রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরে আগুন দেয়ার ঘটনা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে এসব হামলা করা হয়েছে।
হিন্দু ধর্মাবলম্বী এক তরুণ ফেসবুকে একটি পোস্টে ‘ইসলাম বিদ্বেষী’ কমেন্ট করার অভিযোগে ১৮টির মতো ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। সেখানে পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কাছে যতগুলো তথ্য উদ্ধার করেছি, সবগুলোতে দেখেছি, এগুলোর পেছনে কয়েকজন ব্যক্তি এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করা, একটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, গভর্নমেন্টকে একটা বেকায়দায় ফেলার জন্য এই সমস্ত প্রচেষ্টা।’
রংপুরের স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় এর মধ্যেই সেখানে ৪৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরো কয়েকজনকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশ চেষ্টা করছে বলে খান জানিয়েছেন।
যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের বাড়িঘর নির্মাণে সবরকম সহযোগিতা দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
১৩ই অক্টোবর দুর্গাপূজার অষ্টমীর দিন কুমিল্লা শহরে একটি পূজা মণ্ডপে কোরআন পাওয়ার পর সেখানে পূজা মণ্ডপে হামলা হয়।
এরপর টানা তিনদিন নোয়াখালী, ঢাকা, কিশোরগঞ্জ, চাঁদপুর, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পূজামণ্ডপ ও মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটে। পীরগঞ্জের আগে সর্বশেষ শনিবার ফেনীতে সংঘর্ষ হয়েছে। তিনদিনে অন্তত ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছিলেন, বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজা মণ্ডপে এবং মন্দিরে হামলার ঘটনা উদ্দেশ্যমূলক এবং কারো ইন্ধনে হয়েছে বলে তারা সন্দেহ করছেন।
গতকাল সচিবালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন ‘অনেক কিছুই দেখেছি, অনেক কিছুই অনুমান করছি। এগুলি আমরা প্রমাণের অপেক্ষায় আছি। আমরা প্রমাণ পেলেই আপনাদের সম্মুখে তুলে ধরবো।’
হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দূর্গাপূজায় এবারে অষ্টমীর দিন কুমিল্লায় একটি পূজামণ্ডপে কোরআন পাওয়ার পর দেশের বিভিন্ন জেলায় মন্দিরে এবং পূজা মণ্ডপে হামলা হয়।
সেই হামলার তদন্তের অগ্রগতি প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খান বলেন, ‘কুমিল্লার ঘটনার বিষয়ে আমরা খুব শিগগিরই বিস্তারিত জানাবো, এটার (রহস্য উদ্ধারের) কাছাকাছি আছি। আমি এইটুকু বলতে পারি, এটা উদ্দেশ্যমূলকভাবে একটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্য, একটা অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করার জন্য, আমাদের সম্প্রীতির ভিতর ভাঙন সৃষ্টি করার জন্য কৌশল ছিল।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সেই কৌশলে অনেকে না বুঝেই অনেক কিছু করে ফেলেছেন। আপনারা দেখেছেন, আমাদের হাজীগঞ্জে পুলিশ বাধ্য হয়ে ফায়ার ওপেন করেছে। সেখানে চারজন নিরীহ প্রাণ তাদের জীবন বিসর্জন দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘নোয়াখালীতে যে জিনিসটা দেখেছি, জুম্মার নামাজ হয়ে গেছে, মুসল্লিরা চলে গেছেন। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী যখন খাওয়ার জন্য বসছিল, সেই সময় কয়েকটি জায়গা থেকে টিনএজারদের নিয়ে এসে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটানো হয়েছে।’
এর পরেও ফেনী, কিশোরগঞ্জে, চট্টগ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের স্থাপনায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার ঢাকায় পুলিশের সাথে বড় ধরনের সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে। এসব হামলায় অন্তত ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ।
বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তিনদিনে ৭০টি পূজামণ্ডপে হামলা-ভাঙচুর-লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলছেন, ‘কুমিল্লায় যেটা ঘটেছে, নোয়াখালীতে যা ঘটেছে, হাজীগঞ্জে ঘটেছে, আমরা সবগুলোকেই এক সূত্রেই গাঁথা আমরা ধরে নিচ্ছি। কতগুলো ভিডিও, টেলিফোনের বার্তা আমরা শুনছি। আমরা আরেকটু কনফার্ম হবো। আমরা একটু সময় চাচ্ছি, এর মধ্যেই আমরা এগুলো বের করবো। আমরা সুনিশ্চিত, কুমিল্লার ঘটনাটি একটি সাজানো ঘটনা।’
আসাদুজ্জামান খান বলেন, এটা একটা উদ্দেশ্যমূলকভাবে, সম্প্রীতি বিনষ্টের জন্য, আমাদের সরকারে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ফেলার জন্য এই ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে বলে আমরা অনুমান করছি।
এই ঘটনার সাথে দেশের বাইরের কোনো ইন্ধন আছে কিনা গতকাল সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে খান বলেন, ‘আমাদের দেশের লোকেরই তো অভাব নেই। তবে দেশের বাইরে কেউ কলকাঠি নাড়ছে কিনা সেগুলোও আমাদের তদন্তে বের হয়ে আসবে’।
সোমবার একটি প্রজ্ঞাপনে রংপুর, ফেনীর এসপিদের বদলি করা হয়। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এই বদলির সাথে এসব ঘটনার কোনো যোগসূত্র নেই। এটি একটি রুটিন ওয়ার্ক।
দেশের বিভিন্ন জেলায় হামলার ঘটনার জের ধরে এর মধ্যেই ১০টির বেশি মামলা হয়েছে। সেসব মামলায় কয়েক জনের নাম উল্লেখের পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা কয়েক হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
সূত্র : বিবিসি