বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে সীমিত আকারে আদালত খোলা ঝুঁকিপূর্ণ হবে

Slider জাতীয় বাংলার আদালত বাংলার মুখোমুখি

ঢাকা: করোনাভাইরাসের মহা দুর্যোগে এবং লকডাউন পরিস্থিতিতে সীমিত আকারে আদালত খুলে রাখা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হবে। এতে বিচারপ্রার্থীরা হাইকোর্টে এসে তাদের মামলার নিষ্পত্তির জন্য উপস্থিত হবে। এতে লকডাউন ভেঙে যাবে। সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা হবে না। জাতীয় স্বার্থে এটা পরিহার করা উচিত বলে আইনবিদরা মনে করেন।

একই সঙ্গে তারা মনে করেন, লকডাউনের কারণে আদালত বন্ধ থাকায় অনেক আইনজীবী কষ্টে মধ্যে পড়েছেন ।মিডিল ক্লাস এবং জুনিয়র আইনজীবীদের এখন অর্থনৈতিক সমস্যা প্রকট। এঅবস্থায় নবীন, সমস্যাগ্রস্ত এবং অসুস্থ আইনজীবিদের অবিলম্বে বার কাউন্সিল থেকে এককালীন সহায়তা বা ঋণ প্রদান করার দাবি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে প্রবীণ আইনজীবী ও সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, সীমিত আকারে আপিল বিভাগে চেম্বার কোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগে একটি বেঞ্চ খোলা রাখার যে সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। বর্তমান দেশের করোনা পরিস্থিতিতে এটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হবে। এতে যারা বিচারপ্রার্থী আছেন তারা সবাই হাইকোর্টে এসে তাদের মামলার নিষ্পত্তির জন্য উপস্থিত হবে। এক্ষেত্রে সীমিত আকারে বিচারপ্রার্থীদের সমাবেশ আর সীমিত থাকবে না। এই মুহূর্তে সিদ্ধান্ত না নিয়ে আমাদের কিছুটা অপেক্ষা করা উচিত। তিনি বলন, আমাদের উচ্চা আদালতে যারা বিচারক আছেন। তাদের অনেকেরই মামলার শুনানি শেষে অনেক মামলার রায় প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। এই অবসর সময়ে তারা রায় লেখা সমাপ্ত করতে পারেন। এতে আদালতের উপর চাপ কমে যাবে।

তিনি আরো বলেন, আদালতের দীর্ঘ ছুটির কারণে যেসব নবীণ ও সমস্যাগ্রস্ত আইনজীবী আর্থিক অসচ্ছলতায় আছেন তাদেরকে অবিলম্বে বার কাউন্সিল থেকে এককালীন সহায়তা বা বিনা সুদে ঋণ প্রদান করা হোক।
এ বিষয়ে গণতন্ত্র ও খালেদা জিয়ার মুক্তি আইনজীবী আন্দোলনের চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, লকডাউন পরিস্থিতিতে সীমিত আকারে আদালত খোলা রাখা একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে। এতে একটি কোট দেয়া হয়েছে যেখানে সিভিল ক্রিমিনাল ও রিট দেখবে। বেলা ১১টা থেকে ১ টা পর্যন্ত আদালত বলবে। এতে কোনো কাজের কাজ হবে না বরঞ্চ লকডাউন ভেঙে যাবে। সব মানুষ ও আইনজীবী কোর্টে যাবেন এতে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা হবে না। আমি মনে করি এটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত এবং এটা পরিহার করা উচিত।

তিনি আরো বলেন, যারা রাজনৈতিক কারণে আটক আছেন বা বিনা বিচারে আটক আছেন। সরকার এই করোনা পরিস্থিতিতে তাদের প্রতি সদয় হয়ে প্রশাসনিক আদেশে মুক্তি দিতে পারেন। শর্ত সাপেক্ষে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রশাসনিক আদেশ সরকার তাদের মুখে দিতে পারেন। তিনি আরো বলেন সস্তা জনপ্রিয়তার জন্য সীমিত আকারে আদালত খুলে রাখা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে। জাতীয় স্বার্থে এটা পরিহার করা উচিত।

সমস্যাগ্রস্ত আইনজীবিদের সহায়তা দেয়ার দাবি : লকডাউন পরিস্থিতিতে আইনজীবী কষ্টে আছেন উল্লেখ করে বাংলাদেশ জাতীয় আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহ মো: খসরুজ্জামান বলেন, আইনজীবীরা ডেইলি লেবার এর মত। লেবার যেমন কাজ করলে টাকা পায়। আইনজীবীরা তেমোন কোর্টে গেলে মক্কেলের পক্ষে মামলা করলে ফ্রি পান। আইনগত সহায়তার বিনিময়ে কিছু আর্থিক সহায়তা পান। এখন কোর্টে যেতে না পারলে শ্রমিকের মতো তাদেরও আয় থাকে না।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আক্তারুজ্জামান বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন আদালত বন্ধ থাকায় আইনজীবিদের অর্থনৈতিক সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। এই অবস্থায় সিনিয়র আইনজীবীদের হাতে কিছু জমানো অর্থ গচ্ছিত থাকলেও মিডিল ক্লাস এবং জুনিয়র আইনজীবীদের অর্থনৈতিক সমস্যা প্রকট। আদালত খোলা থাকলে তারা আয় করে সেই অর্থ দিয়ে বাজার করে বাসায় ফেরেন। প্রতিদিনের খরচ প্রতিদিন করেন। এভাবেই তাদের দৈনন্দিন জীবন চলে। তিনি বলেন, সরকার যেহেতু বিভিন্ন জায়গায় প্রণোদনা দিচ্ছে। আদালত বন্ধ থাকায় আইনজীবীরাও সমস্যায় পড়েছেন তাই তাদেরও প্রণোদনা দিতে পারেন।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আইয়ুব আলী আশ্রাফী বলেন, খোলা না থাকায় আইনজীবী এবং বিচারপ্রার্থী উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিচারপ্রার্থীরা বিচার পাচ্ছেন না। এখন দুটি কোট খোলা হয়েছে চেম্বার জজ হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। জামিনের সব বিষয়ে জরুরি তবে জামিনের জন্য ক্লায়েন্ট এবং আইনজীবী আদালতে যেতে হবে। কিন্তু যানবাহন নেই মানুষের যাতায়াতের সমস্যা আইনজীবীরা আদালতে উপস্থিত থাকতে পারর বিষয় রয়েছে। সব মিলে এখন কোট না খোলাই ভালো।

উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সুপ্রিম কোর্ট সহ সকল অধঃস্তন আদালতে৫ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। এসময়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে চেম্বার কোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগে একটি বেঞ্চ খোলা রেখে অতীব জরুরি বিষয়গুলো নিষ্পত্তিতে সিদ্ধান্ত নেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *