ঢাকা স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইসেন্স নেই, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ। নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধাও। মানসিক রোগ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্স নেই। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামেরও অভাব। চিকিৎসার নামে অভিভাবকদের অনুপস্থিতিতে চলে শারীরিক নির্যাতন। মানসিক রোগী বলে তারা কারো কিছু বলতেও পারেন না, চিকিৎসার নামে প্রিয়জনদের নির্যাতন করা হয়েছে- অভিভাবকরা তা জানতেও পারছেন না।’ এভাবেই চলে দেশের মানসিক চিকিৎসার হাসপাতালগুলো। কিভাবে চলে, কর্তৃপক্ষ কি জানে না এসব কিছু? উত্তর হলো- যে কর্তৃপক্ষ মাঝে মাঝে পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে বিরাট মহড়া দেন তাদেরকে ম্যানেজ করেই এসব মানহীন হাসপাতাল নামের টর্চার সেলগুলো চলছে বছরের পর বছর। বিসিএস পুলিশ অফিসার ‘আনিসুল করিমকে হত্যা করা হয়েছে নির্যাতন করে’ এটি আলোড়ন সৃষ্টি করেছে দেশব্যাপী। তিনি পুলিশের অফিসার বলে হয়তো সবার নজর কেড়েছে। কিন্তু সব টর্চার সবার নজর কাড়ে না, সবাই জানতেও পারেন না।
এসব হাসপাতাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের অথবা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অনুমতিও পেয়ে যায়। ডাক্তার, নার্স, যন্ত্রপাতি না থাকলেও যে এসব হাসপাতালের অনুমোদন দেয়া হয়, তাও সব সময় সঠিক নয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, লাইসেন্স দেয়ার আগে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে যখন কোনো টিম পরিদর্শনে যায় তখন এসব হাসপাতালের মালিকরা ভাড়া করে চিকিৎসক-নার্সও আনে। এমনকি প্যাথলজিস্ট, টেকনিশিয়ান এবং যন্ত্রপাতিও ভাড়ায় নিয়ে আসে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এমনভাবে সবাইকে দেখানো হয় যে বোঝার উপায় থাকে না যে, ‘এসব জনবল ও সরঞ্জাম বাইরে থেকে আনা হয়েছে।’ তা ছাড়া লাইসেন্স পেতে স্পিড মানিতো রয়েছেই। তবে কিছু ক্লিনিক মালিক জানিয়েছেন, তারা লাইসেন্স পেতে সরকারের প্রচলিত ফি’র বাইরে বাড়তি মোটা অঙ্কের টাকাও দেন বড় বড় পদে যারা আছেন তাদেরকে। কিভাবে বছরের পর বছর এসব লাইসেন্সবিহীন হাসপাতালে চল এমন প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা জানান, ‘লাইসেন্স ছাড়া অবৈধ ক্লিনিক চলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মাঠ পর্যায়ের পরিদর্শন টিমের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহায়তায়। এদের কাছে সব হাসপাতালের তথ্য আছে। কাদের লাইসেন্স নেই তা-ও এরা জানেন। কিন্তু অর্থের বিনিময়ে সবাই ‘ম্যানেজ’ হয়ে যায়।
এ ব্যাপারে হাসপাতাল সার্ভিসেসের পরিচালক ফরিদ হোসেন বলেন, ‘তাদের লোকবলের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। লোকবলের অভাবে হাসপাতালগুলো পরিদর্শন করা সম্ভব হয় না। এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, তার অধীনে দুইজন মেডিক্যাল অফিসার, তিনজন সহকারী পরিচালক, তিনজন উপপরিচালক কাজ করছেন এবং তিনি পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন। এই অল্প কয়েকজন লোক দিয়ে শত শত হাসপাতাল ও ক্লিনিক তত্ত্বাবধান করা সম্ভব হয় না। লোকবল বাড়ানোর জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের প্রস্তাব বিবেচনা করা হচ্ছে না।’
শ্যামলীর মাইন্ড হাসপাতাল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মাইন্ড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ১০ বেডের হিসাবে অনুমোদনের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরে আবেদন করে। কিন্তু হাসপাতাল পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই তাদের ছিল না বলে তাদের লাইসেন্স দেয়া হয়নি। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, চিকিৎসক ও সরঞ্জাম থাকা সাপেক্ষে তাদের লাইসেন্স দেয়া হবে বলে জানিয়ে দেয়া হয় কিন্তু তারা যথাযথ অনুমোদন না নিয়ে হাসপাতাল পরিচালনা করে।
ঢাকা শহরে এমন মানহীন হাসপাতালের সংখ্যা অনেক। ঢাকার চারদিকে শহরতলীতে এর পরিমাণ আরো অনেক বেশি। মোহাম্মদপুরের নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা মানসিক ও মাদকাসক্ত হাসপাতালতো লাইসেন্স ছাড়াই কাটিয়ে দিয়েছে ৫-৭ বছর। ম্যাজিস্ট্রেট সিলগালা করে দিয়ে গেলেও আবার চালু হয়। আবার হুমায়ুন রোডের মালিহা হাসপাতালের মালিককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং এক সপ্তাহের মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল ভ্রাম্যমাণ আদালত। কিন্তু এই হাসপাতালটি আবারো চালু করা হয়েছে এমন উদাহরণ অনেক।