ঢাকাঃ আপাতত আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দলটি আগেই ঘোষণা করেছে। অবশিষ্ট সব পৌরসভা নির্বাচন এবং পরবর্তী উপ-নির্বাচনগুলোর ক্ষেত্রেও দলটির নীতিনির্ধারকরা একই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।
দলীয় সূত্র মতে, ‘নিরপেক্ষ ও বিতর্কমুক্ত নির্বাচন’ অনুষ্ঠানে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ন্যূনতম আগ্রহ না থাকায়, এসব নির্বাচনে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে কোনো ফায়দা দেখছে না বিএনপি। বরং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দ্রুত আরেকটি জাতীয় নির্বাচন ইসুতে বিরোধী দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তোলা ও ক্রমান্বয়ে আন্দোলনের মাঠে সোচ্চার হওয়ার ওপরই দলটি মূল ফোকাস দেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
জানা গেছে, গত শনিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নির্বাচন ইস্যুতে নীতি-নির্ধারকরা বিস্তর আলোচনা শেষে পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয়া দিগন্তকে এ বিষয়ে বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি নতুন জাতীয় নির্বাচনের দাবি বারবার তুলে ধরছি। আর এই দাবিকে জোরালো করতেই যেটুকু স্পেস আছে, সেটুকু কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনীব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলেছে। মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে তারা গণতন্ত্রের লেবাসে একদলীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি সিরিজ নানা কর্মসূচি পালন করছে। এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিএনপি দুইটি বিষয় জোর দিয়ে বলার চেষ্টা করছে। প্রথমত নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, দ্বিতীয়ত অবিলম্বে পদত্যাগ করে নতুন নির্বাচন।
বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচনকেই প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন হিসেবে মনে করে বিএনপি। এর সাথে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রও জড়িত রয়েছে বলে দলটির নেতারা বলে আসছেন। ২০০৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর সেনাসমর্থিত এক-এগারোর সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে শুরুতে বিএনপি জোটে দ্বিমত থাকলেও ‘নানামুখী চাপে’ তারা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেয়। দলটির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের অনেক নেতা ওই নির্বাচনের আগেই মনে করতেন, তাদের কয়েকটি আসন ‘ধরিয়ে’ দেয়া হবে। নবম সংসদের সেই নির্বাচনে বিএনপি জোট ৩০টি আসন লাভ করে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দেয়ার পটভূমিতে নিরপেক্ষ একটি ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচনের দাবি দীর্ঘ আন্দোলনের পরেও পূরণ না হওয়ায় দশম সংসদের জাতীয় নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে দলটি বয়কট করে। ওই নির্বাচন বিএনপিসহ আরো ২৮টি রাজনৈতিক দল বয়কট করলেও পরবর্তী আরো পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকতে আওয়ামী লীগকে তেমন বেগ পোহাতে হয়নি। ‘কৌশলী কূটনৈতিক’ তৎপরতার মাধ্যমে তারা সব সামাল দিতে সক্ষম হয় এবং বিরোধী শক্তিকে উল্টো চাপে ফেলে দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় একাদশ সংসদ নির্বাচনের এক বছর আগে ২০১৮ সালে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়ে কারাবরণ করেন সরকারের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দল বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়াবিহীন নির্বাচনী মেরুকরণে শত বিপত্তি উপেক্ষা করেই নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি-ঐক্যফ্রন্ট। মাত্র সাতটি আসন লাভ করে তারা।
বিএনপির সিনিয়র এক নেতার বক্তব্য অনুযায়ী : পরপর তিনটি নির্বাচনে এমন পরণতির পর স্বাভাবিকভাবেই দলটির নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েন। তবে সেই পরিস্থিতি তারা আবারো কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে। সংগঠনকে নতুন করে শক্তিশালী করা হচ্ছে। শিগগিরই পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে, এমন আশা তারা নেতাকর্মীদের মধ্যে ধীরে ধীরে জাগিয়ে তুলছেন।
বিএনপির সিনিয়র নেতারা আলাপকালে বলেছেন, ক্ষমতার তৃতীয় মেয়াদের তৃতীয় বছর পার করছে সরকার। আগামী বছরটা তাই তাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি আদায় করেই তাদের পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নিতে হবে।
নেতারা বলেছেন, আন্দোলনের গ্রাউন্ড ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও সোচ্চার রয়েছে। সবাইকে একটি প্লাটফর্মে এনে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে নামতে হবে। অন্যথায় দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা খুবই কঠিন হবে।