এই সেই নৌকা

বাংলার মুখোমুখি


স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টার অভিযানে উদ্ধার হলো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার লইসকা বিলে ডুবে যাওয়া নৌকাটি। ফায়ার সার্ভিস এবং ডুবুরি দল গতকাল সকাল ৮টা থেকে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। যে বালুবাহী বিশাল বাল্কহেডের ধাক্কা খেয়ে নৌকাটি ডুবে গিয়েছিলো এর সহায়তায় শিকল দিয়ে টেনে নৌকাটি উদ্ধার করা হয়। নৌকা উদ্ধারে কাজ করে কিশোরগঞ্জ থেকে আসা ৫ সদস্যের ডুবুরি দল এবং ফায়ার সার্ভিসের ১৩-১৪ জন কর্মী। প্রায় ৪২ ঘণ্টা পর বেলা সাড়ে ১১টায় নৌকাটি ভেসে উঠার পর উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেন এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. রুহুল আমিন। এ সময় তিনি বলেন, অনেকের ধারণা ছিল নৌকার ভেতরে আরও লাশ থাকতে পারে। কিন্তু আমরা দেখলাম আর কোনো লাশ পাওয়া যায়নি। গত দু’দিন ধরে বারবার ডুবুরিরা সার্চ করে চশমা, চশমার কাভার, ছোট বাচ্চার মাথার ক্লিপ, পেয়ারা, জুতা, মোবাইল, মানিব্যাগ ইত্যাদি পেয়েছি।

গভীর বিশ্লেষণের পর গত শনিবারই আমরা নিশ্চিত হয়েছিলাম ভেতরে আর কোনো মরদেহ নেই। তদন্তের বিষয়ে তিনি বলেন, সকল মহলের সঙ্গেই আমরা কথা বলছি। কোনো একটি কারণকে এ দুর্ঘটনার জন্য একক দায়ী করা যাবে না। এখানে অনেক বিষয় আছে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার কথা জানান তিনি। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম জানান- ওভার লোডিংয়ের কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর সঙ্গে আছে নৌকা চালকদের অনভিজ্ঞতা। তিনি বলেন, প্রথমে একটি বালু বোঝাই বাল্কহেডের সঙ্গে যাত্রীবাহী এই নৌকাটি ধাক্কা খায়। এরপর নৌকার যাত্রীরা নৌকাচালককে খালের বাম দিকে অর্থাৎ রাস্তার পাশে সরে যেতে বলে। কিন্তু সে বাম দিকে সরে না গিয়ে অপর একটি বালু বোঝাই বাল্কহেডের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ডুবে যায়। নৌকাটিতে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ যাত্রী ছিল বলেও জানান তিনি।

গত শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বিজয়নগরের চম্পকনগর থেকে শহরের আনন্দবাজার ঘাটমুখী যাত্রী বোঝাই এ নৌকাটি ডুবে যায়। বিলের মধ্যদিয়ে নির্মিত সীমনা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়কের পাশ দিয়ে প্রবাহিত খালের একেবারে কিনারেই ডুবে যায় নৌকাটি। ওভারলোডেড নৌকাটি মুহূর্তে উল্টে যায়। এতে ভেতরের যাত্রী বিশেষ করে নারী-শিশুরা বেরিয়ে আসতে পারেনি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন জাহাজের পাতের তৈরি ছোট সাইজের এই নৌকাটিতে ২শ’র মতো যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছিল। শহরমুখী দিনের শেষ নৌকা হওয়ায় তাতে ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়। নৌকার দরজা-জানালা স্টিলের হওয়ায় ডুবে যাওয়ার পর সেগুলো ভেঙে বেরিয়ে আসতে পারেনি মানুষ। কাঠের দরজা-জানালা হলে জীবনহানি কম হতো বলেই স্থানীয়দের ধারণা। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আশপাশের গ্রামের লোকজন ছুটে এসে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। ওইদিন রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ২১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপর গত শনিবার সকালে নিখোঁজ এক শিশুর মরদেহ পাওয়া যায়। এরপর ডুবুরিরা নৌকার ভেতর তল্লাশি করে আর কোনো মরদেহ পায়নি। এরপর গতকাল সকাল থেকে নৌকাটি উদ্ধার অভিযান শুরু হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *