নির্ঘুম রাত কাটাছে তাদের

Slider জাতীয়


চলছে আষাঢ় মাস। আষাঢ় মাসের বৃষ্টিতে পদ্মাতে বৃদ্ধি পাচ্ছে পানি। সেই পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ঝুঁকিতে রয়েছেন রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার পদ্মা পাড়ের প্রায় হাজারো পরিবার।

একদিকে বাড়ছে পদ্মার পানি, অপরদিকে বাড়ছে নদীর পাড়ের বসাসরত মানুষের আতঙ্ক। প্রতিদিনই কয়েক সেন্টিমিটার করে বাড়ছে পানি। নদী ভাঙনের আশঙ্কায় পদ্মা পাড়ের মানুষগুলোর কাটছে নির্ঘুম রাত। গত এক দশক ধরে নদী ভাঙনের শিকার এসব মানুষ ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড স্থায়ী পদক্ষেপ না নেয়ায় ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

নদী ভাঙনের শিকার হয়ে গত কয়েক বছরে কয়েক হাজার পরিবার অন্যত্রে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। অনেকে আবার জায়গা-জমি সব হারিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। আবার ভাঙনের কবলে পড়ে ভূমিহীন হয়েছেন অনেক পরিবার।

জানা গেছে, চারঘাট সীমানায় পদ্মার প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ তীরবর্তী এলাকা রয়েছে।

যার অধিকাংশ তীরবর্তী জায়গায় মানুষ বসবাস করে। এই তীরবর্তী এলাকার প্রায় ৮ কিলোমিটার নদী তীরবর্তী এলাকা ব্লক দিয়ে পাঁকা বাঁধ দেয়া আছে। বাকি তীরবর্তী এলাকা অরক্ষিত বা কাঁচা বাঁধ। আর তাই এবারও চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই পদ্মার পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই দুটি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম রয়েছে ভাঙনের চরম ঝুঁকিতে। ভাঙনের মুখে রয়েছে তিনটি বিদ্যালয়, ৪০ বছরের পুরনো মসজিদ ও একটি বিজিবি ক্যাম্পসহ নানা স্থাপনা।

রাওথা নদী ভাঙন এলাকার বাসিন্দা মোস্তফা আলী জানান, ১৯৮৮ সাল থেকে একের পর এক বাড়ি-ঘর, ফসলি জমি নদী গর্ভে হারিয়ে যাওয়ায় এ এলাকার মানুষ আজ নিঃস্ব। সবকিছু হারিয়ে তারা এখন পথের ভিখেরি।

আরেক বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম জানান, ১৯৮৮ সালের বন্যায় শুরু হওয়া ভাঙন এখন এলাকাবাসীর নিত্য সমস্যা। বাড়ি-ঘর, ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব সবাই।

আক্ষেপ করে তিনি বলেন, বন্যার সময় হলেই এলাকায় দেখা মেলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজনদের। এর আগে তারা কোনো দিনই আসেন না ভাঙন এলাকা পরিদর্শনে। বছরের পর বছর ধরে ভাঙন অব্যাহত থাকলেও ভাঙন প্রতিরোধে নেয়া হয়নি কার্যকর ব্যবস্থা। যখন ভাঙন শুরু হয় তখনই কেবল নামে মাত্র কাজ করে। যে কাজে কোন সফলতা আসে না। শুধু শুধু সরকারের টাকা নষ্ট। আমরা চাই-সরকার নদী ভাঙন রোধে স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করুক।

এ বিষয়ে চারঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান ফকরুল ইসলাম বলেন, বর্ষা মৌসুমে পদ্মার পানি বৃদ্ধি পেলে তীরবর্তী এলাকার মানুষেরা কষ্টে জীবনযাপন করে এটা ঠিক, তবে এই নদী ভাঙ্গন রক্ষার্থে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের আন্তরিক চেষ্টায় বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। নদী ভাঙ্গনে জিওবি ব্যাগ ফেলে ফাটল বন্ধ করা ও ডামবিং মাধ্যমে নদী বাঁধ রক্ষা করার কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী গোলাম মোর্তুজা বলেন, চারঘাট ও বাঘা উপজেলার নদী তীরবর্তী মানুষের ঘরবাড়ি ও জমি রক্ষার্থে ৭২২ কোটি ২৪ লাখ টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় বাঘা উপজেলার ১২ কিলোমিটার নদী ড্রেজিং এবং চারঘাট ও বাঘা উপজেলার ৫ হাজার ১০০ মিটার ব্লক দিয়ে পাকা বাঁধ তৈরি হবে। এর মধ্যে চারঘাট উপজেলার রাওথা ও টাঙ্গনে এক হাজার ৫০০ মিটার পাকা বাঁধ দেয়ার জন্য ইতোমধ্যে ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে ব্লক তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। বর্ষা মৌসুম শেষে বাধের কাজ শুরু হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

নদীর বাঁধ নির্মাণ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা সামিরা বলেন, উপজেলার টাঙ্গন ও রাওথা এলাকায় পাকা বাধ তৈরির প্রকল্প শুরু হয়েছে। পাকা বাঁধ তৈরি সম্পন্ন হলে এসকল নদী তীরবর্তী এলাকাগুলো নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পাবে। তবে সাময়িকভাবে জিওবি ব্যাগ ফেলে ফাটল বন্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *