চট্রগ্রামে পরীর দীঘি নিয়ে জেলা প্রশাসন ও আইনজীবীরা মুখোমুখি!

Slider চট্টগ্রাম


চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানার ঐতিহাসিক পরীর দীঘি এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ নিয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আইনজীবী সমিতির বিরোধ তুঙ্গে উঠেছে। এ নিয়ে গতকাল সকালে সংবাদ সম্মেলন করে জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে বিষোদগারও করেন আইনজীবীরা। এ সময় তারা অভিযোগ করেন, জেলা প্রশাসন বরিশালের মতো চট্টগ্রামের শান্ত পরিবেশ নষ্ট করার অপতৎপরতা চালাচ্ছে। এ সময় তারা জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন। গতকাল সকালে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির অডিটোরিয়ামে আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট এনামুল হকের সভাপতিত্বে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এএইচএম জিয়াউদ্দিন।

লিখিত বক্তব্যে এডভোকেট এএইচএম জিয়াউদ্দিন বলেন, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি ১২৮ বৎসরের একটি পেশাজীবী সংগঠন। সমিতির ভবনসমূহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আইন মন্ত্রণালয়ের অনুদানে এবং সমিতির নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত। এছাড়া ভবনগুলো সিডিএ কর্তৃক অনুমোদিত। এসব ভবন নির্মাণের সময় কোনো পাহাড় বা টিলা কাটা হয়নি।
তিনি বলেন, আইনজীবী সমিতি নিয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বিভ্রান্তিকর ও মানহানিকর বক্তব্য দিচ্ছেন। এ ধরনের বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে আমরা তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। ডিসি বলেছেন আইনজীবী সমিতির নির্মিত ভবন অবৈধ। অথচ এসব ভবন নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী অনুদান দিয়েছেন এবং উদ্বোধন করেছেন। ভবন অবৈধ হলে তো ওনারা এসব করতেন না।

এডভোকেট জিয়াউদ্দিন বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে গোপন প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। এসব প্রতিবেদনে ৩৫৩টি অবৈধ স্থাপনার কথা বলা হয়েছে। অথচ এসব স্থাপনা জেলা প্রশাসন ভাড়া দিয়েছে। জেলা প্রশাসন প্রত্যেক স্থাপনা থেকে দৈনিক-মাসিক ভিত্তিতে ভাড়া উত্তোলন করে। জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার দুর্নীতি সর্বজনস্বীকৃত। কমিশন ছাড়া সেখানে কোনো বিল দেয়া হয় না।
সংবাদ সম্মেলনে আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী, শেখ ইফতেখার সাইমুম চৌধুরী, বদরুল আনোয়ারসহ সমিতির জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, গত ২রা সেপ্টেম্বর কয়েকটি গণমাধ্যমে একটি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। এতে চট্টগ্রাম আদালত ভবন এলাকার পরীর দীঘির আশপাশের ৩৫০টি স্থাপনাকে অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি এটিকে সম্পূর্ণ সরকারি খাস জায়গা দাবি করে সেখানে কোনো ধরনের স্থাপনা না গড়তে সতর্ক করা হয়। আর এই বিজ্ঞপ্তিকে কেন্দ্র করে এই আদালত পাড়ার আইনজীবীদের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের বিরোধ চরমে পৌঁছেছে। আইনজীবীরা বলছেন, তাদের নতুন দু’টি ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে জেলা প্রশাসন এমন বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। আর জেলা প্রশাসন বলছেন, তারা যথাযথ তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে জনস্বার্থে নিজেদের দায়িত্ব পালন করছেন। সর্বশেষ ১৩ই সেপ্টেম্বর পরীর পাহাড়ে থাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং ৭১টি আদালত ছাড়া চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির ৫টি ভবনসহ অননুমোদিত স্থাপনাগুলো উচ্ছেদের প্রস্তাবনায় প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন বলে জানানো হয়।

এদিকে, আইনজীবীদের অভিযোগের বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, ‘আমরা কারও সঙ্গে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কিছু করছি না। কোর্ট হিল এলাকার যে ৩৫০টি স্থাপনার তালিকা করেছি, তা সত্যিকারে ঝুঁকিপূর্ণ ও অবৈধ। তাই আমরা এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি মাত্র। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে পরীর পাহাড়ে অবৈধ স্থাপনা যাতে না হয় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে আইন ও বিচার বিভাগ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *