মামলায় নির্যাতনের যে বিবরণ দিয়েছেন কিশোর-

Slider বিচিত্র

আটকের পর নির্যাতনের অভিযোগে মামলার আবেদন করেছেন কার্টুনিস্ট আহমেদ কবীর কিশোর। নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে তিনি এ আবেদন করেছেন। আজ বুধবার অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে তিনি এই মামলার আবেদন করেন।

মামলার আবেদনে বলা হয়, গত বছরের ৫ মে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবীর কিশোর গ্রেফতার হন। কিন্তু তার তিনদিন আগে ২রা মে বিকাল ৫টা ৪৫ মিনিটে বাসা থেকে সাদা পোশাকধারী ১৬/১৭ জন লোক তাকে মুখোশ পরিয়ে হাতকড়া লাগিয়ে নির্জন অচেনা জায়গায় নিয়ে যায়। এরপর ২ মে থেকে ৩ মে পর্যন্ত তাকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হয়। তিনি অভিযোগে বলেন, গত বছরের ২রা মে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বাসার কলিং বেলে আমার ঘুম ভাঙে। দরজা খুললেই অপরিচিত এক লোক আমাকে বলেন দরজা খোলেন না কেন? পরনের লুঙ্গি খুলে প্যান্ট পরে নেন। সাথে একটা ভালো শার্ট পরেন।
আমি পরিচয় জিজ্ঞাসা করলে তারা আমাকে পরিচয় দেয় নাই। আলাপ-আলোচনায় তাদের একজনকে জসিম বলে ডাকতে শুনি। সবাই ঘরে ঢুকেই তল্লাশি শুরু করেন। তারা আমাকে কোনও গ্রেফতারি পরোয়ানা দেখাতে পারেনি। বাসা থেকে আমার মোবাইল ফোন, সিপিইউ ও পোর্টেবল যত ধরনের ডিজিটাল ডিভাইস ছিল তা অবৈধভাবে নিয়ে যায়।

আমাকে যখন হাতকড়া পরিয়ে বাসার নিচে নামানো হয়, তখন বাসার সামনে ৬/৭টি গাড়ি অপেক্ষা করছিল। আমার বাসার সামনে অনেক লোকজন জড়ো হয় এবং একটি গাড়িতে আমাকে ওঠানো হয়। আমি তখন প্রচণ্ডভাবে জোরে জোরে চিৎকার করতে থাকি। কিন্তু তারা গাড়িতে অনেক জোরে জোরে শব্দ করে গান বাজনা বাজাচ্ছিল। হয়তো আমার চিৎকার বাইরে শোনা যাচ্ছিল না। এতে আরো বলা হয়, পরবর্তীতে আমি বুঝতে পারলাম আমাকে পুরনো একটি স্যাঁতস্যাঁতে বাড়ির রুমে নিয়ে আসা হয়। এরপর প্রজেক্টরের মাধ্যমে একটির পর একটি কার্টুন আমাকে দেখানো হচ্ছিলো। সেগুলোর মর্মার্থ আমার কাছ থেকে জানতে চাওয়া হচ্ছে। করোনা নিয়ে আমার কিছু কার্টুন দেখিয়ে বলে কেন এগুলো আঁকছস? কার্টুনের চরিত্রগুলোর বিষয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়। একপর্যায়ে আমার কানে প্রচণ্ড জোরে আঘাত করা হয়। এরপর আমি বোধশক্তি হারিয়ে ফেলি। বুঝতে পারছিলাম আমার কান দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। তারপর স্টিলের পাতের লাঠি দিয়ে আমার পায়ের হাঁটুতে আঘাত করা হয়। যন্ত্রণা ও ব্যথায় আমি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ি। এভাবে কয়েক দফা আমার ওপর শারীরিক ও মানসিক টর্চার অত্যাচার চালায় তারা। পরবর্তীতে আমি নিজেকে র‌্যাব কার্যালয়ে দেখতে পাই। র‌্যাবের কার্যালয়ে মুশতাক আহমেদের সঙ্গে আমার দেখা হয়। মুশতাক আহমেদ আলাপের সময় আমাকে জানান তাকেও বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়েছিল। গত বছরের ৬ মে আমাদের রমনা থানায় সোপর্দ করা হয়। বর্তমানে আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। কান দিয়ে পুঁজ পড়ে, হাঁটতে পারি না, হঠাৎ করে পড়ে যাই এবং শরীরে আরও নানাবিধ রোগের উপসর্গ দেখা যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *