নিবন্ধন করে অপেক্ষায় প্রায় দুই কোটি মানুষ

Slider জাতীয়

করোনার টিকা পেতে মানুষের আগ্রহ বেড়েই চলেছে। প্রতিদিনই বাড়ছে টিকা পেতে নিবন্ধিতদের সংখ্যা। কিন্তু সেই তুলনায় টিকার মজুত না থাকায় টিকার এসএমএস পেতে মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হচ্ছে টিকাপ্রত্যাশীকে। অনলাইনে নিবন্ধনকারীদের প্রায় ২ কোটি লোক এখনো পর্যন্ত এক ডোজ ভ্যাকসিনও পাননি। টাকা দিলে আগে আগে এসএমএস পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়ার অভিযোগও রয়েছে অহরহ। সরবরাহের তুলনায় এ বিপুল সংখ্যক টিকাপ্রত্যাশীর তাই পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। কেউ কেউ বলছেন দালালদের দৌরাত্ম্যে ভেঙে পড়েছে টিকার এসএমএস ব্যবস্থা। এখনই কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে এ অবস্থা ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
এদিকে, এখন পর্যন্ত দেশে মোট জনসংখ্যার ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ মানুষ প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছেন।

আর দ্বিতীয় ডোজ টিকা গ্রহণকারীর সংখ্যা মাত্র ৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ (বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএস’র সর্বশেষ তথ্যমতে দেশে মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯১ লাখ ১০ হাজার)। বর্তমানে নিবন্ধনকারীদেরই সবমিলিয়ে টিকা প্রয়োজন প্রায় পৌনে ৪ কোটি ডোজ। টিকার জন্য অনেক মানুষ অনলাইনে নিবন্ধন করে স্বাভাবিকভাবে টিকা নিতে পারছে না। ফলে টিকার কর্মসূচিতে নানা অনিয়ম ভর করেছে। টিকা চুরি করে বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে বিক্রির অভিযোগে ক্লিনিকের মালিককে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ। টাকার বিনিময়ে টিকার ব্যবস্থা করে দেয়া হচ্ছে কিছু কেন্দ্র থেকে। এসব ঘটনা রোধে ইতিমধ্যে তৎপর হয়ে উঠেছে নানা গোয়েন্দা সংস্থা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ১লা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন ১ কোটি ৮৬ লাখ ৭৬ হাজার ৮৯২ জন। অন্যদিকে উল্লিখিত সময় পর্যন্ত মোট দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেছেন ৮২ লাখ ৮ হাজার ৩৭৯ জন। এখন পর্যন্ত দেশে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলে বিভিন্ন টিকা দেয়া হয়েছে ২ কোটি ৬৮ লাখ ৮৫ হাজার ২৭১ ডোজ। এই মুহূর্তে দ্বিতীয় ডোজ টিকার দরকার ১ কোটি ৪ লাখ ৬৮ হাজার ৫১৩ জনের। আর নিবন্ধনকারীদের মধ্যে এক ডোজও টিকা পাননি এমন সংখ্যা ১ কোটি ৯১ লাখ ৮৭ হাজার ১৫৭ জন। অর্থাৎ এদের প্রত্যেকের ২ ডোজ করে ৩ কোটি ৮৩ লাখ ৭৪ হাজার ৩১৪ ডোজ টিকা লাগবে। বর্তমানে নিবন্ধনকারীদেরই সবমিলিয়ে টিকা দরকার ৪ কোটি ৮৮ লাখ ৪২ হাজার ৮২৭ ডোজ। কিন্তু টিকা হাতে মজুত আছে ১ কোটি ২২ লাখ ২৯ হাজার ৩৯৯ ডোজ।

বিভিন্ন হিসাব করে দেখা যায়, ৩ কোটি ৬৬ লাখ ১৩ হাজার ৪২৮ ডোজ টিকার ঘাটতি রয়েছে বর্তমানে। ১লা সেপ্টেম্বর বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন ৩ কোটি ৭৮ লাখ ৬৪ হাজার ৪৯ জন।

অন্যদিকে দেশে এ পর্যন্ত কেনা, উপহার ও কোভ্যাক্স সুবিধায় সবমিলিয়ে ৩ কোটি ৯১ লাখ ১৪ হাজার ৬৭০ ডোজ টিকা এসেছে। এরমধ্যে উপহার হিসেবে পাওয়া গেছে ৫৪ লাখ ডোজ টিকা। যার মধ্যে ভারত থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৩৩ লাখ এবং চীন থেকে সিনোফার্মের ২১ লাখ টিকা উপহার দিয়েছে দেশগুলোর সরকার। ভারতের কাছ থেকে উপহার পাওয়া টিকার মধ্যে দেশটির সেনাপ্রধান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ১ লাখ টিকা উপহার দিয়েছেন। বাংলাদেশ সফরে এসে ভারতের সেনাপ্রধান তা বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের হাতে তুলে দেন। কেনা টিকা এসেছে ২ কোটি ৫ লাখ ৯৩ হাজার ৬৫০ ডোজ। এরমধ্যে চুক্তির মাধ্যমে কেনা টিকা ভারত থেকে এসেছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৭০ লাখ ডোজ এবং চীন থেকে সিনোফার্মের ১ কোটি ৩৫ লাখ ৯৩ হাজার ৬৫০ ডোজ টিকা।

অন্যদিকে কোভ্যাক্স সুবিধায় বিভিন্ন দেশের নানা টিকা পাওয়া গেছে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৩১ লাখ ২১ হাজার ২০ ডোজ। এরমধ্যে কোভ্যাক্সের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফাইজারের ১১ লাখ ৬২০ ডোজ টিকা, যুক্তরাষ্ট্র থেকে মডার্নার ৫৫ লাখ ডোজ, একই সুবিধায় জাপান থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৩০ লাখ ৫৯ হাজার ২০০ ডোজ, চীন থেকে সিনোফার্মের ৩৪ লাখ ৬১ লাখ ২০০ ডোজ টিকা বাংলাদেশ কোভ্যাক্স সুবিধায় পেয়েছে। এদিকে করোনার টিকার প্রতিদিনের বিতরণের হিসাব পাওয়া গেলেও কি পরিমাণ টিকা নষ্ট হয়েছে তার তথ্য পাওয়া যায়নি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে। নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচিতে এখন প্রতিদিন প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলে টিকা নিচ্ছেন আড়াই থেকে ৩ লাখের মতো।
প্রসঙ্গত, দেশে করোনার টিকাদান উদ্বোধন হয় চলতি বছরের ২৭শে জানুয়ারি আর গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হয় ৭ই ফেব্রুয়ারি থেকে। গ্রামের ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে টিকাদান ক্যাম্পেইন শুরু হয় ৭ই আগস্ট থেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *