সরিষা ফুলের খোঁজে…

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি


হাসানুজ্জামান হাসানঃ তখন সকাল সাড়ে ৬টা ভোরের বিন্দু বিন্দু শিশির তখন হলুদ ফুলের শরীরজুড়ে। সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে মুক্তার মতো ঝিকমিকে শিশির কণা গড়িয়ে নামে। সকালের রোদে ঝলমল করতে থাকে মাঠভর্তি হলুদ সরিষা ফুল। যতদূর চোখ যায় কেবল হলুদ আর হলুদ। যেন সবুজ মাঠজুড়ে আগুন লেগেছে! ধীরে ধীরে বেলা গড়িয়ে নামে বিকেল। বিকেলের ‘কন্যাসুন্দর’ আলোয় হলুদ ফুলগুলোর রূপ যেন আরেকটু খোলে। মিষ্টি বাতাসে দুলে ওঠে ফুলের ডগা। ফিরে আসতে শুরু করে শিশিরের দল। জমিয়ে বসে ফুলে।

শীতের সকালে শিশির ভেজা ফসলের মাঠের এমন সৌন্দর্য দেশের উত্তরের জেলা লালমনিরহাটের কাকিনা এলাকায় দেখা যায়।

স্থানীয়রা বলেন, মৌসুমটা এখন সরিষার! এ সময় আমরা শরিষা চাষাবাদ করি।

শীতের রিক্ততায় রং ও প্রাণের স্পন্দন নিয়ে আসে সরিষা ফুল। দিগন্ত বিস্তৃত হলুদ সরিষা ফুলে সেজে উঠেছে প্রকৃতি। নাগরিক জীবনে হাঁপিয়ে উঠলে একটু সময় করে হলুদের রাজ্য থেকে ঘুরে আসতে পারেন।

তাই গ্রামের মাঠের পর মাঠ সরিষার আবাদ হয়েছে। হলুদে ছেয়ে গেছে আদিগন্ত ফসলের ক্ষেত।

মাঠজুড়ে তাই ফুলের মধু আহরণে ব্যস্ত মৌমাছির গুনগুনিয়ে ফুল থেকে ফুলে উড়ে বেড়াচ্ছে।

দৃষ্টিনন্দন সরিষার ক্ষেতশীতের সকালে মাঠজুড়ে শর্ষে ফুলের হলুদ চাদরের মোহনীয় দৃশ্য উপভোগ করতে আলো ফোটার আগেই ফসলের মাঠের উদ্দেশে যাওয়া।

তখন সকাল সাড়ে ৬টা। শর্ষে ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায় হিম কুয়াশায় মোড়ানো। এর পর বেলা তখন ৭টা। ঘোর-লাগা কুয়াশা অনেকখানিই বিদায় নিয়ে সূর্য উঁকি দিচ্ছে পুব আকাশে। দুই চোখ হলুদাভ উজ্জ্বল রঙে ডুবে গেলো। যেন তেন হলুদ নয়, একবারে স্বর্ণাভ হলুদ। সরিষা ক্ষেতের সেই হলুদ রং যেন আকাশে মিশেছে, সঙ্গে কচি সরষে ফুল দুলছে উত্তুরে হাওয়ায়।

ফুল তুলতে আসা শিশু-কিশোরদের দেখা যায়,ক্ষেতের আইল ধরে হাঁটছে তারা ফুল যাতে নষ্ট না হয়।ফুল তুলে নিয়ে গিয়ে তারা কেউ পিঠার সাথে মিশিয়ে খাবে, কেউ বা ডিম ভাজবে শর্ষে ফুল দিয়ে।শিশু-কিশোররা যেন হারিয়ে গেছে শর্ষে ফুলের রাজ্যে!সকাল হলেই বের হয়ে আসে শর্ষে ক্ষেতে। তাদের এক অন্যরকম অনুভূতি।দল বেধে এসে ফুল তুলে বাড়িতে নিয়ে যায়।

ধীরে ধীরে সরিষা ক্ষেতের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে চোখ জুড়িয়ে যায়। নাকে আসতে থাকে সরিষার সৌরভ। সেই সৌরভে রয়েছে ভিন্ন ধরনের এক মাদকতা। সম্ভবত সেই মাদকতার কারণেই মৌমাছিরা ভিড় জমায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *