জাতিগত নিপীড়নের শিকার হয়ে মিয়ানমার থেকে শরণার্থী হয়ে আশ্রয় নেয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের জন্য ‘বোঝা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল ইউরোপের দেশ নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত দেখা করতে গেলে তার সঙ্গে আলোচনায় এই মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোই যে এই সংকটের সমাধান, তা ডাচ্ রাষ্ট্রদূত স্বীকার করেন বলে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান। ঢাকায় নেদারল্যান্ডসের নতুন রাষ্ট্রদূত অ্যান জেরার্ড ফন ল্যুভেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে গণভবনে গিয়েছিলেন। বৈঠকে তাদের আলোচনার বিষয়বস্তু সাংবাদিকদের জানান ইহসানুল করিম। প্রেস সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তিন বছর হয়ে গেছে। এরা (রোহিঙ্গা) আমাদের জন্য বোঝা। তাদের জন্য আমাদের কক্সবাজারের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
আমাদের কিছু বনজ সম্পদও নষ্ট হয়েছে। ডাচ্ রাষ্ট্রদূতকে উদ্ধৃত করে প্রেস সচিব বলেন, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা, এনজিও কর্মকর্তা এবং আঞ্চলিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তার আলাপ হয়েছে এবং রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে
প্রত্যাবাসনই এই সংকটের একমাত্র সমাধান বলে সবাই মনে করেন। কয়েক দশক ধরে বিভিন্ন সময়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা চার লাখের মতো মুসলমান রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। ডাচ্ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনায় বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত ব-দ্বীপ রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ তার দেশের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারে বলে মন্তব্য করেন। বাংলাদেশের উন্নয়নে নেদারল্যান্ডসের অবদান এবং ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ প্রণয়নে দেশটির সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। নিজের নেদারল্যান্ডস সফরের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, নেদারল্যান্ডসে কৃষির সংরক্ষণে গ্রিন হাউজ প্রকল্প দেখে অভিভূত হয়েছি। বাংলাদেশও একটি কৃষিভিত্তিক দেশ এবং তার সরকার কৃষির উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেয়। বাংলাদেশে ডিজিটালাইজেশনের বিষয়টি তুলে ধরে তার আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে এর ‘স্থপতি’ হিসেবে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। ফন ল্যুভেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন বলে প্রেস সচিব জানান।
নেপালের রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ:
এদিকে ডাচ্ রাষ্ট্রদূতের পর গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশে নেপালের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত বংশীধর মিশ্রা। সাক্ষাৎকালে নেপালের রাষ্ট্রদূত বলেন, যখনই নেপালে কোনো সংকট হয়েছে, বাংলাদেশ সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে চিকিৎসা সামগ্রী প্রদানসহ বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ নেপালকে যেই সহায়তা দিয়েছে, তার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদও জানান রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, আমাদের কৃষিক্ষেত্রে আরও সহযোগিতা দরকার। কারণ আমরা বাংলাদেশ থেকে শিখতে চাই। বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের যে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প রয়েছে, সেটা এগিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান বংশীধর মিশ্রা। বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা করে রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের ইপিজেড, বঙ্গবন্ধু টানেল পরিদর্শনের কথাও প্রধানমন্ত্রীকে বলেন। নেপাল থেকে অনেক শিক্ষার্থী বাংলাদেশে এসে লেখাপড়া করছে জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের অনেকেই এখন নেপাল সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নেপাল এই বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারে। বাংলাদেশের হাঁড়িভাঙ্গা আম উপহার পেয়ে বংশীধর মিশ্রা তার দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেপাল যে সহযোগিতা ও সমর্থন দিয়েছিল, তার কথাও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। এই সময় অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ এম জিয়াউদ্দিন, মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস উপস্থিত ছিলেন।