বরখাস্ত ও গ্রেফতার হতে পারেন এডিসি সাকলায়েন!

Slider টপ নিউজ

</a

ঢাকাঃ বিতর্কিত চিত্রনায়িকা পরীমণিকে নিয়ে বাসায় সময় কাটানোর অভিযোগে ডিবি থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে এডিসি গোলাম মোহাম্মদ সাকলায়েন শিথিলকে। বর্তমানে তাকে মিরপুরের পুলিশ অর্ডার ম্যানেজমেন্ট (পিওএম) পশ্চিম বিভাগে পদায়িত করা হয়েছে। গতকাল শনিবার ডিবির সব কার্যক্রম থেকে সরিয়ে সাকলায়েনকে পিওএমে সংযুক্ত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এডিসি ইফতেখায়রুল ইসলাম। এ দিকে এডিসি সাকলায়েন দু-এক দিনের মধ্যে বরখাস্ত হতে পারেন, এমনকি এ অনৈতিক কর্মকাণ্ডের দায়ে গ্রেফতার হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। এ কর্মকর্তার অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে সিআইডি।

ডিএমপি কমিশনার মোহা: শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনায় সাকলায়েনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গত ১৩ জুন উত্তরা বোট ক্লাবে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদ ও তার সহযোগী অমির বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার মামলা করেন পরীমণি। পরদিন উত্তরা থেকে তাকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগ। তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে আরেকটি মামলা করে ডিবি।

৩০তম বিসিএসের কর্মকর্তা গোলাম সাকলায়েন গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগে কর্মরত। সেই সুবাদে মামলা তদন্তের তদারকি কর্মকর্তা ছিলেন সাকলায়েন। মামলার কারণে ওই সময় পরীমণিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয় গোয়েন্দা কার্যালয়ে। তখনই পরীর সাথে প্রথম পরিচয় সাকলায়েনের। এরপর সম্পর্কের গভীরতা।

গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র বলছে, ধীরে ধীরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে পুলিশ কর্মকর্তা ও পরীর। প্রায়ই রাতে গাড়ি নিয়ে ঘুরতে বের হতেন তারা। কখনো হাতিরঝিল। কখনো অন্য কোনো জায়গায়। মাঝে মধ্যে সাকলায়েন যেতেন পরীমণির বাসায়। সাকলায়েন নিজেকে অবিবাহিত দাবি করে পরীমণির সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। কিন্তু সাকলায়েন বিবাহিত, বিষয়টি জানার পর পরীমণি ও তার মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। পরে পরীমণির সহযোগী আশরাফুল ইসলাম দীপুর উদ্যোগে পরীমণির সাথে তার সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়। সম্প্রতি পরীমণির বাসায় তিন দিন ছিলেন সাকলায়েন। তখন বাসায় তারা ছাড়া আর কেউ ছিলেন না।

সম্প্রতি র্যাবের হাতে পরীমণি গ্রেফতার হলে বনানী থানায় করা মাদক মামলার তদন্তভার পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তখন পরীকে জিজ্ঞাসাবাদে বের হয়ে আসে সাকলায়েনকাণ্ড। পরীমণির দাবিতে সংগ্রহ করা হয় সাকলায়েনের সরকারি কোয়ার্টারের সিসিটিভি ফুটেজ। নিশ্চিত হওয়া যায় পরীমণির দাবির সত্যতা। এর পরই নড়েচড়ে বসে পুলিশ সদর দফতর। পুলিশ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। সিআইডির একজন বিশেষ পুলিশ সুপারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে পুরো বিষয় খুঁজে বের করার। জিজ্ঞাসাবাদে পরীমণি জানান, নিয়মিত কথা হতো সাকলায়েনের সাথে। তারা নিয়মিত গাড়ি নিয়ে ঘুরতে যেতেন। এমনকি সাকলায়েন তার বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করতেন।

জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, সর্বশেষ গত ১ আগস্ট তার সরকারি বাসভবন রাজারবাগের মধুমতির ফ্ল্যাটে যান পরীমণি। সেখানে প্রায় ১৮ ঘণ্টা অবস্থান করেন।

এ বিষয়ে পরীমণির গাড়িচালক নাজির হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, রাজারবাগ পুলিশ কোয়ার্টারে পরীমণিকে গত ১ আগস্ট সকালে তিনি গাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন। আবার রাতে পরীমণির ফোন পেয়ে তাকে আনতে যান। এ ছাড়াও তারা দু’জনই গাড়ি চালাতে পারেন। তারা মাঝে মধ্যেই আমাকে রেখে নিজেরা ড্রাইভ করে হাতিরঝিলে ঘুরতে যেতেন। গাড়ি চালানো অবস্থায় তারা কোনো কথা বলতেন না। তবে গাড়িতে মদ্যপান করতেন। আবার মাঝে মধ্যে তারা একা গাড়ি নিয়ে বের হতেন।

জানা গেছে, গোলাম মোহাম্মদ সাকলায়েন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের চৌকস কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। ৩০ বিসিএস ক্যাডারের এই কর্মকর্তা নিজ ব্যাচের প্রথম স্থান অধিকারী। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে তিনি কাউকে পাত্তা দিতেন না। এমনকি পুলিশের অনেক সিনিয়র কর্মকর্তাও তার কাছে নাজেহাল হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গণমাধ্যমকর্মীদের তার রুমে প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। এখন এ অবস্থায় এসে পরীমণি, পিয়াসা, মৌ, হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিষয়টি তলানিতে পড়ে গেছে, টক অব দ্যা টাউন হলো সাকলায়েন-পরীমণি কাণ্ড। এ রকম একজন দক্ষ ও মেধাবী কর্মকর্তার নৈতিক স্খলনের বিষয়টি অবাক করেছে দেশবাসী ও তার সহকর্মীদের। জানা গেছে, আজকালের মধ্যে বরখাস্ত হতে পারেন তিনি। এমনকি এ ঘটনায় গ্রেফতার হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার ব্যাচের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে পেশাজীবন সব জায়গাতেই তাকে অনুকরণীয় মনে করতাম আমরা। পেশাগত দক্ষতার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও সুনজরে দেখতেন তাকে। হয়তো এ সুযোগটাই নিয়েছেন সাকলায়েন।

এ ব্যাপারে সাবেক পুলিশপ্রধান এ কে এম শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, যেহেতু তদন্ত চলছে তাই বিস্তারিত মন্তব্য করা যাবে না। তবে একজন পুলিশ কর্মকর্তার এমন কাণ্ড পেশাদারিত্ব ও নৈতিকতা দুই দিক থেকেই গর্হিত।

সিসিটিভির ফুটেজে যা দেখা গেছে : ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ গুলশান বিভাগের এডিসি গোলাম সাকলায়েন শিথিল রাজারবাগ অফিসার্স কলোনির মধুমতি ভবনের ৯/সি সরকারি ফ্ল্যাটে থাকেন। সবশেষ গত ১ আগস্ট ওই ফ্ল্যাটেই গিয়েছিলেন পরীমণি। ১৮ ঘণ্টা ওই বাসায় অবস্থান করেছিলেন পরীমণি ও সাকলায়েন। সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গেছে, ১ আগস্ট সকাল ৮টা ১৫ মিনিট। পরীমণির সাদা রঙের হ্যারিয়ার গাড়িটি থামে মধুমতি ভবনের সামনে। এরপর সাদা রঙের স্লিপিং গাউন পরে নামেন পরীমণি। তার কোলে ছিল তার পোষা কুকুরটি। বাসভবনের নিচে নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে বাসার চাবি নেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। এরপর দু’জন লিফটে করে বাসায় যান। এরপর পরীর গাড়ি থেকে একটি ট্রলি ব্যাগও ওই বাসায় নেয়া হয়। রাত দেড়টার দিকে আবারো ওই বাসার সামনে আসে পরীর গাড়ি। রাত সোয়া ২টার দিকে পুলিশ কর্মকর্তাকে নিয়ে নিচে নেমে আসেন পরীমণি। সাথে ছিল পোষা কুকুর আর ট্রলি ব্যাগ। পরীমণির পরনে ছিল কালো রঙের পোশাক আর সাকলায়েনের পরনে ছিল সাদা টিশার্ট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *