গাজীপুর: শিল্প রাজধানীখ্যাত গাজীপুর। লক্ষ কোটি মানুষের বসবাস এই জেলায়। ৫টি উপজেলা, ১৩টি থানা, ৩টি পৌরসভা ও ৪৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত গাজীপুর জেলা। আয়তন ও লোক সংখ্যা বিবেচনায় ২০১২ সালে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন গঠিত হয়। প্রায় ৫ হাজার শিল্প প্রতিষ্ঠানের এই জেলায় কর্মের প্রয়োজনে বহিরাগত লোকের সংখ্যা বেশি। প্রায় প্রতিটি পেশায় তুলনামূলক ভাবে গাজীপুরের লোক কম। এই ধারাবাহিকতায় গাজীপুর জেলায় কর্মরত সাংবাদিকের সংখ্যার মধ্যে বহিরাগত লোকজনই সংঙ্গত কারণে বেশি। এখন পর্যন্ত সরকারি পরিসংখ্যান না থাকলেও ধারণা করা যায় গাজীপুর জেলায় সাংবাদিকের সংখ্যা ৫ শতাধিক। পেশাদার,অপেশাদার, রাজনৈতিক, বানিজ্যিক, কর্পোরেট ও আত্মরক্ষার হাতিয়ার হিসেবে সাংবাদিকতা ব্যবহৃত হচ্ছে।
গাজীপুরে অসংখ্য সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মামলা হামলা ও হয়রাণীর শিকার হচ্ছেন। কোন সংবাদের অনুসন্ধান কালে অপরাধিদের দ্বারা রক্তাক্ত জখম হলে দুই হাতে হাতে হাতকড়া পরে কারাগারে গেছেন বহু সাংবাদিক। কোন সংবাদ প্রকাশের পর সাংবাদিক এমনকি সম্পাদককেও ৫৪ বা ৩৪ ধারায় আটক করে মামলা রুজুর মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মিথ্যা মামলায় সাংবাদিক হয়রাণির সংখ্যাও কম নয়। বেশ কয়েকমাস ধরে গাজীপুর জেলায় সাংবাদিক শূণ্য কারাগার কম পাওয়া যাবে। অপরাধীদের আক্রমনে জুলুম নির্যাতন মামলা হামলা ছাড়াও সহকর্মীর মামলায় সহকর্মীর হাজত বাস অহরহ। ডিজিটাল বাংলাদেশে ডিজিটাল অপরাধের অভিযোগে সাংবাদিক নির্যাতন ও গ্রেফতার বেড়ে গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পান থেকে চুন খসলেই সাংবাদিক গ্রেফতার হয়। কিন্তু অন্য পেশার লোকজন গুরুতর ডিজিটাল অপরাধ করলেও গ্রেফতার তেমনভাবে হচ্ছে না। এই কারণেই সাংবাদিক সমাজের অভিযোগ, ডিজিটাল আইনে সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে মর্মে বাতিলের দাবি বর্তমান।
সাম্প্রতিক সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে পক্ষে বিপক্ষে মাঠ সরগরম । রাজপথ ও ফেইসবুক সমানতালে পক্ষে বিপক্ষে প্রতিবাদ চলছে যা অধিকাংশই ডিজিটাল আইন ভঙ্গের সামিল। কিন্তু পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরবতা পালন করছে। দুই পক্ষের পাল্টা পাল্টি ফেইসবুকিং ও রাজপথে জ্বলাও পোড়াও এর কারণে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলার প্রভাব ইতোমধ্যে গাজীপুর ছেড়ে রাজধানী ঢাকার রাজপথও ছুয়েছে। আজ একটি ফেইসবুক স্ট্যাটাস গাজীপুরের আন্দোলনকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে আহবান করল ।
গতকাল বুধবার গাজীপুুরে একটি সাংবাদিক সংগঠনের অফিসের সামনে ভিন্ন ইস্যুতে পাল্টাপাল্টি আন্দোলন করতে গিয়ে মারামারি হয়েছে। দুই পক্ষেই সাংবাদিকের চেয়ে বেশি রাজনৈতিক লোক ছিল। মানে হলো সাংবাদিকদের দুটি গ্রুপই রাজনীতি নির্ভর সাংবাদিকাতায় নিয়োজিত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভইরাল হওয়া ভিডিও ও বিভিন্ন ছবিতে মারামারির নগ্নদৃশ্য থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন লোককে কোন ছবি বা কোন ভিডিওতে দেখা যায়নি। যদিও একদিন আগে দুই পক্ষই একই সময় একই স্থানে ভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করে। তাহলে প্রশ্ন এসে যায় পুলিশ শান্তি শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার জন্য কেন কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
ভুক্তভোগীদের কেউ কেউ বলছেন, মারামারির ঘটনা খুন জখমের দিকে ধাবিত ছিল। ওই ঘটনায় একাধিক সাংবাদিকের সাথে একাধিক রাজনৈতিক নেতার ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতি হয় । কোন কোন ছবিতে রক্তঝরা পোষাক দেখা যায়। এই মারামারির ঘটনা প্রায় সকল গণমাধ্যমে পক্ষে বিপক্ষে সংবাদ প্রকাশ ও প্রচার হলেও পুলিশের কোন পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি।
এমতবস্থায় গাজীপুরে রাজনৈতিক সাংবাদিকতার চাপে পেশাদার সাংবাদিকতা দিনদিন বিলীন হয়ে যাচ্ছে। রাজনীতিতে কাঁচা টাকা ও রাতারাতি বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন গ্রাস করে ফেলছে পেশাদার সাংবাদিকতাকে । বড়লোক হওয়ার আকাঙ্খা এতই তীব্র হচ্ছে যে, কোন কোন সাংবাদিক বি এন পির সময় বি এন পি আওয়ামীলীগ এর সময় আওয়ামীলীগ করছেন, মানে সব সময় সরকারী দলের সাংবাদিকতা করতে বেশি আগ্রহী। এরসাথে যোগ হচ্ছে পেশাদার সাংবাদিকদের নিরাপত্তা কম আর রাজনৈতিক সাংবাদিকদের নিরাপত্তা সুরক্ষিত থাকা।
সাধারণ সাংবাদিকেরা বলছেন, গুরুতর অপরাধ করেও অনেক অনেক রাজনৈতিক সাংবাদিক নিরাপদ থাকছেন আবার পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক পেশাদার সাংবাদিক হামলা ও মিথ্যা মামলায় হয়রাণির শিকার হচ্ছেন। এই অবস্থা চলতে থাকলে আলো জ্বালিয়েও একজন পেশাদার সাংবাদিক খোঁজে পাওয়া কষ্টকর হবে সেই সময় হয়ত অতি নিকটে।