কাঁঠালের যতো গুণ : বিভিন্ন রোগের মহৌষধ

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি


ঢাকাঃ চীনে সবচেয়ে দামী ফল হলো কাঠাল। রীতিমতো কোষ গুণে বেচা চলে।

রসালো ফল কাঁঠাল এখন সব জায়গাতেই পাওয়া যাচ্ছে। সুস্থ থাকতে পুষ্টিগুণে অনন্য কাঁঠাল খেতে পারেন। এতে রয়েছে ফাইবার, প্রোটিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাংগানিজ, কপার, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, কার্বসহ আরও অনেক পুষ্টিগুণ। জেনে নিন কাঁঠালের উপকারিতা সম্পর্কে।

কাঁঠালে থাকা প্রোটিন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

ত্বক সুন্দর রাখতে নিয়মিত খান কাঁঠাল। এতে থাকা ভিটামিন সি ত্বকের অকালে বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে।

কাঁঠালে থাকা পটাসিয়াম, ফাইবার ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

ভিটামিন এ এবং ভিটামিন পাওয়া যায় কাঁঠাল থেকে। এই দুই ভিটামিন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে সুস্থ রাখে শরীর।

অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও ফ্ল্যাভোনয়েড থাকায় কাঁঠাল ক্যানসার প্রতিরোধ করতে পারে। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরে ফ্রি রেডিক্যাল প্রতিরোধ করে, যা ক্যানসার সৃষ্টির জন্য দায়ী।

কার্বোহাইড্রেট ও ক্যালোরি রয়েছে কাঁঠালে। ফলে এটি খেলে তাৎক্ষণিক শক্তি পাওয়া যায়। এছাড়া কোলেস্টেরল না থাকায় শরীরের জন্য নিরাপদ এই ফল।

কোষের দ্রুত ক্ষয় হয়ে যাওয়া রোধ করে কাঁঠাল।

প্রচুর পরিমাণে আঁশ রয়েছে এই ফলে। তাই এটি হজমের গণ্ডগোল দূর করতে সক্ষম।

কাঁঠালে থাকা ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম হাড় মজবুত রাখে এবং অস্টিওপোরসিস রোগ প্রতিরোধ করে।

দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে এই ফল।

কাঁঠালের বিচিতেও রয়েছে প্রোটিন। কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে কাঁঠালের বিচি খেতে পারেন। এটি শরীরের রক্ত সরবরাহ বাড়ায়। ফলে ভালো থাকে ত্বক ও চুল।

কাঁঠালে থাকা কপার থাইরয়েড গ্রন্থি ভালো রাখে।

সাবধানতা:

কাঁঠাল অতিরিক্ত খেলে অনেকের হজমের সমস্যা দেখা দেয়। তাই হজমের সমস্যায় ভুগলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন কাঁঠাল।

কাঁঠাল পুষ্টি সমৃদ্ধ। এতে থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, আয়রন, সোডিয়াম, জিঙ্ক এবং নায়াসিনসহ বিভিন্ন প্রকার পুষ্টি উপাদান রয়েছে। অন্যদিকে কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, শর্করা ও ভিটামিন থাকায় তা মানবদেহের জন্য বিশেষ উপকারী।

এর স্বাস্থ্য উপকারিতা :

১. কাঁঠালে চর্বির পরিমাণ একেবারেই কম। তাই খা্ওয়ার পর ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কা কম। ২. ১০০ গ্রাম কাঁঠালে পটাশিয়ামের পরিমাণ ৩০৩ মিলিগ্রাম। পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।

৩. কাঁঠালে প্রচুর ভিটামিন এ আছে যা রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে।

৪. কাঁঠালের অন্যতম উপযোগিতা হল ভিটামিন সি। প্রাকৃতিকভাবে মানবদেহে ভিটামিন ‘সি’ তৈরি হয় না। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দাঁতের মাড়িকে শক্তিশালী করে ভিটামিন ‘সি’।

৫. কাঁঠালে বিদ্যমান ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস- আলসার, ক্যানসার, উচ্চ রক্তচাপ এবং বার্ধক্য প্রতিরোধে সক্ষম। ৬. কাঁঠালে আছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের দেহকে ক্ষতিকর ফ্রির‌্যাডিকেলস থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও আমাদেরকে সর্দি-কাশি রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।

৭. টেনশন এবং নার্ভাসনেস কমাতে কাঁঠাল বেশ কার্যকরী। বদহজম রোধ করে কাঁঠাল। ৮. কাঁঠালে আছে বিপুল পরিমাণে খনিজ উপাদান ম্যাঙ্গানিজ যা রক্তে শর্করা বা চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

৯. কাঁঠালে বিদ্যমান ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়ামের মতো হাড়ের গঠন ও হাড় শক্তিশালীকরণে ভূমিকা পালন করে। ১০. কাঁঠালে আছে ভিটামিন বি৬ যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এতে থাকা আয়রন দেহের রক্তাল্পতা দূর করে।

কত রকমের ফলই তো আছে। কিন্তু সব কি আর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচিত হয়? তবে বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল তো যেনতেন কিছু নয়।
ভারতীয় উপমহাদেশ ও আশপাশের অঞ্চলের সীমানা ছাড়িয়ে ফলটিকে পৃথিবীর অন্যান্য প্রান্তেও ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এর ব্যাপ্তি হবে বিশ্বময়।
যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে কাঁঠাল জনপ্রিয় করার বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর বাণিজ্য থেকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিও আসতে পারে। শুকিয়ে সংরক্ষণের পাশাপাশি স্যুপ, চিপস, রস (জুস), আইসক্রিম ইত্যাদি খাবার তৈরিতেও কাঁঠাল ব্যবহার করা যায়। এই গাছের কাঠও অনেক দামি।
যুক্তরাষ্ট্রের নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি এবং শিকাগো বোটানিক গার্ডেনের উদ্ভিদ জীববিদ্যা ও সংরক্ষণ বিভাগের শিক্ষক নাইরি জেরেগা বলেন, কাঁঠালের অনুকূল আবাস গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলেও ফলটির ‘যথাযথ ব্যবহার’ নেই

মার্কিন এ গবেষকের বক্তব্যের সত্যতাও রয়েছে। কারণ, বাংলাদেশ ও ভারতের মতো দেশে একসময় বিপুল পরিমাণে উৎপাদিত হলেও এখন ফলটির কদর কমে এসেছে। তাই ভারতের বেঙ্গালুরুতে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব এগ্রিকালচারাল সায়েন্সেস চলতি মাসের মাঝামাঝি পর্যায়ে দুদিনের একটি আয়োজনের মাধ্যমে কাঁঠালের উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নিয়েছে।

বিশ্বের কয়েকটি অঞ্চলে সম্ভাব্য খাদ্যসংকট মোকাবিলায় কাঁঠালের উৎপাদন বৃদ্ধি একটি সমাধান হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মনে করছেন। নাইরি জেরেগা বলেন, কাঁঠালগাছ একবার রোপণের পর খুব কম যত্ন নিলেও চলে। কিন্তু ধান, গম ও ভুট্টার মতো জনপ্রিয় অন্যান্য শস্য উৎপাদনে প্রচুর সেচ দিতে হয় এবং কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে। কাঁঠাল চাষে এসব ঝামেলা নেই বললেই চলে।

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ জোনাথান ক্রেন বলেন, কাঁঠালগাছ বহুবর্ষজীবী হওয়ায় এটি প্রতিবছর রোপণের প্রশ্ন আসে না। গ্রীষ্মকালীন একেকটা গাছে পাঁচ থেকে সাত বছর যাবৎ ফল ধরে। তা ছাড়া কোনো কোনো গাছে বছরে ১৫০ থেকে ২০০টি কাঁঠাল ধরে।

বড় ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের এই কাঁঠালে রয়েছে কস্তুরীর মতো ঘ্রাণ। বৃক্ষে জন্মানো ফলের মধ্যে এটি সবচেয়ে বড়। এটি প্রায় ১০০ পাউন্ড (৪৫ কেজি) পর্যন্ত হতে পারে। গাছের ডালে বা মধ্যশরীরে ধরে এই ফল। ঝুলন্ত ফল মাটি থেকে ৩০, ৪০ ও ৫০ ফুট পর্যন্ত উঁচুতে থাকতে পারে। কাঁঠালের পুষ্টিগুণও অনেক। এটি উচ্চ মাত্রার প্রোটিন, পটাশিয়াম ও ভিটামিন বি-সমৃদ্ধ। আর প্রতি আধা কাপ কাঁঠালের পুষ্টিমান প্রায় ৯৫ ক্যালরি, যার মাত্রা বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের প্রধান খাবারের (ভাত বা অন্যান্য শস্যকণা) চেয়ে কম।

খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০ অব্দে গ্রিক দার্শনিক থিওফ্রাসটাস লিখেছেন, ‘আরেকটি বৃক্ষ রয়েছে, যা অত্যন্ত বড় এবং যার ফল অসাধারণভাবে মিষ্টি। ভারতের বস্ত্রহীন ঋষিরা এই ফল খান।’ সম্ভবত কাঁঠালের কথাই লিখেছিলেন থিওফ্রাসটাস। ফলটির উৎস ভারতবর্ষেই। বাংলাদেশে এটি কাঁঠাল নামে পরিচিত হলেও থাইল্যান্ডে কানুন এবং মালয়েশিয়ায় ফলটির নাম নাংকা। এনপিআর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *