নেয়ার চিন্তা কম করে রান যত কম দেয়া যায় সে চিন্তাই করতে হবে বোলারদের। আর ডট বল বেশি করে দিতে হলে প্রতিটি বলে বোলারকে মনোযোগী হতে হবে। লাইন, লেন্থ সব ঠিক রেখে বল করতে হবে। তাহলে বোলারই সফল হবেন।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের  বোলিংয়ের সম্ভাবনা কেমন দেখছেন?
মো. রফিক: দেখেন, বাংলাদেশ দল স্পিন নির্ভর। আমাদের মূল শক্তি কিন্তু এই স্পিন বোলিং। এতদিন ধরে যে স্পিন শক্তি আমাদের জয় এনে দিয়েছে তাদের  উপর আমাদের আস্থাটা রাখতে হবে। পেসারদের উপর দায়িত্ব বেশি কিন্তু রাতারাতি পেসাররা খুব ভাল কিছু করে ফেলবে তা নয়। আমাদের বোলিংয়ে পেসারদের সঙ্গে স্পিনারদেরও সেরা বোলিংটা করতে হবে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ দলের সম্ভাবনা কতটা দেখছেন?
মো. রফিক: সম্ভাবনাতো অনেক। কিন্তু তা আদায় করে নেয়া কঠিন হবে। আমি বলবো নির্বাচকরা বেস্ট টিম পাঠিয়েছে। সেখানে টিম ম্যানেজম্যান্ট আছে তারা সব প্ল্যান করছেন কন্ডিশন অনুসারে। এখন ক্রিকেটারদের কাজটা হলো মাঠে খেলা। যদি ক্রিকেটাররা মাঠে খেলে দিতে পারে তাহলে আশা করি বেশ ভাল কিছুই হবে। তবে আমাদের জন্য এখন পরের ম্যাচগুলো নিয়ে ভাবার দরকার নেই। প্রথম ম্যাচটি আফগানিস্তানের বিপক্ষে। সেটিই আমাদের এখন একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত। কিভাবে আফগানদের বিপক্ষে জয় আসবে সেটি প্লান করতে হবে। কারণ, এই ম্যাচটি জিততে পারলে পরের ম্যাচগুলো ভাল হবে বলেই মনে হয়।
প্রশ্ন: প্রথম ম্যাচ জয় গুরুত্বপূর্ণ কেন?
মো. রফিক: আত্মবিশ্বাসের জন্য। কারণ, আমরা এরই মধ্যে চারটি প্রস্তুতি ম্যাচে হেরেছি। এখন আমাদের দরকার জয় নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া। তা না হলে পরের ম্যাচগুলো আরও কঠিন হবে।
প্রশ্ন: এ দলে আছেন তিনটি বিশ্বকাপ খেলা সাকিব, তামিম ও মুশফিক।  তাদের উপর অস্থা কতটা?
মো. রফিক: তারা দলের সিনিয়র তাদের উপরতো অস্থা রাখতে হবে। তবে আমি আলাদা করে কারও নাম বলতে চাই না। দলের নতুন-পুরানো সবার উপরই আস্থা রাখতে হবে।
প্রশ্ন: এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি সেঞ্চুরি হয়েছে। কিন্তু গত ৪ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল কোন সেঞ্চুরি পায়নি।
মো. রফিক: আমি আসলে কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী। কি হবে আর হতে পারে তা নিয়ে বলতে চাই না। আমি চাই কেউ একটি সেঞ্চুরি করুক। সেটি যে-ই করুক তার জন্য আমার শুভ কামনা রইলো।
প্রশ্ন: বিশ্বকাপে আপনার দেখা সেরা ইনিংস কোনটি?
মো. রফিক: ভারতের বিপক্ষে আমি তিনটি উইকেট নিয়েছিলাম ২০০৭ সালে। সেটি না হলে আমরা সেবার দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে পারতাম না।
প্রশ্ন: আমার কাছে বাংলাদেশ দলের সেরা বিশ্বকাপ কোনটাকে মনে হয়েছে?
মো. রফিক: ১৯৯৯ সাল ও ২০০৭ সালের বিশ্বকাপটি সেরা। ১৯৯৯ তে আমরা প্রথম খেলেই চমক দেখাতে পেরেছিলাম। আর ২০০৭ সালে আমরা বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলেছি। সেটি হয়তা এতো তাড়াতাড়ি অনেক দলের পক্ষেই সম্ভব হয়নি।
প্রশ্ন: দলের জন্য পরামর্শ কি থাকবে আপনার?
মো. রফিক: আমি কোন পরামর্শ দিতে চাই না। একটা কথাই বলবো ‘গুডলাক বাংলাদেশ’। ভাল খেল, শুধুই ভাল খেল তাহলেই ভাল কিছু করা যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *