মোস্তফা কামাল ও মোঃ জাকারিয়া
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
গ্রামবাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
গাজীপুর: গাজীপুর রাজবাড়ি মাঠে ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলায় ছোট ছোট শিশুরা ক্ষুদে বিজ্ঞানীরমত আবিস্কার করছে ডিজিটাল প্রোডাকশন। বিনা খরচে মেয়েরা সোলার প্যানেলের মাধমে তৈরী করছে বিদ্যুৎ ও বিশুদ্ধ পানি। ছেলেরা আলু ও লেবু থেকে উদ্ভাবন করল বিদ্যুৎ, ট্রেন দূঘটনা থেকে বাঁচার ডিজিটাল পদ্ধতির মত নতুন নতুন আধুনিক অনেক কিছু।
বৃহসপতিবার(২৯জানুয়ারী) বিকেলে গাজীপুর রাজবাড়ি মাঠে গিয়ে দেখা যায় তিন দিন ব্যাপী ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা এবং ৩৬তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ-২০১৫ এর শেষ দিন। ডিজিটাল প্যান্ডেলে ডিজিটাল স্টল করা হয়েছে ৫২টি।
গাজীপুর জেলা প্রশাসন কন্ট্রোলরুমে দায়িত্বপ্রাপ্ত গাজীপুরের সহকারী কমিশনার(আইসিটি) দিলরুবা শারমিন জানালেন, এবারের মেলায় বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান মোট ৫২টি স্টল নিয়েছে। স্টল নিয়ে অনলাইনে সরকারী সুবিধাবাদি সম্পকে জনগনকে সচেতন করার কাজটি করছে সরকারী দপ্তরগুলো। আর নতুন নতুন আবিস্কারগুলো হাতে নাতে ব্যাখ্যা করছে শিক্ষাথীরা।
জেলা প্রশাসন কন্ট্রোলরুমের তিন সহকারী কাজী রাকিবুল হাসান, সুমন দাস ও তাজ আকন্দ চুমকী জানায়, এসকল স্টলে ডিজিটাল পদ্ধতিতে উদ্ভাবিত প্রকল্প প্রদশন ও জনসেবার জন্য ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহারে গনসচেতনতামূলক কাজ করা হচ্ছে। প্রচুরদশনাথীরা, মেলায় গিয়ে বিভিন্ন স্টলে ঘুরে ঘুরে এ সব দেখছেন। অনেকে স্বপরিবারেও মেলায় ঘুরতে এসেছেন। অনলাইন পদ্ধতিতে এখন সব কিছু করা হচ্ছে তা জনগনকে হাতে কলমে জানানোর জন্য তারা জেলা প্রশাষনের পক্ষ থেকে কাজ করছেন।
জেলা পুলিশের কন্ট্রোলরুমে গিয়ে দেখা যায়, দুই পুলিশ কনস্টেবল মোঃ খোকন মিয়া ও সাথী আক্তার ডিজিটাল পদ্ধতিতে পুলিশি সেবার বিষয়গুলো সম্পকে জনগনকে উদ্ধুদ্ধ করতে কাজ করছেন।
মেলার ৪৩নং স্টলে কাজ করছে জয়দেবপুর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা।
স্টলের দায়িত্বে থাকা জয়দেবপুর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী গ্রন্থাগারিক জেবুন্নেছা বেগম জানান, তাদের প্রতিষ্ঠান মেলায় ২০টি প্রজেক্ট তৈরী করেছে। প্রেজেক্টগুলোতে অংশ নিয়েছে ৭০জন শিক্ষাথী। প্রজেক্টগুলো হল, ভাসমান পাক, সোলার প্যানেল, পাহাড়ী রাস্তার অদৃশ্যবাঁক, বায়ু শক্তির সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন, লেমন ব্যাটারী অন্যতম।
প্রকল্প: সোলার প্যানেল দিয়ে কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে পানি পরিশোধন
জয়দেবপুর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর ছাত্রী ইজা, মারিয়া, মনিরা, মাহিন, আঁখি ও শান্তনা জানায়, সূয্যের সাহায্যে সোলার বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে তারা। প্রকল্পের পদ্ধতি বননা করতে গিয়ে হাতে কলমে কাজ করতে করতে ক্ষুদে উদ্ভাকেরা জানায়, বিদ্যুৎ উৎপাদন করে ব্যাটারীতে জমা রাখা হয়। কখনো সূয্য না উঠলে তা হলে বাতাসের সাহায্যে উইন্ডমিল ব্যাটারীর মধ্যে বিদ্যুৎ জমা করা হয়। বিভিন্ন কারখানার ময়লা পানি ইটিপির সাহায্যে পরিশোধিত হয়। এর পরে ফিল্টারাইজ করে পানি পাওয়া যায়। পরে গরম পানির দরকার হলে ওয়াটার হিটারের সাহায্যে ও ঠান্ডা পানির প্রয়োজনে ওয়াটার কোলারের সাহায্যে বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যায়।
প্রকল্পের সুবিধাদি বননা করে তারা বলেন, সোলার প্যানেলের মাধ্যমে এই পদ্ধতিতে প্রাপ্ত পানি বিদ্যুৎ খরচ হয় না। আলাদা লাইনে বিদ্যুৎ আনতে হয় না। প্যানেল ও উইন্ডমিল ছাদের উপরে ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি মাটির নীচেও স্থাপন করা যায়। এতে জায়গাও কম লাগে। আবার আলাদাভাবে পানির লাইনও স্থাপন করতে হয় না।
মেলায় ৪৪ নং স্টলে অবস্থান করছে রাণী বিলাসমনি সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ছেলেরা। ১৯টি প্রজেক্টে ৪০ শিক্ষাথী অংশ গ্রহন করছে। ফ্রি এনাজি, উইন্ডমিল, ওয়াটার ক্রেন, জরুরী বিদ্যুৎ, রেলওয়ে সেফটি সহ ১৯টি প্রজেক্ট তাদের।
শিক্ষাথী তানভীর মাহমুদ রুমী জানায়, লেবু, আলো, আনারস, কলমা ও আপেল দিয়ে তারা বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে।
একই কথা বলেছে মফিজ উদ্দিন খান উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর ছাত্র মোঃ জিহাদুল ইসলাম। এই স্কুলের সহকারী শিক্ষক মাহমুদা বেগম জানালেন, তাদের স্কুলের ২৫ জন শিক্ষাথী ৫টি প্রজেক্টে কাজ করছে।
এ ছাড়াও গাজীপুর সিটি কপোরেশন, সালনা নাসির উদ্দিন মেমোরিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ, ডিয়ার জুলিয়াস ডটকম. গাজীপুর স্বাস্থ্য বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট সহ বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী দপ্তর ও প্রতিষ্ঠান স্টল নিয়েছে।
মেলা দেখতে আসা দশক বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রিয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মনোয়ার হোসেন রনি জানান, ডিজিটাল মেলায় সব ধরণের স্টল রয়েছে। নদী, প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় ডিজিটাল পদ্ধতির কি কি প্রক্রিয়া রয়েছে, কি কি প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করা যায় বা প্রকৃতি রক্ষায় আধুনিক সুবিধাগুলো কি কি তা জনগনকে জানানোর জন্য পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোকে আমন্ত্রন জানানো উচিত ছিল। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সম্পতি নেপালে একটি পরিবেশবাদী সেমিনারে অংশ নেয়া এই পরিবেশবিদ বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে পরিবেশবাদীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অনেক গুরুত্ব দেয়া হয়। বাংলাদেশে এটা এখনো শুরু হয়নি।
একই ধরণের অভিযোগ করেছেন, দেশ বিদেশে বিভিন্ন সেমিনার ও টিভি টকশোতে অংশ নেয়া পরিবশেবিদ নদী পরিব্রাজক দলের নেতা মনির হোসেন ও ভাওয়াল গড় বাঁচাও আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক ডাঃ বোরহান উদ্দিন অরণ্য। তাদের অভিযোগ, সরকারী ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত এ ধরণের মেলায় পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোকে আমন্ত্রন জানানো খুবই জরুরী।