কাদের সিদ্দিকীর অবস্থানে হাজারো মানুষের সংহতি

Slider গ্রাম বাংলা

74243_kader

দাবি দুটি। একটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে, অন্যটি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কাছে। আর এ দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত রাস্তায়-ই থাকার ঘোষণা দিয়েছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। বুধবার বিকাল ৩টা থেকে তিনি নেতাকর্মীদের নিয়ে মতিঝিলের দলীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় অবস্থান করছেন। এমনকি রাতও কাটিয়েছেন সেখানেই। গতকাল তার এ অবস্থান কর্মসূচিতে সহস্রাধিক জনতা যোগ দেন। আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে গণস্বাক্ষরে অংশ নিয়েছে কয়েক শ’ সাধারণ মানুষ। এছাড়া গতকাল বিকালে সেখানে গিয়ে সংহতি প্রকাশ করেন সাংবাদিক নেতারা।
বুধবার থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের নেতারা দলীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় জড়ো হন। গতকাল সকালে কার্যালয়ের সামনে শুধু দলীয় নেতাকর্মীরা অবস্থান করলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ মানুষের সমাগম বাড়তে থাকে। যোগ দেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। এদের অনেকেই বঙ্গবীরের সঙ্গে দেখা করে সংহতি প্রকাশ করেন। সাধারণ মানুষ দেশের চলমান এ কাদের সিদ্দির অবস্থানের জন্য ধন্যবাদও জানান। কর্মসূচিতে আসা এক ব্যবসায়ী বলেন, এখানে আসা ছাড়া আমাদের আর কোন পথ নাই। তিনি তার অবস্থা তুলে ধরে বলেন, পাওনাদাররা তার টাকা দিচ্ছেন না। তবে তিনি এজন্য তাদের দায়ী না করে বলেন, তারা দেবে কোত্থেকে? তাদেরও তো আয়-রোজগার নেই। দেশের চলমান সঙ্কটকে দায়ী করে তিনি আরও বলেন, আমরা উভয় নেত্রীকে এ অবস্থা থেকে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানাই। মধ্যবয়সী অপর এক বাসচালক ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, পরিবার-পরিজন নিয়ে খুব সমস্যায় আছি। রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বের হতে ভয় লাগে। অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, এ কারণে বের হই না। কিন্তু এভাবে আর কতদিন থাকবো। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দুর্বৃত্তদের ধরতে না পারলেও উদ্দেশ্যমূলকভাবে অনেককে মামলার আসামি করছে। এতে ঝুঁকি আরও বেড়ে যাচ্ছে। কারণ মামলার আসামিরা ক্ষিপ্ত হয়ে সহিংস হয়ে উঠছে। অবস্থানস্থলে উপস্থিত অনেককে ফোন করে পরিচিতজনদের আসার অনুরোধ করতেও দেখা গেছে। আন্দোলনে সহযোগিতা করতে অনেকে সাধ্যমতো আর্থিক সহযোগিতাও দিচ্ছেন। সাধারণ মানুষ ৫ টাকা থেকে শুরু করে সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করছেন। কাদের সিদ্দিকীর অবস্থানস্থলে এসে এক ভ্রাম্যমাণ গামছা বিক্রেতা আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে তাকে একটি গামছা উপহার দেন। এ সময় ওই বিক্রেতার আপত্তি সত্ত্বেও তিনি তাকে গামছার মূল্য পরিশোধ করেন। অবস্থানকালে কাদের সিদ্দিকীর সামনে কোরআন শরিফ, কয়েকটি বই এবং কিছু পত্রিকা ছিল। তিনি সময়মতো নামাজ পড়ছেন। এদিকে বিকাল ৩টা ১৫ মিনিটে সাংবাদিক নেতারা সেখানে উপস্থিত হয়ে আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন। তারা দেশের চলমান এ সঙ্কটে আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে স্বাক্ষর কর্মসূচিতে অংশ নেন। সাংবাদিকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, বিএফইউজের একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, ডিইউজের একাংশের সভাপতি আবদুল হাই শিকদার, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, সাংবাদিক এম এ আজিজ, এম আবদুল্লাহ, শাহীন হাসনাত, জাকির হোসেন, খন্দকার আলমগীর হোসেন, শহিদুল ইসলাম প্রমুখ। এছাড়া সন্ধ্যায় সংহতি জানাতে যান বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিবাদকারী বেশ কয়েকজন নাগরিক। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন উল্লেখ করে বঙ্গবীর বলেন, এটা জনগণের দাবি। আমরা সেবক হিসেবে দাবি উত্থাপন করছি, দাবিকে শক্তিশালী করছি। খালেদা জিয়ার প্রতি হরতল-অবরোধ প্রত্যাহার করে মানুষ এবং শেখ হাসিনার প্রতি আলোচনায় বসে দেশ বাঁচানোর দাবি জানানোর পাশাপাশি তিনি দেশে শান্তি, মানুষের সম্মান এবং স্বাভাবিক মৃত্যুরও গ্যারান্টি চান। এটা কোন দলীয় কর্মসূচি নয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দেশের সঙ্কটকালে এটা দায়িত্ব। সেই দায়িত্ববোধ থেকেই এ কর্মসূচি পালন করছেন। এ ক্ষেত্রে দল সহযোগিতা করছে। তিনি দেশের এ সঙ্কটকালে দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে আন্দোলনে শরিক হওয়ার আহ্বান জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *