বনমালী তুমি পরজনমে হইয়ো রাধা

Slider টপ নিউজ


বনমালী তুমি, গানটি হল জয়তী চক্রবর্তীর গাওয়া। গানটির সুরকার ও কথাকার হলেন দিন শরৎ। আধুনিকায়নের এই যুগে এই ধরণের গান এনালগ হলেও কালজয়ী এই গানগুলোর সঙ্গে কোন গানের তুলনা হবে না কোন দিন। যে সব গান কোন দিন মরে না সেসব গানের মধ্যে এটি একটি অনতম গান। গানের কথাগুলো যেন বাস্তবতার সাথে আজীবন মিশে গিয়ে দিক নির্দেশনা দিয়ে যায়। হৃদয়ে স্পন্দন জাগানিয়া এই ধরণের গান মানুষের যে কোন ভাবধারায় মনকে গিলে ফেলে। নিঃসন্দেহে এই ধরণের গান আমাদের সঙ্গীত ভুবনের চিরঞ্জয়ী অধ্যায়। পৃথীবি যতদিন থাকবে এই গানগুলো ততদিন জীবিত থাকবে।

দেখি গানটি কি বলে–

তুমি আমারই মতো
জ্বলিও জ্বলিও
বিরহ কুসুম হার
গলেতে পরিও

তুমি যাইয়ো… যমুনার ঘাটে
নাহ মানি নন্দীরও বাধা

বনমালী তুমি পরজনমে হইয়ো রাধা
বনমালী তুমি পরজনমে হইয়ো রাধা

তুমি আমারই মতোন কাঁদিও কাঁদিও
কৃষ্ণ কৃষ্ণ নাম বদনে জপিও
তুমি আমারই মতোন কাঁদিও কাঁদিও
কৃষ্ণ কৃষ্ণ নাম বদনে জপিও

তুমি বুঝিবে তখন নারীরও বেদন
রাধারও প্রাণে কত ব্যথা
বনমালী তুমি পরজনমে হইয়ো রাধা
বনমালী তুমি পরজনমে হইয়ো রাধা

তুমি আমারই মতোন মরিও মরিও
শ্যাম কলঙ্কের হার গলেতে পরিও
তুমি পুড়িও তখন… আমারই মতোন
তুমি পুড়িও তখন… আমারই মতোন
বুকে লইয়া দুঃখেরও চিতা

ভাবিয়া শরদ কয় ওহে কৃষ্ণপদ
প্রেমেরও মায়াডোরে আমারে বাঁধিয়ো
আমি মরিয়া হইবো শ্রীনন্দের নন্দন…
আমি মরিয়া হইবো শ্রীনন্দের নন্দন…
তোমারে বানাব আধা
বনমালী তুমি পরজনমে হইয়ো রাধা
বনমালী তুমি পরজনমে হইয়ো রাধা

ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রা দুর্ভোগ কমাতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিকল্প হিসেবে চালু হয়েছিল একটি নতুন রাস্তা। এই সড়ক দিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী কলেজ গেট থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার যানজট এড়িয়ে খুব সহজেই গাজীপুর সদরে প্রবেশ করা যায়। ধীরগতিতে বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলমান থাকার কারণে মহাসড়কটিতে বর্তমানে যানবাহন চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন হচ্ছে। আগে ২০ মিনিটের পথ যেতে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা সময় লেগে লাগত।

টঙ্গীর বনমালা রেলগেট থেকে সুকন্দিরবাগ ব্রিজ পর্যন্ত বিকল্প সংযোগ সড়কটির কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে দিন-রাত চেষ্টা করেছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ। প্রায় প্রতিদিনই সরেজমিন গভীর রাত পর্যন্ত উপস্থিত থেকে প্রকল্পটির কাজ তদারকি করেছেন গাসিক মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দীর্ঘদিন ধরে চলমান বাস র্যাপিড ট্রানজিট-বিআরটি প্রকল্পের কারণে নগরবাসীর দুর্ভোগের অন্ত নেই। এই দুর্ভোগ থেকে নগরবাসীকে নিস্তার দিতেই টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত বিকল্প রাস্তা বের করার উদ্যোগ নেন গাসিক মেয়র।

পার্থীব জগতে প্রতিটি সেকেন্ড একটি ইতিহাস । গেলো সেকেন্ড, বর্তমান সেকেন্ডের ইতিহাস। আগামী সেকেন্ড, ইতিহাসের কল্পনার অংশ। মানুষ আসে, মানুষ যায়, ইতিহাস বেঁচে থাকে আজীবন। মানুষ বাঁচেনা, বেঁচে থাকে ইতিহাস। ইতিহাস কোন লেখকের কলমের জন্য অপেক্ষা করেনা। ইতিহাস ব্যক্তি স্বার্থচরিতার্থ করেনা। ইতিহাস ইতিহাসের স্বার্থ সংরক্ষণ করে। ইতিহাস নিজের কথা বলেনা। ইতিহাস, ইতিহাসকে ইতিহাস করে তোলে ।

ইতিহাস কখনো লিপিবদ্ধ হয়, কখনো হয় না। মনে মনে, আনমনে বা অবচেতন মনে ইতিহাস লিপিবদ্ধ হয়ে যায়। কখনো কাগুজে, কখনো পুস্তকের পাতায়, আবার কখনোবা কলমের ডগায় ইতিহাস লিপিবদ্ধ হয়। ইতিহাস ভালো মন্দের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। একজন মানুষ ভালো কাজ করলে মৃত্যুর পর জানাযায় বেশি মানুষ হয়। মন্দ কাজ করলে জানাযায় কম মানুষ হয় । আবার ভয়ংকর খারাপ কাজ করলে লাশ দেখার জন্য মানুষের উপস্থিতি বেডে যায়। তাই জীবদ্দশায় মানুষের অর্জন প্রথম প্রতিফলন ঘটায় জানাযায় বা স্মশানে । কবি বলেছেন, কৃত্তিমানের মৃত্যু নেই। কবি বলেননি এমন কথা হতে পারত, কুকৃত্তিমানেরও মৃত্যু নেই, তবে সেটা ঘৃণার । স্বাভাবিকভাবে ভালো কাজ ফল দেয় অনেকটা মৃত্যুর পর। বাংলাদেশের ইতিহাস বলে, মৃত্যুর পর যে সকল কৃত্তিমানের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ হয়. জীবদ্দশায় অনেকেই না খেয়ে থাকেন। অনেক ভালো মানুষও মৃত্যুর পর কাঙ্খিত কৃতজ্ঞতায় সিক্ত হয়না। সবই ভাগ্য। সাধারণের প্রত্যাশা ভালো মানুষ যেন বার বার আসে। ভালো মানুষের আগমন ও প্রস্থান যেন ফুলে ফুলে ভরে যায়। হিটলারদের মত প্রস্থানে যেন ন্যাক্কার জনক পরিণতি অবধারিত না হয়। মানুষ চায় ভালো কাজ, ভালো মানুষ। আর ভালো ইতিহাস।

বাংলাদেশ । লক্ষ লক্ষ প্রাণের ও ইজ্জতের বিনিময়ে সৃষ্ট একটি নিরাপদ ঠিকানা। বাংলাদেশ আমাদের মাতৃভূমি। আমরা গর্ববোধ করি আমাদের মাতৃভূমিকে নিয়ে। মহুকুমা থেকে জেলা হওয়া ঐতিহাসিক গাজীপুর। মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অন্যতম ও সমৃদ্ধ বীরের জেলা গাজীপুর। অসংখ্য সম্মানীত বীরের জন্ম গাজীপুরে। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে গাজীপুর জেলায় জন্ম নিয়েছেন অসংখ্য বীর পুরুষ ও নারী। পঞ্চাশ বছরের ইতিহাসে গাজীপুর জেলায় প্রধানমন্ত্রীর জন্ম হয়েছে। জন্ম হয়েছে জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পীকারের। জাতীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ছাড়াও অনেক বীর জনপ্রতিনিধিদের জন্ম হয়েছে এখানে।

২০১৩ সালে নবগঠিত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচন হয়। প্রথম মেয়র হন অধ্যাপক এম এ মান্নান। অধ্যাপক মান্নান এম পি ও প্রতিমন্ত্রীও ছিলেন। রাজনৈতিক টানাপোড়নে মেয়র মান্নান মেয়রের চেয়ারে থাকতে পেরেছেন খুব কম সময় । এর পর ভারপ্রাপ্ত মেয়রও চালিয়েছেন এই মহানগর। ২০১৮ সালের দ্বিতীয় নির্বাচনে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে মেয়র হন এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম। ২০১৩ সালে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে আনারস প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। প্রথম প্রচারণার দিন জাহাঙ্গীর আলমকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর অনেক নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমকে আওয়ামীলীগ দলীয় মেয়র প্রার্থীকে সমর্থন করতে বাধ্য করা হয়।

জাহাঙ্গীর আলমের চোখের জলে সিক্ত ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচন। এই নির্বাচনে বি এন পি মনোনীত অধ্যাপক এম এ মান্নান মেয়র নির্বাচিত হন। জাহাঙ্গীরের কারণে আওয়ামীলীগ প্রার্থী এ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খাঁন বিজয়ী হতে পারেননি বলে গুঞ্জন উঠে যায়। এই কারনে ২০১৩ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জাহাঙ্গীর আলমকে কোন দলীয় অনুষ্ঠানে অতিথি পর্যন্ত করেনি আওয়ামীলীগ। পরবর্তী সময় ২০১৫ সালে আওয়ামীলীগ প্রধান, জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগ এর সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করেন। এরপর থেকে জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর মহানগরে পাড়া মহল্লায় যাতায়াত শুরু করেন। মসজিদ মাদরাসা মন্দির শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সহযোগীতা করা শুরু করেন। ২০১৮ সালে সিটি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে লড়ে মেয়র হন তিনি। ইতিহাসের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাঁজ ভেঙ্গে মেয়র জাহাঙ্গীর আলম একই দলের প্রতিদন্ধী মেয়র প্রার্থী এ্যড. আজমত উল্লাহ খানকে সাথে নিতে সক্ষম হন। ফলে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে সার্বিক উন্নয়ন আওয়ামীলীগ নেতা মেয়র জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে শুরু হয়।

ইতোমধ্যে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে মাস্টার প্ল্যান করে উন্নয়ন কাজ চলছে। বিগত সকল সময় থেকে বেশি উন্নয়ন চলমান রয়েছে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে । মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ইতোমধ্যে বলেছেন, গাজীপুর মহানগরকে একটি নিরাপদ ও বাসযোগ্য নগরী বানাবেন। নগরীর চারিদিকে নদীর পাড়ে রাস্তা হবে। মানুষ অতি সহজে ও অল্প সময়ে মহনগরীর যে কোন জায়গায় যাতায়েত করতে পারবেন। দশটি খেলার মাঠ ও দশটি পার্ক তৈরি করবেন তিনি। খেলাধুলা ও বিনোদন প্রেমীরা যেন, মনে ব্যথা না পান সে কাজটি করবেন, বলেছেন তিনি। শোক দিবসের এক অনুষ্ঠানে মেয়র বলেছেন, গাজীপুর মহানগরে কর্মহীন কোন লোক থাকবে না। তিনি সবাইকে যোগ্যতা অনুসারে চাকুরী ও কাজ দেবেন। মেয়র জাহাঙ্গীর আলম তার স্বপ্নের গাজীপুর মহানগর গড়তে পারলে গাজীপুর মহানগর হবে একটি মডেল মহনগর, যা বাংলাদেশ ও বিশ্বে উন্নত রাষ্ট্রের মহানগর গুলোর সাথে প্রতিযোগীতা করবে।

সাম্প্রতিক সময়ে অসমর্থিত সূত্রের অভিযোগগুলো হলো,মেয়র রাস্তাঘাট নির্মাণের ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্থ নাগরিকদের চাহিদা পূরণ করতে পারেননি। আর মেয়র বলছেন, ক্ষতিগ্রস্থদের মতমতের ভিত্তিতেই তিনি উন্নয়ন করছেন। মেয়রের সুবিধভোগী সাংবাদিকরা মেয়রকে প্রশংসায় ভাসিয়ে দিচ্ছেন। আবার মেয়র বিরোধী সাংবাদিকেরা সমালোচনা ও নিন্দা করছেন। পক্ষে বিপক্ষে সাংবাদিকদের অবস্থানের কারণে প্র্রকৃত সত্য আড়ালও হতে চলছে এমন ধারণাও বর্তমান।

অনেকে বলছেন, আওয়ামীলীগ এর আভ্যন্তরীন দ্বন্দের কারনে মেয়রের বিরুদ্ধে অপপ্রচার হচ্ছে। শুনা যাচ্ছে, মেয়রের বিরুদ্ধে মামলা মোকদ্দমা ও সরকারের নিকট একাধিক অভিযোগ হয়েছে। এই অবস্থায় গাজীপুর মহানগরে মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে বিপক্ষে দুটি গ্রুপ সক্রিয়। এই অবস্থায় গত ঈদুল আযহার পূর্বে মেয়র জাহাঙ্গীর আলম তার উন্নয়নের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর অংশের বিকল্প সড়ক হিসেবে বনমালা সড়ক তৈরি করেছেন। তুলনামূলকভাবে অনেক অল্প সময়ে বনমালা সড়কটি তৈরি করতে গিয়ে মেয়র রাত দিন বনমালা সড়কেই অবস্থান করেছেন। এমনও দেখা যায়, গভীর রাতে বনমালা সড়কে অবস্থানরত মেয়র সিটি কর্পোরেশনের অফিসিয়াল কাজও সড়কে দাঁড়িয়ে করেছেন। সব মিলিয়ে বনমালা রোড মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মেয়াদকালে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে একটি ঐতিহাসিক অর্জন। এই অর্জনের ঘনত্ব এতবেশি ছিল যে, ভক্ত সমর্থকেরা এই সড়কের নাম মেয়র জাহাঙ্গীর আলম সড়ক করার জন্য জোড় দাবি জানিয়ে যাচ্ছেন।

পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপট বলছে, মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মেয়াদকালে সবচেয়ে দৃষ্টান্তমূলক উজ্জ্বল উন্নয়ন বনমালা রোড। জাহাঙ্গীর আলম যখন মেয়র থাকবেননা তখন এই বনমালা রোড থাকবে। ঠিক সেই সময় বনমালা রোড দিয়ে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম যাতায়েত করার সময় হয়ত কিছু সময় দাঁড়িয়ে স্মৃতি চারণ করবেন। মনে করবেন, বনমালা রোডের উৎসব মুখর কর্মযজ্ঞের সময়কালের নানা স্মৃদতি।

সাহিত্য সংস্কৃতি কৃষ্টি কালচার আর আমাদের লোকগাথা ইতিহাসের অংশে রচিত একটি গান বনমালা রোডের নামের সাথে মিলে গেছে। প্রকৃতিগতভাবে ঐতিহাসিক কালজয়ী এই গানের সাথে সড়কের নাম করণে একটি যথেষ্ট সামঞ্জস্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। লেখকের কল্পনা ক্যানভাসে বনমালা রোড ও বনমালির গান যোগলবন্ধী করলে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ, লেখকের গানের কলিতে ফুটে উঠতে পারে। লেখকের ক্যানভাসে আঁকা ইতিহাসের পংক্তি সমন্বয়ে বলা যায়,

তুমি আমারই মতো
জ্বলিও জ্বলিও
বিরহ কুসুম হার
গলেতে পরিও

তুমি যাইয়ো… যমুনার ঘাটে
নাহ মানি নন্দীরও বাধা

বনমালী তুমি পরজনমে হইয়ো রাধা
বনমালী তুমি পরজনমে হইয়ো রাধা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *