জিয়া কখনও অস্ত্র হাতে সামনাসামনি যুদ্ধ করেনি, তিন মাইল দূরে থাকতো—প্রধানমন্ত্রী

Slider বাংলার মুখোমুখি


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশ্য সফল হতে দেয়া হবে না। আমি শুধু এইটুকু চাই, যারা ষড়যন্ত্রকারী, চক্রান্তকারী, যে উদ্দেশ্য নিয়ে জাতির পিতাকে ১৫ই আগস্ট হত্যা করেছে, তাদের উদ্দেশ্য তো ছিল বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বানানো, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন ব্যর্থ হোক, স্বাধীনতার আদর্শ ধ্বংস হয়ে যাক- সেটাই করতে দেবো না। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর তারা ইতিহাস বিকৃত করেছিল। আমার দেখা নয়া চীন, কারাগারের রোজনামচা, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, ১৪ খণ্ডে এসবি’র গোয়েন্দা রিপোর্ট থেকেই সত্যিকারের রিপোর্ট বের হয়ে আসছে। গতকাল গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে ১৫ই আগস্ট জাতীয় শোকদিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহম্মেদ মান্নাফী, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নুরুল আমিন রুহুল, উত্তর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কাদের খান, দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কাজী মোর্শেদ কামাল ও উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. মতিউর রহমান মতি, দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আকতার হোসেন ও উত্তর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক রানা। সভা পরিচালনা করেন- ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, খোন্দকার মোশ্‌তাক দোসর হিসেবে পেয়েছিল জিয়াউর রহমানকে।

সেই ছিল তার শক্তি, মূল শক্তির উৎস। কারণ, ক্ষমতা দখল ও হত্যাকাণ্ড চালানোর জন্য সামরিক বাহিনীর সহযোগিতা তার দরকার। সেই মোশ্‌তাক ও জিয়া মিলেই কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যার এই চক্রান্তটা করেছিল। তিনি বলেন- ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ক্ষমতা দখলকারী খোন্দকার মোশ্‌তাক আহমেদ সেনাপ্রধান বানিয়েছিলেন বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে। কারণ, জিয়া ছিলেন মোশ্‌তাকের মূল শক্তি। শেখ হাসিনা বলেন, মোশ্‌তাক জিয়ার ওপর নির্ভর করে রাষ্ট্রপতি হয়েছিল। কিন্তু সে কতোদিন থাকতে পেরেছিল? থাকতে কিন্তু পারেনি। মীরজাফরও পারেনি। কারণ, বেঈমানদের ব্যবহার করে সবাই। তাদের বিশ্বাস করে না, রাখে না। জিয়াউর রহমান সেই কাজটাই করেছিল। ….মোশ্‌তাক কিন্তু তিন মাসও পূর্ণ করতে পারেনি। তাকে বিদায় নিতে হয়েছিল। জেলখানা হত্যাকাণ্ডও হয় জিয়াউর রহমানের নির্দেশে। সে-ই করেছে। কারণ, সে-ই সব ক্ষমতার অধিকারী ছিল তখন। বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ১৫ই আগস্ট যখন আমাদের বাসায় গুলি শুরু হয়, বঙ্গবন্ধু কিন্তু সবাইকে ফোন করেছিলেন। আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে কথা হয়। সেনাপ্রধান শফিউল্লাহ্‌র সঙ্গেও কথা হয়। সেনাবাহিনীরও যার যা ভূমিকা ছিল, তারা কিন্তু কাজ সঠিকভাবে করেনি। এর পেছনে রহস্যটা কী? সেটাই কথা। শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান যে কোথায় যুদ্ধ করেছেন এমন ইতিহাস কোনোদিন শোনা যায়নি। আমাদের অনেক মুক্তিযোদ্ধা আহত হয়েছেন। বিভিন্ন ফিল্ডে যুদ্ধ করেছেন। কিন্তু তার সেই ধরনের কোনো ইতিহাস নেই। আমাদের চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধারা… আমাদের এমপি মোশাররফ সাহেব আছেন। তিনি সরাসরি অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছিলেন। তারা কিন্তু তার নাম দিয়েছিল “মিস্টার রিট্টিট”। ওনাদের কাছে গল্প শুনেছি, যেখানেই যুদ্ধ লাগতো তার চেয়ে অন্তত তিন মাইল দূরে থাকতো জিয়াউর রহমান। সে কখনও অস্ত্র হাতে সামনাসামনি যুদ্ধ করেনি। তাকে নেতৃত্ব দেয়া হয়েছিল কিছুদিনের জন্য। শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান দেশের স্বাধীনতা ও অস্তিত্বে কখনও বিশ্বাস করতেন না। তাকে ধরে এনে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্র পাঠ করানো হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার পরও জিয়াউর রহমান পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে কোনও সরকারই দেশের উন্নয়ন করেনি বলে জানান- প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান কিছু প্রচার পেয়েছিল। সে নাকি গণতন্ত্র দিয়েছে। যে দেশে প্রতিরাতে কারফিউ থাকে, সেটা আবার গণতন্ত্র হয় কীভাবে? ভোট চুরি থেকে সবকিছুই এই জিয়াউর রহমান শুরু করে। এমনকি সংবিধান লঙ্ঘন করাও সে শুরু করে। আমাদের সৌভাগ্য যে, হাইকোর্টের একটি রায় সামরিক আইন দিয়ে ক্ষমতা দখলকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের কবরে মারামারি করলো বিএনপি। তারা জানে না সেখানে জিয়ার কবর নেই, তার লাশ নেই। তারা তো ভালোই জানে। তাহলে এত নাটক করে কেন? খালেদা জিয়াও ভালোভাবে জানে। খালেদা জিয়া বা তারেক জিয়া কি বলতে পারবে তারা জিয়ার লাশ দেখেছে? গুলি খাওয়া লাশ তো দেখাই যায়। বা কোনও একটি ছবি কেউ দেখেছে? দেখেনি। কারণ, ওখানে কোনও লাশ ছিল না। সেখানে একটা বাক্স আনা হয়েছিল। সেই বাক্সের ফাঁক দিয়ে যারা দেখেছে তারা জানে। সেই এরশাদের মুখ থেকেই শোনা, কমব্যাট ড্রেস পরা ছিল লাশ। জিয়াউর রহমান তো তখন প্রেসিডেন্ট। সে তো কমব্যাট ড্রেস পরে না। এটা কী বিএনপি’র লোকেরা জানে না। সেখানে গিয়ে তাদের মারামারি-ধস্তাধস্তির চরিত্র তো এখনও যায়নি। ১৯৮১ সালে নির্বাসিত জীবন শেষে দেশে ফিরে আসার ঘটনা বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ফিরে আসার পরে সেই চেনা মুখগুলো পাইনি। বনানীতে সারি সারি কবর পেলাম। তবে পেয়েছি লাখো মানুষ আর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। তাদের ভালোবাসা ও আস্থা-বিশ্বাস। তাই বলতে পারি, আওয়ামী লীগই আমার পরিবার। বাংলাদেশটাই আমার পরিবার। সেভাবে দেশটাকে দেখি। যতটুকু কাজ করতে পারবো, মনে হয় তাতে আমার আব্বা-আম্মার আত্মাটা শান্তি পায়। সেই চিন্তা করেই কাজ করি। তাই আমার কোনও মৃত্যুভয়, আকাঙ্ক্ষা, চাওয়া-পাওয়া নেই। আমি নিজের জন্য কিছু করতেও চাই না। বিগত ১২ বছরের সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। করোনা মহামারির এই সময়ে একমাত্র আওয়ামী লীগই মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল। তিনিই সীমিত সম্পদ দিয়ে সাড়ে তিন বছরের মধ্যে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠন করে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে এনেছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতা বিরোধীরা খাদ্য না থাকা, মুদ্রা জমা না থাকা ও রাষ্ট্রীয় কোষাগারে টাকা না থাকা দেশটিকে তারা ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চেয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা প্রমাণ করতে চেয়েছিল যে, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতা অর্জন করা ভুল ছিল এবং সেজন্যই দেশের স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরার পরপরই ষড়যন্ত্র শুরু করেছিল। তিনি বলেন, সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে প্রমাণ করতে তারা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের সময় দেশের উত্তরাঞ্চলে প্রতিবন্ধী নারী বাসন্তীকে মাছ ধরার জাল পরিয়ে বিশ্বব্যাপী তার সেই ছবি প্রচার করেছিল। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সেই সময় মাছ ধরার একটি জালের দাম ছিল ১৫০ টাকা, আর একটি শাড়ির দাম ছিল ৬ থেকে ৭ টাকা। তিনি বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানকে অস্ত্র সহায়তা দেয়ার জন্য যারা সপ্তম নৌবহর পাঠাতে চেয়েছিল তারাই ষড়যন্ত্রের পেছনে ছিল। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে ব্যর্থ প্রমাণ করতেই ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর দীর্ঘ ২১ বছর জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার সরকার দেশের ও দেশের মানুষের জন্য কিছুই করেনি। তিনি বলেন, তারা তিনজনই তার মধ্যে জিয়া অন্যতম যিনি দেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের সৃষ্টি করেছিলেন এবং দেশকে চিরতরে ধ্বংস করে দেয়ার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মেধাবীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *