১৩০ কিমি এক্সপ্রেসওয়েতে নেই চেকপোস্ট

Slider জাতীয়

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়া মোড় থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা মোড় পর্যন্ত মহাসড়কে দেখা মেলেনি কোনো চেকপোস্ট। ভাঙ্গা মোড় থেকে ঢাকার যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত চার লেনের এক্সপ্রেসওয়েতেও ছিল না কোনো চেকপোস্ট। শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটের দুই ঘাটে পুলিশ সদস্যরা থাকলেও তাদের তেমন কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। কঠোর লকডাউন শুরুর প্রথম দিন গত শুক্রবার দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানীতে প্রবেশের অন্যতম প্রবেশপথ হিসেবে পরিচিত হাইওয়ে-এক্সপ্রেসওয়ের চিত্র ছিল এমনটাই।

এক্সপ্রেসওয়ে-মহাসড়কের পাশের ছোট বাজার এবং সড়কের পাশের কিছু কিছু দোকানপাটও খোলা দেখে গেছে। তবে ঢাকায় ঢুকেই অন্য এক দৃশ্যপট চোখে পড়ে। রাজধানীতে বিধিনিষেধ মানাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। এতে মূলত ঢাকার মতো বড় শহরগুলোতে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নের চিত্র ফুটে ওঠে। তবে এবার করোনা ভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণের মূল কেন্দ্র গ্রাম ও মফস্বল; সেখানেই কঠোর লকডাউনের প্রথম দিনে ঢিলেঢালা চিত্র লক্ষ্য করা গেছে।

কঠোর লকডাউনের প্রথম দিনের চিত্র পর্যবেক্ষণের জন্য গোপালগঞ্জের ভাটিয়াপাড়া মোড় থেকে ঢাকা পর্যন্ত এক্সেপ্রেসওয়ে ঘুরে দেখেছেন এই প্রতিবেদক। এতেই এসব চিত্র উঠে আসে। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টা। ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা সদর। চার রাস্তার মোড়ে একজন এসআই কয়েকজন কনস্টেবল নিয়ে দাঁড়ানো। তাদের সামনে দিয়ে অনেকেই যাওয়া-আসা করছেন। ভ্যান-মোটরসাইকেল চলছে। দুই-একটি ব্যাটারিচালিত ভ্যান আটকাতে দেখা যায় পুলিশ সদস্যদের। উপজেলা সদরের এই প্রাণকেন্দ্র ছাড়া অন্য জায়গাগুলোতে পুলিশের উপস্থিতি চোখে পড়েনি। ঢাকা-খুলনা হাইওয়ের অন্যতম সংযোগ গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ভাটিয়াপাড়া মোড়েও পুলিশের উপস্থিতি চোখে পড়েনি। ভাটিয়াপাড়া মোড় থেকে ঢাকা-খুলনা হাইওয়ে ধরে ভাঙ্গা মোড়ে যেতে যেতে দেখা যায় মহাসড়কটির পাশের বিভিন্ন স্থানে দোকানপাট খোলা রয়েছে। কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও স্থানীয়দের অবাধ চলাচল ছিল চোখে পড়ার মতো। বরিশাল, ফরিদপুর, খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার যানবাহন ঢাকার পথ ধরে এই ভাঙ্গা মোড় থেকে। ভাঙ্গা থেকে ঢাকা পর্যন্ত চার লেনের চোখ ধাঁধানো এক্সপ্রেসওয়ের শুরু এই মোড়ে।

ভাঙ্গা মোড় থেকে মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাট পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়েতে চোখে পড়েনি কোনো চেকপোস্ট। পাশের সার্ভিস রোড ছেড়ে মূল এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে পড়তে দেখা যায় থ্রি হুইলারসহ বিভিন্ন ধরনের যান্ত্রিক বাহনকে। অথচ মূল সড়কে থ্রি হুইলার নিষিদ্ধ। জরুরি কাজে নিয়োজিত যানবাহন ছাড়া কিছু সাধারণ যানও চোখে পড়ে। এক প্রকার বিনা বাধায় সব যানবাহন পৌঁছে যায় বাংলাবাজার ফেরিঘাটে। সেখানে দুটি স্পটে পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। তবে কোনো যানবাহন থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেননি তারা। ফেরিতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সাধারণ যাত্রী ও যানবাহনও উঠে পড়ে। এমনই দুই তরুণের সঙ্গে কথা হয়।

মোটরসাইকেল নিয়ে গোপালগঞ্জ থেকে এক্সপ্রেসওয়ে ধরে ঘাটে এসেছেন তারা। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এই দুই তরুণ জানালেন তাদের কোনো তল্লাশি চৌকির মুখোমুখি হতে হয়নি।

এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশের মাদারীপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার হামিদুল আলম আমাদের সময়কে বলেন, এক্সপ্রেসওয়েতে হাইওয়ে পুলিশ তল্লাশি করছে। এ ছাড়া থ্রি হুইলার চলাচল নিয়ন্ত্রণেও কাজ করছে পুলিশ।

মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে ফেরি থেকে নেমেই কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে দেখা যায়। তবে তাদের কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। ঘাট পেরিয়ে মাওয়া বাজার থেকে এক্সপ্রেসওয়ে ধরে যাত্রাবাড়ীতে ঢাকার প্রবেশমুখ পর্যন্ত র‌্যাব-পুলিশসহ নিরাপত্তা বাহিনীর কোনো চেকপোস্ট চোখে পড়েনি। তবে যাত্রাবাড়ীতে পৌঁছাতেই দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। পুলিশের চেকপোস্টে সব যানবাহন থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা যায়। দীর্ঘ হাইওয়ে-এক্সপ্রেসওয়ে, ফেরিঘাট পার হয়ে আসা যানবাহন ধরা পড়ছে ঢাকার প্রবেশমুখের এই চেকপোস্টে।

মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার পার হয়ে গোলাপবাগ মোড়ে নেমে কিছুদূর এগোলেই দেখা মেলে পুলিশের আরেকটি চেকপোস্ট। সেখানে প্রতিটি যানবাহনের চালক এবং যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদের পুরো সময় ভিডিওচিত্র ধারণ করতে দেখা যায় দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তাদের। এরপর মালিবাগ রেলগেট মোড়ে সেনাবাহিনীর চেকপোস্টে তল্লাশি কার্যক্রম চোখে পড়ে। একইভাবে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ, র‌্যাব ও সেনাবাহিনীর চেকপোস্টে তল্লাশি কার্যক্রম দেখা যায়। সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়া অনেককেই আটক ও জরিমানা করা হয় পুলিশ-র‌্যাবের চেকপোস্টগুলোতে।

জানতে চাইলে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, কঠোর বিধিনিষেধ শুরুর পর বাংলাবাজার ঘাটমুখে তেমন কোনো ভিড় নেই। তারপরও সেখানে আমাদের পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *