নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষিত আতশবাজির ঝলক

Slider বাংলার মুখোমুখি

পুলিশের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাজধানীবাসী মেতে উঠেছিল ইংরেজি নতুন বছর-২০২১কে বরণ করতে। পটকা আর আতশবাজির ঝলকে রঙিন হয়ে উঠেছিল ঢাকার আকাশ। ছাদে ছাদে বারবিকিউ পার্টি থেকে শুরু করে, ফানুস উড়ানো, নাচে-গানে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। ছিল মদের ছড়াছড়ি। অথচ আগে থেকেই থার্টি ফাস্ট নাইটকে ঘিরে ডিএমপি’র তরফ থেকে দেয়া হয়েছিল ১৩ নির্দেশনা। নির্দেশনার তোয়াক্কা না করেই নগরবাসী নিজেদের মতো করে নতুন বছরকে বরণ করে নিয়েছে।

ডিএমপি’র নির্দেশনায় ছিল কোথাও কোনো পটকা-আতশবাজি ফোটানো যাবে না। উন্মুক্ত স্থানে নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে কোনোধরনের অনুষ্ঠান বা সমবেত হওয়া যাবে না।

নাচ-গান ও কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা যাবে না। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আবাসিক হোটেলগুলোতে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠান করতে পারবে। তবে কোনোক্রমেই ডিজে পার্টি করতে দেয়া যাবে না। সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে রাস্তার মোড়, ফ্লাইওভার, রাস্তায়, ভবনের ছাদে জমায়েত/সমাবেশ/উৎসব করা যাবে না। অথচ নতুন বর্ষকে উদযাপনের অপেক্ষায় গোটা দেশ। রাত ১২টা বাজার আগেই ভিন্ন এক শহরে পরিণত হয়ে ওঠে রাজধানী। বিভিন্ন বাড়ির ছাদ থেকে শুরু হয় আতশবাজি। ফুটতে থাকে পটকা। এ যেন ভিন্ন এক শহরে রূপ নেয় ঢাকা। কালো আঁধারের বুক ফেটে নানা রঙের আতশবাজি অপরূপ এক রূপের জন্ম দেয়। সেই সঙ্গে উড়তে থাকে ফানুস।
সরজমিন দেখা যায়, রাজধানীর প্রায় প্রতিটি এলাকাতেই ছিল ছাদ পার্টি। এসব ছাদে ঘরোয়াভাবে উদযাপন করা হয় থার্টিফাস্ট নাইটকে। পরিবার-পরিজন নিয়ে এ যেন এক অন্যরকম আয়োজন। ছিল গান-বাজনা, বারবিকিউ পার্টিসহ ঘরোয়া খেলার আয়োজন। আদাবরের বাসিন্দা মিলন হাসান একজন ব্যাংকার। তিনি বলেন, প্রায় প্রতিবছরই ছাদে আয়োজন করি। আমরা বাড়ির সব ফ্ল্যাটের লোকজনই এতে অংশ নিয়ে থাকি। এবার পহেলা জানুয়ারি শুক্রবার হওয়ায় কিছুটা স্বস্তিতে সময় পার করেছি। তিনি আরো বলেন, আমরা ১২টায় ছাদে উঠে আতশবাজি করেছি। উড়িয়েছি ফানুস। আর আয়োজন ছিল বারবিকিউ’র। প্রায় রাত ২টা পর্যন্ত আমাদের আয়োজন চলে। উত্তরায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আলভি আহমেদ। তিনি পার্টটাইম চাকরি করেন। বলেন, আমরা সহকর্মীরা মিলে ফ্ল্যাটেই পার্টি করি। পার্টিতে মূলত আমরা নিজেরাই হাঁস রান্না করি। সেই সঙ্গে আয়োজন ছিল মদের। মিরপুর এলাকার বাসিন্দা জ্যোতি রায়। কাজ করেন একটি বেসরকারি মোবাইল কোম্পানিতে। তিনি বলেন, খুব খারাপ একটা বছর ছিল ২০২০। আমিসহ পরিবারের তিনজন করোনায় আক্রান্ত ছিলাম। পিসিকেও হারিয়েছি করোনায়। এমন বছর যেন আর না আসে সেই প্রার্থনা করেছি। আর উদযাপন করেছি সবাই মিলে। বাচ্চাদের জন্য ছিল বিস্কুট দৌড়, আমাদের বালিশ খেলা আর ছেলেদের জন্য ছিল থ্রো বল। বেশ ভালো একটি উদযাপন হয়েছে। পান্থপথ এলাকার বাসিন্দা তুষার হাওলাদারও একই কথা বলেন, ১২টার বাজার সঙ্গেই কেক কাটা হয়। এরপর মধ্যরাত পর্যন্ত বাসার ছাদে গানের সঙ্গে নাচ হয়। শুধু আমরাই না বিভিন্ন বাড়ির ছাদ থেকেই ভেসে আসছিল এই সুর।

ওদিকে শুধু চার দেওয়াল আর বাসার ছাদে নয়। ঢাকার অনেক হোটেলে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে আয়োজন করা হয়েছিল ডিজে পার্টির। শত শত তরুণী করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও মেতেছিল নাচ-গানে। হাজার হাজার টাকা প্রবেশ ফি দিয়ে অনেকেই ডিজে পার্টিতে অংশগ্রহণ করেছেন। হোটেলে-বারে ছিল বিদেশি মদের ছড়াছড়ি। কিছু কিছু হোটেলে রাত তিনটা পর্যন্ত চলে ডিজে পার্টির আয়োজন।

ডিএমপি’র নির্দেশনায় বার বন্ধের কথা বলা হলেও বেশকিছু বারে গোপণে মদ বিক্রি হয়েছে বলে জানান অনেক ক্রেতা। তার মধ্যে গ্যালাক্সি বার থেকে রাত ২টার পরেও অনেককে মাতাল অবস্থায় ফিরতে দেখা গেছে। এদিকে থার্টি ফাস্ট নাইটকে ঘিরে ঢাকায় অন্যান্য মাদকের চাহিদা ছিল চরমে। খিলগাঁওয়ের এক মাদক বিক্রেতা বলেন, ইয়াবার চাহিদা গত তিনদিন ধরে বেড়েছে। যে ক্রেতা ১/২টা নিতো সে থার্টি ফাস্ট উপলক্ষে তিন থেকে চারটা করে নিয়েছে। গাঁজার চাহিদাও ছিল বেশ। কাওরান বাজারের রেললাইন এলাকার এক গাঁজা বিক্রেতা মহিলা প্রতিদিন আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকার গাঁজা বিক্রি করেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে তিনি ১০ হাজার টাকার গাঁজা বিক্রি করেছেন বলে জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *