লাশ কাটাঘরে ১২ থেকে ২০ বছর বয়সী নারীদের লাশ ধর্ষণ করতো মুন্না

Slider টপ নিউজ

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লাশ কাটাঘরে (মর্গ) মুন্না ভগত নামে এক যুবক গত এক বছরে ৬ জন মৃত নারীকে ধর্ষণ করেছে। শুক্রবার সিআইডি সদর দফতর থেকে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয় নারী ধর্ষণের অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ব্রিফিংয়ে সিআইডি জানায়, মুন্নার ডিএনএ প্রোফাইল মিলে যাওয়ায় মৃতদেহের ওপর সে যে বিকৃত যৌনাচারের করেছে সেটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ হয়েছে। আসামিকে আদালতে পাঠিয়ে আরো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন জানানো হবে।

এ ঘটনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ সহকারী মো. সেকান্দর আলী ও স্যার সলিমুল্ল্যাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ সহকারী (ডোম) শ্যামল জানান, ঘটনাটি একটি ন্যাক্কাজনক ঘটনা। এ ঘটনার জন্য মুন্নার সার্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন।

তারা বলেন, দেশ স্বাধীনের পর থেকে মর্গে এধরনে ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে নেই। ময়নাতদন্তে জন্য যে সব নারীর মরদেহ মর্গে রাখা হতো তাদের স্বজনরা মর্গে লোকজনদের ওপর বিশ্বাস করে আসছিলেন। এখন মুন্না যে ঘটনাটি ঘটিয়েছে তার কারণে মরদেহের স্বজনরা এখন বিশ্বাস হারিয়ে ফেলবে।

ঢামেক হাসপাতালের মর্গ সহকারী সেকান্দর আলী জানান, আমি ৩০/৩৫ বছর যাবত হাজার হাজার লাশ কাটাকাটির কাজ করে আসছি। কিন্তু কোন দিন এ ধরণের কর্মকাণ্ড আমার মধ্যে কোন ক্রমে প্রকাশই পায়নি। এই ধরনে মন মানসিকতাও আমার ভেতরে কোন সময় আসেনি। নারীদের ময়নাতদন্তে জন্য কয়েক কয়েক দফা মহিলা ডাক্তার সরকারী ভাবে নিয়োগ দিলেও কিছুদিন কাজ করার পর তারা আর কাজ করতে রাজি হয়না। কারণ মর্গের দূর্গন্ধ তাদের কাছে সহ্য হয় না। আমরা অনেক বার কর্তৃপক্ষের কাছে মৌখিক ভাবে নারীদের ময়না তদন্ত জন্য নারী ডাক্তার ও নারী ডোম চেয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা সমাধান করেননি কর্তৃপক্ষ। ফরেনসিক বিভাগে যে কয়জন নারী ডাক্তার রয়েছেন তারা ময়না তদন্ত করতে আসেন না। উনারা শুধু নির্যাতিত বা ধর্ষণ রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকেন।

এ ব্যাপারে মিটফোর্ড হাসপাতালের ডোম শ্যামল বলেন, মুন্না যে কাজটি করেছে তা একটি ন্যাক্কারজনক। আমি তার মৃত্যাদন্ড চাই। আমি শত-শত লাশের দেহ কাটাকাটি করে আসছি কোনদিন এ ধরনে কর্মকাণ্ড মনের ভেতরে আসেনি। তার জন্য এখন আমাদের মান সম্মান নিয়ে টানাটানি মধ্যে পড়েছি। রাজধানীর তিনটি সরকারী হাসপাতালে ময়না তদন্ত করা হয়। সে গুলোতে নারী ডাক্তার ও নারী ডোম নেই।

উল্লেখ্য, ছয় নারীর এইচভিএসে (হাই ভ্যাজাইনাল সোয়াব) মুন্নার ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। লাশগুলো আত্মহত্যাজনিত কারণে মৃত ছিল। ১২ থেকে ২০ বছর বয়সের মধ্যে তুলনামূলক ভালো লাশ এলেই মুন্না ধর্ষণ করতো বলে সিআইডি কর্মকর্তারা জানিয়েছে।

কর্মকর্তারা বলেন, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গের ডোম সহকারী হিসেবে প্রায় ৪ বছর ধরে কাজ করছে মুন্না। শুরু থেকে মর্গেই থাকে সে। ময়নাতদন্তের আগে লাশ রাতে পাহারা দেওয়ার সময় এই কাজে লিপ্ত হতো সে। সিআইডি কর্মকর্তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মুন্না তার এসব অপকর্মের কথা স্বীকার করেছে।

২০১২ সালে বাংলাদেশ পুলিশের প্রথম ডিএনএ ল্যাব স্থাপিত হয়। ল্যাব স্থাপনের পর হতে ধর্ষণ ও হত্যাসহ আদালতের নির্দেশে প্রেরিত সব আলামতের ডিএনএ পরীক্ষা ও প্রোফাইল তৈরি করে সিআইডি। গত বছরের মার্চ থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ কয়েকটি নমুনা পাঠিয়েছিল সিআইডিকে। সেখানে মৃত নারীর এইচভিএসে পুরুষ বীর্যের উপস্থিতি পাওয়া যাওয়ায় পূর্ণাঙ্গ ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি করার চেষ্টা করে তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিআইডির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘কোডিস (CODIS) সফটওয়্যার আমরা সার্চ দিয়ে দেখি। মোহাম্মদপুর ও কাফরুল থানার কয়েকটি ঘটনায় প্রাপ্ত ডিএনএ’র প্রোফাইলের সঙ্গে একই ব্যক্তির ডিএনএ বারবার ম্যাচ করছে। যেটা অনেকটাই অস্বাভাবিক ছিল। ধারণা করা হয়, একজন ব্যক্তি কর্তৃক ধর্ষণ পরবর্তী হত্যা অথবা ধর্ষণজনিত কারণে আত্মহত্যা হয়েছে। কিন্তু মরদেহগুলোতে কোনও আঘাতের চিহ্ন ছিল না।

সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা তখন মনে করি, কোনও না কোনোভাবে ভিকটিমদের মৃতদেহের ওপরে কোনও ব্যক্তির বিকৃত যৌন লালসা চরিতার্থ হয়েছে। প্রতিটি মৃতদেহ মর্গে আনার পর তার মৃত্যুর কারণ জানতে ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ বিশ্লেষণ করা হয়। সব লাশই ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রেখে দেওয়া হয়। সেখানে বেশ কয়েকজন ডোম নিয়মিত পাহারা দিতো। কিন্তু এই লাশগুলোর ক্ষেত্রে একজন ডোম সহকারী নিয়মিত ডিউটিতে থাকতো। প্রাথমিকভাবে তাকে সন্দেহ হয় আমাদের। পরবর্তীতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বাইরে নিয়ে গিয়ে কথা বলার নামে, চা খাওয়ার ছলে তার ডিএনএ সংগ্রহ করি আমরা। সেটা সিআইডি ল্যাবে নিয়ে এসে বিশ্লেষণ করলে ওই ৬ মরদেহের ডিএনএ’র সঙ্গে ম্যাচ করে। তখন শতভাগ নিশ্চিত হয়ে তাকে গ্রেফতারে অভিযান চালায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *