পিয়াজ আসছে মিয়ানমার থেকেও তবু দাম বাড়তি

Slider ফুলজান বিবির বাংলা

বৈরী আবহাওয়ার অজুহাতে ভারতের পিয়াজ কম আসায় দেশে মূল্য বৃদ্ধির দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। একইসঙ্গে ভারতের বাজারে অস্থিরতার সুযোগে টেকনাফ বন্দর দিয়ে মিয়ানমার থেকেও পিয়াজ আনছেন তারা। ইতিমধ্যেই গত ১০ দিনে ২ হাজার ৮০০ টন পিয়াজ আমদানি করা হয়েছে মিয়ানমার থেকে। এরপরও দেশের বাজারে পণ্যটির দাম বাড়ছেই। ওদিকে রাজধানীতে গত ৮-১০ দিনের ব্যবধানে পিয়াজের দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি’র হিসেবেই গতকাল খুচরা বাজারে দেশি পিয়াজ ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা গত ৮-১০ দিন আগে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর আমদানি করা পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকায়। যা কয়েক দিন আগেই ৩৮ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

তবে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে কেজিতে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত দাম হাঁকতে দেখা গেছে ব্যবসায়ীদের। অর্থাৎ এই কয়েক দিনে পিয়াজের দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।

গতকাল কাওরান বাজারের পাইকারি আড়তে গিয়ে দেখা যায়, দেশি পিয়াজের মানভেদে বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬৫-৭০ টাকায় আর ভারত থেকে আসা পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়। তবে রাজধানীর আরেক পাইকারি বাজার শ্যামবাজারে প্রতি কেজি দেশি পিয়াজ ৬৪ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

টেকনাফ থেকে কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, গত ২০শে সেপ্টেম্বরের আগে টেকনাফ বন্দরে দু’-একদিন পর পর পিয়াজের নৌকা আসতো। তবে ভারত থেকে আমদানি কম হওয়াতে এখন প্রতিদিন দু’-তিনটি করে নৌকা আসছে পিয়াজ নিয়ে। তুলনামূলক দাম কম হওয়ায় ক্রেতারাও খুঁজছেন মিয়ানমারের পিয়াজ। ফলে চাহিদা বাড়ায় দামও বেড়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা জানান, টেকনাফ স্থলবন্দর পর্যন্ত ২০শে সেপ্টেম্বরের আগে পিয়াজের দাম ছিল কেজিতে ৩১ টাকা। গত বৃহস্পতিবার থেকে দাম নেয়া হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকা। অর্থাৎ কেজিতে অন্তত ১০-১৫ টাকা বেড়েছে।
টেকনাফ স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, ভারতে পিয়াজের দামে অস্থিরতা শুরুর পর থেকেই এই বন্দর দিয়ে মিয়ানমারের পিয়াজ আমদানি বাড়তে শুরু করে। মিয়ানমার থেকে এখন সরকারিভাবে পিয়াজ আমদানির সুযোগ নেই। এ অবস্থায় মিয়ানমারে লকডাউন থাকায় বিভিন্ন কোম্পানি, ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীর সঙ্গে চুক্তিতে পিয়াজ আমদানি করছেন দেশের ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্যমতে, মিয়ানমার থেকে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে গত ২০শে সেপ্টেম্বরের পর থেকে পিয়াজ আসতে শুরু করে। ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে অনেক ক্ষেত নষ্ট হওয়ায় সেদেশ থেকে পিয়াজ আমদানি অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। যার সুযোগ নিচ্ছে মিয়ানমার। দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় আমদানিকারকরাও মিয়ানমারের পিয়াজের দিকে ঝুঁকছেন। গত এক সপ্তাহেই ২৮০০ টন পিয়াজ আমদানি হয়েছে।

ওদিকে পিয়াজের আরেক পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতীয় কৃষক, ব্যবসায়ী ও মজুতদাররা সিন্ডিকেট করে পিয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে আমদানিকারকরা বলছেন, বৃষ্টি ও বন্যার কারণে ভারতে প্রচুর পিয়াজ নষ্ট হওয়ায় সেখানে বুকিং রেট বেড়ে গেছে। ফলে লোকসানের ভয়ে ব্যবসায়ীরা আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। তাই খাতুনগঞ্জে পিয়াজের দৈনিক সরবরাহ স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কমে গেছে। আগে দিনে ১ হাজার টন থেকে দেড় হাজার টন পিয়াজ বাজারে এলেও এখন আসছে ৬০০-৭০০ টন। ভারতীয় পিয়াজের দাম বৃদ্ধিতে চট্টগ্রামসহ আশপাশের জেলাগুলোতে মিয়ানমারের পিয়াজের চাহিদা বেড়েছে। ফলে মিয়ানমারের পিয়াজের দামও বাড়তি।
জানা গেছে, চট্টগ্রামে গত ৫ দিনের ব্যবধানে পিয়াজের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। সেখানে ভারতীয় ভালোমানের পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা থেকে ৭০ টাকা। অথচ ৪-৫ দিন আগে এই পিয়াজের দাম ছিল কেজিতে ৩৮ টাকা থেকে ৪০ টাকা। আর খুচরা বাজারে মিয়ানমারের পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকা। যা ৫ দিন আগে ছিল ৩৪ টাকা থেকে ৩৬ টাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *