বিশ্ব সম্প্রদায়কে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান খালেদার

Radio রাজনীতি

57122_lead

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া

 
ঢাকা: সরকারের তৎপরতাকে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস আখ্যা দিয়ে এর বিরুদ্ধে বিশ্ব সম্প্রদায়কে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটনেতা খালেদা জিয়া।

বৃহস্পতিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান স্বাক্ষরিত এক লিফলেট টাইপের বিবৃতিতে তিনি এ আহবান জানান।

বিবৃতিতে খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী শাসকদের একদলীয় ধাঁচের স্বৈরশাসন কায়েমের অপতৎপরতার কারণে অতীতে দেশ জঙ্গিবাদের কবলে পড়েছিল। আমরা তা দমন করেছিলাম। আজ আবার তারা একই কায়দায় উদারনৈতিক রাজনীতির ধারাকে নিশ্চিহ্ন করতে যে চণ্ডনীতি অবলম্বন করছে, তাতে আবারও সেই একই আশংকা দেখা দিয়েছে।

তিনি বলেন, এতে কেবল বাংলাদেশ নয়, পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। আমরা এই কঠিন বাস্তবতার দিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও গণতান্ত্রিক বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এবং জনগণের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পক্ষে সোচ্চার হওয়ার জন্য তাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

পুরো বিবৃতি পড়ুন

২০ দলীয় জোট প্রধান বলেন, সকলের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে একটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে আন্দোলন চলছে। আমরা দেশবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে শান্তিপূর্ণ এ আন্দোলনের ডাক দিয়েছি। আমরা বলেছি, একটি যৌক্তিক পরিণতিতে না পৌঁছা পর্যন্ত এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। দেশের সাধারণ মানুষ এবং গণতন্ত্রের সংগ্রামে অবতীর্ণ নেতা-কর্মীরা অনেক কষ্ট সয়ে এবং বিচার বহির্ভূত হত্যা, গুম, গুলি করে আহত করা, অত্যাচার, নির্যাতন, লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস, পাইকারি গ্রেফতার, পুলিশি রিমান্ড, বাড়িতে হামলার মতো ভয়ংকর ত্রাসের রাজত্বের মধ্যেও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রবল বাঁধা ও অত্যাচারের মুখেও যখন যেখানেই সম্ভব হচ্ছে, মিছিল ও প্রতিবাদে সোচ্চার হচ্ছেন তারা।

তিনি অভিযোগ করেন, জনগণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে মুষ্টিমেয় স্তাবক ও সুবিধাভোগীদের দ্বারা বেষ্টিত সরকার জনগণের আন্দোলনে ভীত হয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এইসব বাহিনীর নিয়ন্ত্রণভার দলবাজ ও বিতর্কিত কতিপয় কর্মকর্তার হাতে তুলে দিয়ে তাদের মাধ্যমে জনগণ ও প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলসমূহের ওপর চরম জুলুম-নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালানো হচ্ছে।

গত ৬ জানুয়ারি দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত: ৩৩ জন বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীকে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলি, সাজানো বন্দুকযুদ্ধ ও নৃশংস অন্যান্য পন্থায় হত্যা করা হয়েছে বলেও দাবি করেন খালেদা জিয়া।

তিনি আরও দাবি করেন, গুলি করে ও অন্যান্য পন্থায় আহত করা হয়েছে শত শত নেতা-কর্মীকে। আটকের পর নিখোঁজ রয়েছে অসংখ্য নেতা-কর্মী। ১৭ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারের ভয়ে ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন কয়েক লাখ। অনেকের বাড়ি-ঘরে গভীর রাতে হানা দিয়ে ভাঙচুর, লুঠতরাজ, অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি মহিলাসহ পরিবারের সদস্যদের নির্যাতন ও হেনস্তা করা হচ্ছে। এভাবে সারাদেশে এক ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে।

বিএনপির আন্দোলনকে আবারও ‘সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক’ দাবি করে তিনি বলেন, আমাদের আন্দোলন চলাকালে যাত্রীবাহী ও অন্যান্য যানবাহনে পেট্রোল বোমা মেরে ইতোমধ্যে নারী-শিশুসহ বেশ কয়েকজন নাগরিকের জীবন কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এই সব ঘৃণ্য হামলার ব্যাপারে ইতোমধ্যেই জনমনে গভীর সন্দেহ ও প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ পরিপূর্ণ নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রহরায় এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে জবরদস্তি করে শাসকগোষ্ঠী কিছু কিছু যানবাহন রাস্তায় নামাচ্ছে। সেই সব যানবাহনে কেমন করে ঘাতক বোমার নৃশংস হামলায় হতাহতের ঘটনা ঘটে, তা এক জ্বলন্ত প্রশ্ন। দ্বিতীয়ত, এইসব হামলার ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে আজ পর্যন্ত তেমন কাউকে হাতে-নাতে ধরা সম্ভব হয়নি। কোথাও কোথাও বোমা, গুলি, আগ্নেয়াস্ত্রসহ শাসক দলের চেলা-চামুণ্ডারা পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে তাদের ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। অথচ ঘটনার পরপরই বিরোধী দল ও আন্দোলনের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীনরা একতরফা প্রচারণা শুরু করে দিচ্ছে।

তিনি বলেন, অতীতের ধারাবাহিকতায় নিরাপরাধ মানুষকে নৃশংস পন্থায় হত্যা করে তার দায়ভার চাপিয়ে আন্দোলনের বিরুদ্ধে প্রচার-মাধ্যমে অপপ্রচার এবং বিরোধী দলকে সেই সুযোগে দমন করার অপরাজীতি ব্যর্থ হবে ইনশাআল্লাহ্।

পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, আন্দোলন ছাড়া দেশবাসীর সামনে আর কোনো পথ খোলা রাখা হয়নি। তাই ক্ষমতার জন্য নয়, গণতন্ত্র, দেশবাসীর ভোটাধিকার ও হৃত মৌলিক মানবিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে, শান্তি, নিরাপত্তা, আইনের শাসন ও সুবিচার নিশ্চিত করতে আমাদের এ আন্দোলন অভিষ্ট লক্ষ্যে না পৌঁছা পর্যন্ত চলতে থাকবে।

এ আন্দোলনে সকলকে শরিক হতে আবারও উদাত্ত আহ্বান জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *