আম ছোট-বড় সবারই খুব পছন্দের। অতি সুস্বাদু এ দেশি ফলটির পুষ্টিগুণও বেশ। এক কথায়, আমকে বলা হয় ফলের রাজা। বাংলাদেশ কৃষিনির্ভর দেশ। জাতীয় আয়ের প্রধান অংশই আসে কৃষি থেকে। কাজেই কৃষিনির্ভর অর্থনীতিকে সুদৃঢ় ও সুসংহত করতে আমের অধিক উৎপাদন এবং সম্প্রসারণ একান্ত অপরিহার্য।
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উৎপাদিত উন্নত জাতের আমের মধ্যে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বাজারে আসে প্রায় ২৫ জাতের আম। এর মধ্যে উন্নত ও সর্বাধিক বাণিজ্যসফল মাত্র ১০টি জাতের আম। অবশ্য দেশের বিভিন্ন বাজারে প্রায় ২০টি জাতের আম পাওয়া যায়, যা বাণিজ্যিকভাবে সফল। আম এ দেশের মানুষের প্রিয় ও পছন্দের ফল হলেও খুব কম মানুষই বাজারে প্রাপ্ত আমের সঠিক জাত বুঝতে পারেন। পাকা আম চিনতেও সমস্যা হয়ে থাকে। এ সমস্যার সহজ সমাধান হলো- আমটি পানিতে ছেড়ে দিলে যদি ডুবে যায়, বুঝতে হবে পেকেছে।
কোন আম দেখতে কেমন
গোপালভোগের গায়ে হলুদ ছোপ ছোপ দাগ আছে। এটির নিচের দিকে একটু সরু হয়ে থাকে। এই আম পাকার পর হলুদ হয়ে যায়। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পাওয়া যায় এই আম। রানিপছন্দ দেখতে অনেকটা গোপালভোগের মতোই। এর গায়েও হলুদ দাগ আছে কিন্তু আকারে ছোট। ফলে গোপালভোগের সঙ্গে রানিপছন্দ মেশালে আলাদা করা কষ্টকর। ক্ষীরসাপাত আম বাজারে পাওয়া যায় মে মাসের শেষ দিকে ও জুনের প্রথম সপ্তাহে। খুবই মিষ্টি ক্ষীরসাপাত আম অনেকে হিমসাগর বলে বিক্রি করলেও এ আম আকারে একটু বড়। আমে হালকা দাগ আছে।
আশ্বিনা ও ফজলি আম দেখতে একই রকম। তবে আশ্বিনা আম একটু বেশি সবুজ। অন্যদিকে পাকা ফজলি আম হয় হলুদাভ। আশ্বিনার পেট মোটা আর ফজলি একটু লম্বাটে ধরনের হয়ে থাকে। বারি আম-২ বা লক্ষণভোগ চেনার সহজ উপায় হলো আমটির নাক এর শরীরের মাঝামাঝি স্থানে এবং পাকার পর হলুদ বর্ণ ধারণ করে। এটি তেমন মিষ্টি নয়। সাধারণত জুনের শুরুতে এ আম বাজারে পাওয়া যায়। রুপালি আম বা আম্রপালি আম নিচের দিকে একটু সুচালো, বোঁটার দিকে গোলাকার। এটি বেশ মিষ্টি, স্বাদেও ভিন্ন। ল্যাংড়া আম দেখতে কিছুটা গোলাকার, মসৃণও। এর নাকটি দেখা যায় নিচের দিকে, চামড়া খুবই পাতলা।
প্রাকৃতিকভাবে পাকা, ভেজালমুক্ত আম খাওয়ার জন্য মাত্র ৮ থেকে ১০ জাতের আম সঠিকভাবে চিনতে হবে। এসব আমের চাহিদা ও বিকিকিনি সর্বাধিক। এগুলো হলো- গোপালভোগ, ক্ষীরসাপাত, হিমসাগর, ল্যাংড়া, ফজলি, আম্রপালি, লক্ষ্মণভোগ, রানিপছন্দ, হাঁড়িভাঙ্গা, বারি-৪, বোম্বাই, আশ্বিনা ইত্যাদি। বিষমুক্ত ও সত্যিকারের পাকা আম খেতে হলে মৌসুমের ঠিক কখন এগুলো প্রাকৃতিকভাবে পাকে,
তা জানা প্রয়োজন। এসব তথ্য জানা থাকলে ক্রেতারা সঠিক সময়ে ভালো আম কিনতে পারবেন। সব জাতের আম একই সময়ে পাকে না। কিছু কিছু জাতের ক্ষেত্রে ১০ থেকে ১৫ দিন সময় কমবেশি হয়ে থাকে। যেমন বান্দরবান এলাকায় উৎপাদিত আম্রপালি দেশের অন্যান্য অঞ্চলে উৎপাদিত আম্রপালির অন্তত ১৫ দিন আগে পেকে বাজারে চলে আসে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকায় উৎপাদিত বারি-৪ রাজশাহী অঞ্চলে উৎপাদিত বারি-৪ আমের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ দিন আগে পুষ্ট হয়। আপাতত অন্য কোনো জাতের আমের ক্ষেত্রে আগাম প্রাকৃতিকভাবে পাকার ঘটনা নজরে আসেনি।
অতএব এ কথা প্রায় নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, আমরা যে আমগুলো হরহামেশা বাজার থেকে কিনি, সেগুলো শৃঙ্খলা মেনে বছরের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই পেকে থাকে। এখন ভোক্তাকে শুধু জেনে নিতে হবে তার পছন্দের আমটি মৌসুমের ঠিক কোন সময়ে পাকছে। প্রয়োজনীয় এই তথ্যগুলো জানার পর আম কেনার ক্ষেত্রে আর কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না।
আম ক্যালেন্ডারের হিসাব
সাতক্ষীরায় গোবিন্দভোগ আম পাকতে শুরু করে ১৫ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত; চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর, দিনাজপুর ও সাতক্ষীরায় গোপালভোগ পাকে ২৫ মে থেকে ১০ জুন পর্যন্ত; চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীতে রানিপছন্দ ১ থেকে ১৫ জুনের মধ্যে পাকে; চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, দিনাজপুর ও সাতক্ষীরায় ক্ষীরসাপাত পাকে ৭ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত; চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাক ফজলি পাকে ৮ থেকে ২৫ জুন; চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোরের বোগলাগুটি ১২ জুন থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত; মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোরের বারি আম-২ (লক্ষণভোগ) ১৫ জুন থেকে ১৫ জুলাই; মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জে বোম্বাই ১২ জুন থেকে ৫ জুলাই; চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ ও সাতক্ষীরায় ল্যাংড়া ১৫ জুন থেকে ১৫ জুলাই; চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোরের তোতাপুরী ১৫ জুন থেকে ১০ জুলাই; রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা ২০ জুন থেকে ৫ আগস্ট; আম্রপালি পুরো দেশেই ২৮ জুন থেকে ২৫ জুলাই; ঠাকুরগাঁওয়ের সূর্যপুরী ১ থেকে ২০ জুলাই; চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোরের সুরমা ফজলি ৩০ জুন থেকে ৩০ জুলাই; চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, দিনাজপুর ও সাতক্ষীরায় ফজলি ৫ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট; বারি-৪ রাজশাহী অঞ্চলে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ; চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২০ জুলাই পর্যন্ত; রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে মল্লিকা ৭ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট; চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোরের মোহনভোগ ৮ থেকে ৩০ জুলাই; চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁর আশ্বিনা ২০ জুলাই থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর প্রাকৃতিকভাবে পেকে থাকে।