‘মোদি ছাড়া সবাইকে স্বাগত’

Slider ফুলজান বিবির বাংলা

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ মোদির আগমনের প্রতিবাদে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে সমমনা ইসলামী দলসমূহ। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, বির্তকিত নরেন্দ্র মোদি ছাড়া অন্য অতিথিদের স্বাগত জানানো হবে। গতকাল জুমার নামাজ শেষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর ফটকের ভেতরে সমমনা ইসলামী দলের নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। সেখানে কয়েকজন নেতা বক্তব্য প্রদান করেন।

সভাস্থল থেকে নেতাকর্মীদের সড়কে না যেতে বার বার আহ্বান জানানো হয় এবং বলা হয় যে, কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে তার দায় দায়িত্ব তারা নিবেন না। তারপরও বিক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীরা সেখানে থাকা নেতাদের নির্দেশনা না মেনে সড়কে নেমে পড়েন। এসময় পুলিশ তাদের বাঁধা প্রদান করে। কিন্তু তারা বাধা ডিঙ্গিয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।
মিছিলটি পল্টন মোড় হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড়ে গেলে পুলিশের বাঁধা পেয়ে আবার বিজয়নগর হয়ে বায়তুল মোকাররমে ফিরে আসে। বিক্ষোভ সমাবেশ উপলক্ষে সকাল থেকে বায়তুল মোকাররম এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। সাদা পোশাকে পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়। পুলিশের ব্যারিকেড বসানো হয় দৈনিক বাংলা এবং তোপখানা রোডে। এছাড়াও পুলিশ ওই এলাকার সড়কগুলোর যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে। পুলিশ ও সমমনা ইসলামী দলগুলোর নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের আশঙ্কায় ওই এলাকার দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। তবে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

সমমনা ইসলামী দলের প্রধান সমন্বয়কারী ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সভাপতি মাওলানা আবদুর রব ইউসূফী বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠান উদযাপনে দেশের মানুষের কোন আপত্তি নেই। তবে দেশের স্বাধীনতাকামী তৌহিদী জনতার একস্থানে রয়েছে চরম আপত্তি। এ মহতি অনুষ্ঠানে ভারতের বিতর্কিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যার হাত ভারতের মুসলমানের রক্তে রঞ্জিত তাকে কোনভাবেই বাংলাদেশে আসতে দেয়া হবে না। তাকে আমরা যে কোন মূল্যে ঠেকাবো।

তিনি আরও বলেন, আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অন্য সব রাজনৈতিক দলের মতো উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপন করতে চাই। ডিএমপির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। অনুষ্ঠানে বিদেশি অনেক অতিথি আসবেন। তাদের আমরা স্বাগত জানাই। কারণ, এটা আমাদের মর্যাদার বিষয়। কিন্তু ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আমাদের পানি দিয়ে মারে, আবার পানি না দিয়েও।

সরকারের উদ্দেশে আবদুর রব ইউসূফী বলেন, এমনিই জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছেন, এখন নরেন্দ্র মোদিকে সুবর্ণজয়ন্তীতে আসতে দিয়ে তল্পিতল্পা গুছিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবেন না। আমরা যেকোনো সময় স্বল্প সময়ে কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারি।

সমমনা ইসলামী দলের অন্যতম নেতা ও খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের বলেন, মোদি একজন মুসলিম বিদ্বেষী, সাম্প্রদায়িক, উগ্র হিন্দুত্ববাদী। তিনি ভারতের মুসলমানদের কীভাবে হত্যা ও নির্যাতন করেছেন তা বিশ্ববাসী দেখেছেন এবং অবগত আছেন। এ দেশের মানুষ মোদিকে স্বাগত জানায় না। মুসলিম বিদ্বেষী মোদিকে এ দেশের মানুষ দেখতে চায় না। মোদি যে দিন বাংলাদেশে ঢুকবে সেদিন বাংলাদেশেকে অচল করে দেয়া হবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের চেয়ারম্যান ড. ঈসা সাঈদী বলেন, সরকার এমন একজন ব্যক্তিকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ করেছে যে ব্যক্তি আসলেই পুরো অনুষ্ঠানটি বিতর্কিত হবে। একটি বড় অনুষ্ঠান বিতর্কিত হোক আমরা চাই না।
বাংলাদেশ মুসলিম লীগের স্থায়ী কমিটির সদস্য আতিকুল ইসলাম বলেন, সব অতিথিকে শুভেচ্ছা জানাই, তবে মোদিকে নয়। মোদির আগমন ঠেকাতে ঝাড়ু মিছিল করব।

এসময় অন্যানের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের সেক্রেটারি মোস্তফা তারেকুল হাছান, খেলাফত আন্দোলনের নেতা মাওলানা আজিজুর রহমানসহ শীর্ষ নেতাবৃন্দ।

পল্টন থানার ওসি আবুবকর সিদ্দিক গতকাল রাতে মানবজমিনকে জানান, ‘সমমনা ইসলামী দলগুলোর তাদের বিক্ষোভের ব্যাপারে পুলিশকে একটি চিঠি দিয়েছিল। তবে তারা পুলিশের অনুমতি পায়নি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *