গাজীপুরে অডিও ক্যালেংকারীতে বঙ্গবন্ধুর সম্মান রক্ষায় পুলিশের ভূমিকা রহস্যজনক!

Slider টপ নিউজ


ইসমাইল হোসেন, গাজীপুর: মঙ্গলবার গাজীপুর সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের কন্ঠ নকল করে একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। অডিওতে মেয়রের নকল কন্ঠে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, এমপি, মন্ত্রী ও আওয়ামীলীগ নেতাদের সম্পর্কে গুরুতর আপত্তিজনক ও মানহানিকর তথ্য রয়েছে। গাজীপুর জেলার বাইরের এক বাসিন্দা (গাজীপুরে অবস্থানরত) নিজ আইডি থেকে উসকানিমূলক অডিওটি পোস্ট করেন। এতে ব্যাপক জনরোষ তৈরি হয়। মেয়র দেশের বাইরে থাকায় অতি সহজেই প্রতিবাদী আন্দোলন দানা বাধে। এই সূত্র ধরে বুধবার ও বৃহস্পতিবার গাজীপুর মহানগরের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। প্রতিবাদকারীরা গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগ এর সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের পদত্যাগ দাবি করেন। সংবাদ পেয়ে মেয়র বুধবার দেশে ফিরে আসেন। বর্তমানে মেয়রের পক্ষে বিপক্ষে আন্দোলন চলছে।

পর্যবেক্ষণে জানা যায়, অডিওটিতে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে মানহানিকর তথ্য থাকা সত্বেও স্থানীয় পুলিশ রহস্যজনক কারনে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছেনা। যদিও এই ধরণের গুরুতর অপরাধের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহণ করার কথা ছিল। এই ধরণের রাষ্ট্র ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী কৃত্তিম অডিও প্রচলিত আইনে জঘন্যতম অপরাধ।

আইনজীবীদের মতে, সরকারের ২০১৮ সালে করা ৪৬ নং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ষষ্ঠ অধ্যায়ের ২১ ধারায় বলা হয়েছে,

অপরাধ ও দণ্ড
—————

মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার প্রপাগান্ডা বা প্রচারণার দণ্ড
২১। (১) যদি কোনো ব্যক্তি ডিজিটাল মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার প্রপাগান্ডা ও প্রচারণা চালান বা উহাতে মদদ প্রদান করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।

(২) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ১০ (দশ) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ১(এক) কোটি টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

(৩) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয় বার বা পুনঃপুন সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে, বা ৩(তিন) কোটি টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

আইনজীবীরা বলছেন, এই মামলাটি তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ দায়ের করে আসামী গ্রেফতার করার সুনিদ্রিষ্ট বিধান রয়েছে। কিন্তু পুলিশ জরুরীভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় আইন শৃঙ্খলার মারাত্মক অবণতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

আইনজীবীদের তথ্যমতে, এ ধরণের রাষ্ট্র বিরোধী তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট হওয়ার সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট আইডির মালিককে গ্রেফতার ও আলামত হিসেবে ডিজিটাল ডিভাইস জব্দ করার কথা ছিল। কিন্তু পুলিশ রহস্যজনক কারনে ব্যবস্থা না নেওয়ায় গাজীপুরে সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি হুমকির মুখে পরে গেছে। জরুরী ভিত্তিতে আইনি ব্যবস্থা না নিলে সৃষ্ট গুজবে সাারাদেশে এর প্রভাব পরার আশঙ্কা বিদ্যমান।

একজন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তার মতে, এই ধরণের রাষ্ট্রদ্রোহমূলক অপরাধ দ্রুত দমনের জন্য আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ পুলিশের আইনী দায়িত্ব। এই ধরণের গুজবি আলামত তাৎক্ষণিকভাবে আইনের আওতায় এনে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন ছিল । আইনি মতে অডিওটি ল্যাবে পরীক্ষার পর সঠিক পাওয়া গেলে কন্ঠদাতাকে মামলার অন্তর্ভূক্ত করা যায়। কিন্তু পুলিশ সেই কাজটি না করায় সৃষ্ট শৃঙ্খলার অবনতি রাষ্ট্রের জন্য বিপদ সংকেত। প্রসংঙ্গত নালিসী অডিওর অভিযুক্ত কন্ঠদাতা মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ইতোমধ্যেই উল্লেখিত অডিওতে তার কন্ঠ নকল করা হয়েছে মর্মে আত্মপক্ষ সমর্থণ মূলক বক্তব্য প্রদান করেছেন। ফলে বিষয়টি তদন্তের আগে শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণ উদ্ভব করেছে।

নগরবাসীর দাবী, অবিলম্বে পোস্ট দাতা বা দাতাদের গ্রেফতা করে আইনের আওতায় এনে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা হউক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *