বাংলাদেশে শনাক্ত ভাইরাসের মিল: কেন নীরব ছিল বিসিএসআইআর

Slider জাতীয়

করোনাভাইরাসের নতুন রূপ নিয়ে গোটা দুনিয়া এখন উদ্বিগ্ন। এরমধ্যে খবর বের হয়েছে করোনাভাইরাসের নতুন যে রূপটি বৃটেনে ধরা পড়েছে এর কাছাকাছি একটি স্ট্রেইন বাংলাদেশে শনাক্ত হয় দুই মাস আগে। বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) বিজ্ঞানীরা এ তথ্য জানিয়েছেন। তারা বলছেন, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসটি আবারো রূপ (মিউটেশন) পরিবর্তন করেছে। তবে এটি এখনো অতটা ভয়ঙ্কর নয়। এর প্রভাব কতটুকু, সে সম্পর্কে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। দেশের জনস্বাস্থ্যবিদরা প্রশ্ন্ন করে বলেছেন, বিসিএসআইআর’র গবেষকরা প্রায় দুই মাস আগে এ রকম তথ্য পেয়েও কেন চুপচাপ বসে ছিল? বিষয়টি আগে জানানো হয়নি কেন? তখন বিস্তারিত জানালে এ বিষয়ে গবেষণা চালানো যেতো।

বিসিএসআইআর’র বিজ্ঞানীরা গত মাসে ১৭টি নতুন জিনোম সিকোয়েন্স পরীক্ষা করে পাঁচটিতে করোনাভাইরাসের নতুন ধরনের এই স্ট্রেইন শনাক্ত করেন।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সেলিম খান গণমাধ্যমকে গতকাল এ তথ্য নিশ্চিত করেন। সম্প্রতি বৃটেনে করোনাভাইরাসের নতুন যে স্ট্রেইন পাওয়া গেছে, সেটি আগের স্ট্রেইনটির তুলনায় ৭০ শতাংশ বেশি গতিতে ছড়ায় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ড. সেলিম খান বলেন, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে করোনাভাইরাসের সর্বশেষ যে সিকোয়েন্স করা হয়েছে, তাতে ভাইরাসটির দুটি স্পাইকে প্রোটিন মিউটেশন পাওয়া যায়। ২০শে আগস্ট থেকে নমুনা নিয়েছেন। যার সিকোয়েন্স করেছেন ৭ই নভেম্বর। বৃটেনে শনাক্ত নতুন ভাইরাসটির স্ট্রেইনে যে বৈশিষ্ট্য আছে, তার সঙ্গে বাংলাদেশে পাওয়া ভাইরাসটির পুরোপুরি না থাকলেও অনেকটাই মিল রয়েছে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের আগে এমন মিউটেশনের খবর রাশিয়া ও পেরুতে পাওয়া যায়। ওই দেশগুলোতে একটি করে নমুনায় এমন মিউটেশন পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশে মোট ১৭টি নমুনার মধ্যে ৫টিতেই এমন মিউটেশন পাওয়া গেছে। ড. সেলিম বলেন, রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টার থেকে ওই নমুনাগুলো জিনোম সিকোয়েন্সের জন্য নিয়েছিলেন তারা। তবে কাদের কাছ থেকে এই নমুনাগুলো সংগ্রহ করা হয়েছিল, তা শনাক্ত করতে নমুনার তথ্য এরইমধ্যে ওই সেন্টারে পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক ভিসি ও কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির অন্যতম সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, স্ট্রেইন কাছাকাছি হলে হবে না, পুরোটাই এক হতে হবে। এর ব্যাখ্যা বিসিএসআইআর দিতে পারবে। তারা কি কঠিন অসুস্থ রোগীর বা অল্প অসুস্থ রোগীর নমুনা নিয়ে করেছেন তা বলেননি। বিষয়টি জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটিকে তারা জানাননি। তাদের উচিত ছিল আইইডিসিআরকে জানানো। তিনি বলেন, বিসিএসআইআর মাঝে মাঝেই একটা করে তথ্য দেয়। সারা পৃথিবীতে নতুন স্ট্রেইন নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে, এখন তারা বলছে দেশে এর কাছাকাছি স্ট্রেইন আগে থেকেই ছিল। তারা নতুন স্ট্রেইন আবিষ্কার করে বসে আছে! সেটা আমাদের জানাবে না? নাকি তারা গবেষণা করে যেসব তথ্য পাবে, তা নিয়ে চুপ করে বসে থাকবে?

আইইডিসিআরকে না জানায়, তাহলে সেটার কার্যক্ষমতা জানা যাবে কীভাবে? বিসিএসআইআর সবকিছু আবিষ্কার করে বসে আছে, কিন্তু, তারা সেটা প্রকাশ করে না। অন্যরা যখন প্রকাশ করে, তখন তারা বলে যে, এটা আমরা আগে থেকেই জানি। এখন তারা যদি এমন বিভ্রান্তি করার মতো তথ্য দেয়, তাহলে আমার প্রশ্ন হচ্ছে আপনারা যেটা পেয়েছেন, শতভাগ না হলেও অনেক মিল আছে, এটার সঙ্গে ক্লিনিক্যাল মেনিফেস্টেশনের কী সম্পর্ক আছে অথবা ট্রান্সমিশনেবিলিটির কী সম্পর্ক রয়েছে, সেটা আমাদেরকে জানান।

এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আরো বলেন, নতুন তত্ত্ব পেলে সঙ্গে সঙ্গে সেটা জানাতে হবে। আমরা তুলনা করে দেখবো সেটা কী। তাই তো হওয়া উচিত ছিল। নতুন স্ট্রেইন পাওয়ার পর বিশ্বের ৪০টি দেশ যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছে। এটা একটা সিরিয়াস বিষয়। এমন একটা সময়ে এসে জানানো হলো, আমাদের এখানে আরো আগে সেটা পেয়েছে। যেটা পুরোপুরি এক নয়, অনেক মিল রয়েছে। সেটাতে আমাদের লাভ কি? সারা দেশে মানুষ যেখানে বিপদগ্রস্ত, সবাই ভাবছে যে, কী করা যায়, এরমধ্যে তারা এ রকম একটা তথ্য দিলো। এই তথ্য তো গোপন করে রাখার মতো কোনো তথ্য না।

করোনার নতুন স্ট্রেইন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব মানবজমিনকে বলেন, বিজ্ঞানের কথা হলো ভাইরাসের মিউটেশন হবে। করোনাভাইরাসের প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হবে। এটা তো এ রকম না যে কোথাও কোনো পরিবর্তন হবে না। দেখতে হবে এতে ভ্যাকসিন কাজ করবে কি না। এখন আমাদের সবচেয়ে বড় কাজ হলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। নতুন স্ট্রেইন নিয়ে মন্তব্য করার সময় এখনো আসেনি। শুধু এটুকুই বলবো যে, মিউটেশন ভাইরাসের অংশ। আমাদের এখানে এখনো তো পুরোপুরি অ্যানালাইসিস হয়নি। সেটা আগে করতে হবে।

আইইডিসিআর’র সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং সংস্থাটির উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মুশতাক হোসেন এ ব্যাপারে বলেন, পরিবর্তন তো আকস্মিকভাবে হয় না। নিয়মিত পরিবর্তন হচ্ছে। বৃটেনে যেটা পাওয়া গেছে, সেটা খুব বড় ধরনের পরিবর্তন কিনা, সেটা কিন্তু এখনো বোঝা যায়নি। এখনো বড় ধরনের পরিবর্তনের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কিন্তু তারা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। কারণ বড়দিনের বন্ধতে অনেক লোক আসা-যাওয়া করছে, সেখানে সংক্রমণ-মৃত্যুও বেশি, তাই সেখানে বিষয়টা স্বাভাবিকভাবে অ্যালার্মিং। কিন্তু আমাদের দেশে করোনা পরিস্থিতি তো একটা রেঞ্জের ভেতরে ওঠা-নামা করছে। কাজেই যেটা পেয়ে যুক্তরাজ্য বা যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন হয়েছে, সেটা যেখানে সংক্রমণ তুলনামূলক কম, সেখানে তেমন উদ্বিগ্নের বিষয় নাও হতে পারে।

আর বিশ্বে যারাই জিনোম সিকোয়েন্স নিয়ে কাজ করবে, তাদেরকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) জিআইএসএইড নামে একটা ওয়েবসাইট আছে, সেখানে পোস্ট করতে হয়। ওই তথ্য ভাণ্ডারে এরকম গবেষণা জমা দিতে হয়। সেখানে পোস্ট করলে বোঝা যায় যে, ভাইরাসটি কত পরিবর্তন হয়েছে। কাজেই বিসিএসআইআর যদি সেটা করে থাকে, নিশ্চই তারা সেখানে সেটা পোস্ট করেছে এবং যারা জিনোম সিকোয়েন্সের বিজ্ঞানী, তাদের কাছে হয়তো ওই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে খবরটা গেছে। ফলে যারা বাংলাদেশে জিনোম সিকোয়েন্স নিয়ে কাজ করেন, তাদের কাছে হয়তো খবরটা গেছে। খুব বেশি পরিবর্তন না হওয়ার কারণেই আসলে সেটাতে বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ হয়নি।

আইইডিসিআরকে বিষয়টি জানানো উচিত ছিল কি না, জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির এই উপদেষ্টা বলেন, আইইডিসিআরে জিনোম সিকোয়েন্সের সার্ভেইল্যান্স নিয়মিত করার সিদ্ধান্ত হচ্ছে। এখন বিজ্ঞানীদের গবেষণার জন্য সেটা আমরা করছি। কিন্তু ইংল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশ তো নিয়মিতভাবে জিনোম সিকোয়েন্স করে। যদি আমরা সার্ভেইল্যান্স করতাম, তাহলে তাদের (বিসিএসআইআর) বিষয়টি আইইডিসিআরে জানানোর বাধ্যবাধকতা থাকতো। এমনিতে বিজ্ঞানীরা একে অপরের সঙ্গে এগুলো শেয়ার করে থাকেন। আমি জানি না আইইডিসিআরের এই সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা বিষয়টি জানতেন কিনা। জানলেও যেহেতু তেমন বড় একটা পরিবর্তন হয়নি, তাই হয়তো এটা বিজ্ঞানীদের অভ্যন্তরেই থেকে গেছে। এ ধরনের গবেষণা নিয়মিত হওয়া দরকার বলেও তিনি মনে করেন।

গবেষকরা বলছেন, করোনাভাইরাসে মোট ২৮টি প্রোটিন থাকে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে স্পাইক প্রোটিন, যার মাধ্যমে মূলত ভাইরাসটি বাহককে আক্রমণ করে। এই স্পাইক প্রোটিনে ১ হাজার ২৭৪টি অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে। এর মধ্যে ‘ডি৬১৪জি’ নম্বর অ্যামাইনো অ্যাসিডটি আগে থেকেই বাংলাদেশে সক্রিয় ছিল। নতুন আরো দুই সক্রিয় অ্যামাইনো অ্যাসিডের নাম ‘পি৬৮১আর’ এবং ‘ডি১১১৮ আর’। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৪৮৩টি করোনাভাইরাসের পূর্ণাঙ্গ জিন নকশা বের করা হয়েছে। এর মধ্যে বিসিএসআইআরের জিনোমিক রিসার্চ ল্যাবরেটরির গবেষকরা ২৮০টি ভাইরাসের পূর্ণাঙ্গ জিন নকশা উন্মোচন করেছেন। এগুলো জিনোম সিকোয়েন্সের উন্মুক্ত তথ্যভাণ্ডার জার্মানির গোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটা (জিসএআইডি) ও যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনলিক্যাল ইনফরমেশনে (এনসিবিআই) ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। বিসিএসআইআর ছাড়া আরো নয়টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান করোনাভাইরাসের জিন নকশা উন্মোচনের গবেষণায় কাজ করছে।

বিসিএসআইআরের গবেষকরা জানিয়েছেন, দেশের করোনাভাইরাসটির গতিপথ কোন দিকে যাচ্ছে, সেটির গবেষণায় আরো ৭০০টি করোনাভাইরাসের পূর্ণাঙ্গ জিন নকশা বের করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল ডিজিজ অ্যাসেসমেন্টের ২০শে ডিসেম্বরের ব্রিফিং অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে যেখানে স্পাইক প্রোটিনের মিউটেশনে পি৬৮১এইচ ও ডি১১১৮এইচ আছে সেখানে।

এর আগে গত ৬ই সেপ্টেম্বর বিসিএসআইআর-এর জিনোমিক রিসার্চ ল্যাবরেটরি কোভিড-১৯ জিনোম সিকোয়েন্সিং এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, দেশে করোনার রূপ ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তন হচ্ছে। মহামারি করোনাভাইরাসের রূপ বিশ্বের যেকোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশে দ্রুত গতিতে বদলাচ্ছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের রূপ পরিবর্তনের হার ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ। যেখানে বিশ্বে এই পরিবর্তনের হার ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ। তখন ড. মো. সেলিম খান জানিয়েছেন, প্রতিবেদনের তৈরির জন্য দেশের ৮ বিভাগ থেকে সর্বমোট ২৬৩টি জিনোম সিকোয়েন্সিং ডাটা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। মে মাসের ৭ তারিখ থেকে ৩১শে জুলাই পর্যন্ত এসব ডাটা সংগ্রহ করা হয়। গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল ভাইরাসের সংক্রমণ, মিউটেশনের হার, জিনগত বৈচিত্র্য, নন-সিনোনিমাস মিউটেশন এবং জিনোমিক ফাইলোজেনি পর্যবেক্ষণ করা। গবেষণার ফলাফলকে কোভিড-১৯ মহামারি রোধে কার্যকর ভূমিকা পালনে ব্যবহার করা।

সংগৃহীত নমুনায় শতভাগ ক্ষেত্রে আধিপত্যকারী ভ্যারিয়েন্ট জি৬১৪ (স্পাইক প্রোটিনে ৬১৪তম অবস্থানে অ্যাসপাটি এসিডের পরিবর্তে গ্লাইসিন হওয়ার কারণ) এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ২৬৩টি সার্স কোভ ২ জিনোম বিশ্লেষণে ৭৩৭ পয়েন্টে মিউটেশন পাওয়া গেছে, যার মধ্যে ৩৫৮ নন-সিনোনিমাস অ্যামিনো এসিড প্রতিস্থাপন ঘটায়। প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে বার্ষিক মিউটেশনের হার ২৪ দশমিক ৬৪ নিউক্লিওটাইড-জানানো হয়। এতে জানানো হয়, স্পাইক প্রোটিনের ৫৩টি নন-সিনোনিমাস অ্যামিনো এসিড প্রতিস্থাপন এবং ১০৩টি নিউক্লিওটাইড প্রতিস্থাপন শনাক্ত হরা হয়। স্পাইক প্রোটিনে নন-সিনোনিমাস অ্যামিনো এসিড প্রতিস্থাপনের উপর ভিত্তি করে বৈশ্বিক সার্স-কোভ-২ এর সঙ্গে সম্পর্কিত ৫টি স্বতন্ত্র ভ্যারিয়েন্ট আবিষ্কার করেছি। যা বিশ্বে আর কোথাও নেই। সংগৃহীত নমুনায় শতভাগ ক্ষেত্রে ৪টি মিউটেশন পুনরাবৃত্তি লক্ষ্যণীয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *