মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি সংক্রমণ বাড়ার শঙ্কা

Slider জাতীয়


দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের হার কিছুটা নিম্নমুখী। তবে এখনো নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে আসেনি। এমন পরিস্থিতিতে সরকার দেশের সবকিছু স্বাভাবিক করে দিয়েছে। অফিস-আদালত, সব ধরনের কলকারখানা এমনকি গণপরিবহনও খুলে দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব প্রতিষ্ঠান ও গণপরিবহন চলাচলের নির্দেশনা থাকলেও কোথাও সেই নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। দেশের সব পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেওয়ায় সারাদেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ এসব স্থানে ভিড় করতে শুরু করেছেন। এসব পর্যটন কেন্দ্রেও কোনো স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। এমনকি সারাদেশের হাসপাতালে রোগীর সংখ্যাও অস¦াভাবিক কমে এসেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের করোনা সংক্রমণের হার এখনো ১৬ শতাংশের ওপরে। এই পরিস্থিতিতে যদি এভাবে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করা হয়, তা হলে যে কোনো সময় পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, গতকাল বুধবার পর্যন্ত দেশে মোট কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ লাখ ৭২৯৬৪ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৩ লাখ ৮১ হাজার ৭৬৩ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২৫ হাজার ৫১৩ জনের। এ পর্যন্ত কোভিড আক্রান্ত সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে ঢাকা শহরে ১৫০৬২৯ জন এবং সবচেয়ে কম শনাক্ত হয়েছে শেরপুরে ৫৪২ জন। এ পর্যন্ত মোট পরীক্ষা করা হয়েছে ৮৭ লাখ ২১ হাজার ১৪ জনের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশের ৮টি বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে ঢাকা বিভাগে ৬ লাখ ৫৮ হাজার ৩৩৬ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে ২ লাখ ২২ হাজার ৬০ জন; খুলনা বিভাগে ৯২ হাজার ৭৭৩ জন; রাজশাহী বিভাগে ৯১ হাজার ২৬১ জন; সিলেটে ৪৯ হাজার ১২৭ জন; রংপুরে ৪৭ হাজার ৭৯৯ জন; বরিশালে ৩৫ হাজার ৮৮১ জন এবং ময়মনসিংহে ৩০ হাজার ৮৮৩ জন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সংক্রমণের হার যদি ৫ শতাংশ বা তার নিচে না নামে তা হলে কোনো দেশের সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে বলা যাবে না। অর্থাৎ কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আমাদের সংক্রমণ পরিস্থিতি এখনো অনেকটাই পিছিয়ে।

রোগতত্ত্ব রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআর এর উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট রোগতত্ত্ববিদ ড. মোশতাক হোসেন বলেন, করোনা সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সব কিছু খুলে দেওয়া বিজ্ঞানসম্মত নয়। এতে নিম্নমুখী যে প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে, দ্রুতই তার পরিবর্তন ঘটতে পারে। এমনকি দ্রুততম সময়ে দেশের করোনা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটতে পারে। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। পাশাপাশি সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানান তিনি।

পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য বিভাগ ও জেলা শহরে বর্তমান ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ শয্যাই খালি পড়ে আছে। এছাড়া মৃত্যুর বেশিরভাগের কারণ হলো দেরিতে হাসপাতালে আসা। যখন তাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৭০ শতাংশের নিচে এবং লাং ইনফেকশন ৫০ শতাংশ বা তার ওপরে। এছাড়া প্রতিটি হাসপাতালে যাদের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে তাদের প্রায় শতভাগই টিকা নেননি এবং তাদের সবাই প্রায় গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে এসেছেন।

তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, দেশের করোনা পরিস্থিতি এখন উন্নতির দিকে। হাসপাতালগুলোতে শয্যা প্রায় ৭০ শতাংশ খালি পড়ে আছে। আমাদের দেশে পরবর্তী ঢেউ কবে আসবে সেটি নিশ্চিত করে বলা যাবে না। তবে এই সময়ে আমরা যেসব স্থানে ঘাটতি রয়েছে সেগুলো পূরণ করার চেষ্টা করছি। যদি ভারতের মতো পরবর্তী কোনো ঢেউ আসেও সেটি মোকাবিলায় যেন কোনো ঘটতি না থাকে।

রোগতত্ত্ব রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআর এর তথ্য দেখা যায়, দেশে শনাক্ত রোগীদের মধ্যে ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি ২৮ শতাংশ। ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের মধ্যে আক্রান্ত হার ২৭ শতাংশ। ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সীদের মধ্যে আক্রান্তের হার ১৭ শতাংশ। ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের মধ্যে আক্রান্তের হার ১১ শতাংশ। ১১ থেকে ২০ এবং ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে বয়সীদের আক্রান্তের হার ৭ শতাংশ করে। এছাড়া ১ থেকে ১০ বছর বয়সীদের মধ্যে আক্রান্তের হার ৩ শতাংশ।

অন্যদিকে ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি ৩৯ শতাংশ; ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের মধ্যে মৃত্যুর হার ২৯ দশমিক ৬২ শতাংশ; ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সীদের মধ্যে আক্রান্তের হার ১৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ; ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের মধ্যে আক্রান্তের হার ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ; ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে মৃত্যুর হার ৩ দশমিক ৪ শতাংশ; ১১ থেকে ২০ বছর বয়সীদের মধ্যে মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৯ শতাংশ এবং ১ থেকে ১০ বছর বয়সীদের মধ্যে মৃত্যুর হার শূন্য দশমিক ৮২ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত চট্টগ্রাম শনাক্ত হয়েছে ২৮১১২ জন, বগুড়ায় ৯২৪০ জন, সিলেটে ৮৮৩৭ জন, কুমিল্লায় ৮৮০৩ জন, নারায়ণগঞ্জে ৮৯০২ জন, ফরিদপুরে ৭৯৮১ জন, খুলনায় ৭০২৭ জন, গাজীপুরে ৬৬৯৪ জন, ঢাকা জেলায় ৬১৭৯ জন, কক্সবাজার ৫৬০৮ জন, নোয়াখালী ৫৪৫৫ জন, বরিশাল ৪৫৭১ জন, যশোর ৪৫৪২ জন, দিনাজপুরে ৪২৯৫ জন, ময়মনসিংহে ৪২৫১ জন, রংপুরে ৩৮০৩ জন, কুষ্টিয়া ৩৭০৭ জন, টাঙ্গাইলে ৩৬০১ জন, রাজবাড়ীতে ৩৩৫২ জন, কিশোরগঞ্জে ৩৩৪১ জন, গোপালগঞ্জে ২৯২৯ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২৭১৪ জন, নরসিংদী ২৭০১ জন, চাঁদপুরে ২৬০০ জন, সুনামগঞ্জে ২৪৯৫ জন, সিরাজগঞ্জে ২৪৮৯ জন, লক্ষ্মীপুরে ২২৮৩ জন, ঝিনাইদহে ২২৪৫ জন, ফেনীতে ২১৮০ জন, হবিগঞ্জে ১৯৩৪ জন, শরীয়তপুরে ১৮৫৪ জন, মৌলভীবাজারে ১৮৫৪ জন, জামালপুরে ১৭৫৩ জন, মানিকগঞ্জে ১৭১৩ জন, পটুয়াখালীতে ১৬৬০ জন, চুয়াডাঙ্গায় ১৬১৯ জন, মাদারীপুরে ১৫৯৯ জন, পাবনায় ১৫৪৪ জন, নড়াইলে ১৫১১ জন, নওগাঁয় ১৪৯৯ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে ১৪৪২ জন, গাইবান্ধায় ১৪০৩ জন, নীলফামারীতে ১২০৮ জন, জয়পুরহাটে ১২৫০ জন, নাটোরে ১১৬২ জন, সাতক্ষীরায় ১১৪৭ জন, পিরোজপুরে ১১৪৪ জন, রাঙ্গামাটিতে ১০৯৮ জন, মাগুরা ও বাগেরহাটে ১০৩২ জন, বরগুনায় ১০০৮ জন, কুড়িগ্রামে ৯৮৭ জন, লালমনিরহাটে ৯৪২ জন, ভোলায় ৯২৬ জন, বান্দরবানে ৮৭১ জন, নেত্রকোনায় ৮১৭ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৮১১ জন, ঝালকাঠিতে ৮০৪ জন, খাগড়াছড়িতে ৮৭৩ জন, পঞ্চগড়ে ৭৫৩ জন, মেহেরপুরে ৭৩৯ জন এবং শেরপুরে ৫৪২ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছেন চার হাজার ৯৬৬ জন। এদের নিয়ে দেশে করোনায় সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হলেন ১৪ লাখ ৭৭ হাজার ৯৩০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মারা গেছেন ১১৪ জন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মারা গেলেন ২৫ হাজার ৬২৭ জন। বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন সাত হাজার ৮০৮ জন। এদের নিয়ে মোট সুস্থ হলেন মোট ১৩ লাখ ৮৯ হাজার ৮৯ হাজার ৫৭১ জন। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগৃহীত হয়েছে ৩৩ হাজার ৩৪৪টি, আর পরীক্ষা করা হয়েছে ৩৩ হাজার ৬৪০টি। গত ২৪ ঘণ্টায় রোগী শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ, আর এখন পর্যন্ত ১৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৪ দশমিক শূন্য দুই শতাংশ এবং মৃত্যুর হার এক দশমিক ৭৩ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ১১৪ জনের মধ্যে পুরুষ ৬২ জন এবং নারী ৫২ জন। দেশে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে সরকারি হিসাবে মোট পুরুষ মারা গেলেন ১৬ হাজার ৭০৮ জন এবং নারী আট হাজার ৯১৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে ১১৪ জনের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন ৯২ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ১৫ জন এবং বাড়িতে সাত জন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *