তীব্র লড়াই শেষে বিহারে আবার নীতীশই

Slider ফুলজান বিবির বাংলা


আইপিএল ফাইনালে খেলছে দিল্লি বনাম মুম্বই। মঙ্গলবার এই টি-২০ ম্যাচের উত্তেজনাকেও হারিয়ে দিয়েছে বিহারের ভোটগণনা। টানটান টেনশন, হাড্ডাহাড্ডি লড়াই—সাম্প্রতিককালে ভারতের কোনো নির্বাচনেই দেখা যায়নি। একমাস আগেও ধরে নেয়া হয়েছিল বিজেপি জোট এবার অনায়াসে জয়ী হবে। চতুর্থবারের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসবেন নীতীশ কুমার। কিন্তু নির্বাচন এগিয়ে আসতেই দেখা যায়, নতুন এক নেতার আবির্ভাব ঘটেছে। লালুপ্রসাদ যাদবের উত্তরসূরি হিসেবে উঠে এসেছেন তারই পুত্র তেজস্বী।

গত শনিবার একাধিক এক্সিট পোলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল, সরকার গড়ছেন তিনিই। কয়েকটি এক্সিট পোল অবশ্য জানিয়েছিল, ত্রিশঙ্কু হতে চলেছে বিহার বিধানসভা। কিন্তু মঙ্গলবার সব হিসাব উল্টে দিয়ে মোদি-ম্যাজিকই পুনরায় চালকের আসনে বসেছে। অন্তত আসন প্রাপ্তির বিচারে। সরকার গড়ার দৌড়ে গভীর রাত পর্যন্ত এগিয়ে মোদি ও নীতীশ কুমারের এনডিএ। চূড়ান্ত ফল ঘোষণার আগেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ফোন এসে গেছে নীতীশের কাছে। জয়ের ঘোষণাও করেছেন শাহ। রাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ট্যুইটারে বিহারের জনগণ এবং দলীয় কর্মীদের অভিনন্দন বার্তা জানিয়েছেন। বলেছেন, প্রত্যেক বিহারবাসীর স্বার্থে কাজ করবে এনডিএ সরকার। যদিও গরিষ্ঠতার সংখ্যায় বিজেপি জোটের ভাগ্য ঝুলছে সুতোর উপরে। গভীর রাত পর্যন্ত তারা ১১৬টি আসনে জয় পেয়েছে। এগিয়ে রয়েছে ৯টিতে। তেজস্বী যাদবের জোট জয়ী হয়েছে ১০৬টিতে। এগিয়ে আরও ৪টিতে। যদিও রাতেই ১১৯টি আসনে জয়ের দাবি তোলে আরজেডি। রিটার্নিং অফিসারদের বিরুদ্ধে সেই ফল চেপে রাখার অভিযোগও জানায়। তবে, তাকে মান্যতা দেয়নি নির্বাচন কমিশন।

সকাল থেকে এনডিএ এগিয়ে থাকলেও, হঠাৎ বিকেলের পর তেজস্বী যাদবের জোটের আসন প্রাপ্তি বাড়তে থাকে। মাঝেমধ্যেই টক্কর চলছিল সমানে সমানে। রীতিমতো দড়ি টানাটানি চলে গরিষ্ঠতার ম্যাজিক নম্বর ১২২ স্পর্শ করার ক্ষেত্রে। তবে বিজেপি নয়, বিহারে সরকার বাঁচানোর লড়াইয়ে সবথেকে বড় ধাক্কা খেয়েছেন নীতীশ কুমার। তার দলের প্রাপ্ত আসন কমে যাওয়াই বিড়ম্বনায় ফেলেছে এনডিএ-কে। ২০১৫ সালের থেকেও এককভাবে বেশি আসনে জয়ী হয়েছে বিজেপি। ফলে মহারাষ্ট্রের পর এবার বিহারেও নরেন্দ্র মোদির দল রাজ্যভিত্তিক এনডিএ-তে ছোট শরিক থেকে বড় শরিকে পর্যবসিত হয়ে গেল। তবে একক বৃহত্তম দল হয়ে তেজস্বী যাদবের আরজেডি টেক্কা দিয়েছে বিজেপিকে। জোটসঙ্গী কংগ্রেসের খারাপ পারফরম্যান্স অবশ্য তাকে প্রথম থেকেই পিছিয়ে দিয়েছে। রাহুল গান্ধীর দল যদি সমানভাবে লড়াই দিত, তাহলে তেজস্বীর মহাজোটের রাস্তা অনেক সুগম হতো। মধ্যপ্রদেশ থেকে গুজরাত— কোথাও লড়াইয়ে নেই কংগ্রেস। ৫৯ আসনে উপনির্বাচনে বিজেপি একাই ৪০ আসনে জয়ী। মধ্যপ্রদেশে সিংহভাগ কেন্দ্রে জিতে সরকার বাঁচালেন শিবরাজ সিং চৌহান।

তবে বিহারে ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছে দু’টি ছোট দল। ভোটব্যাংক ছিনতাই করে তারা বিপদে ফেলেছে যুযুধান দুই জোটকে। চিরাগ পাসোয়ানের লোক জনশক্তি পার্টি ৬ শতাংশ ভোট পেয়ে এনডিএ-কে বহু আসনে হারিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে, হায়দরাবাদের নেতা আসাউদ্দিন ওয়াইসির দল মুসলিম প্রধান সীমাঞ্চলে মহাজোটের ভোটব্যাংক হাতিয়ে একঝাঁক কেন্দ্রে তেজস্বীর যাত্রাভঙ্গ করেছেন।

এবারের ভোট থেকে স্পষ্ট, আগামী দিনে বিহারে প্রধান দু‌ই প্রতিপক্ষ হতে চলেছে আরজেডি ও বিজেপি। ৩১ বছরের তেজস্বীই এবার বিহার ভোটের আবিষ্কার বলা যেতে পারে। তিনি শেষ পর্যন্ত মিরাকল দেখাতে না পারলেও, একাই সেনাপতি হিসেবে নীতীশ কুমার ও নরেন্দ্র মোদির মতো মহাশক্তিধর রাজনৈতিক জোটের সঙ্গে টক্কর দিয়েছেন। ঠিক একইভাবে প্রমাণিত হলো, আজও এনডিএ-র ত্রাতা নরেন্দ্র মোদি।
বিহারে বিজেপি জোটকে এভাবে শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ে টিকিয়ে রেখে সরকার গড়ার কাছে নিয়ে যাওয়ার অন্যতম কৃতিত্ব তার। অন্তত রাহুল গান্ধীর সঙ্গে প্রচারের লড়াইয়ে আবার জয়ী হলেন মোদিই। কারণ, রাহুলের উপস্থিতি কোনো কাজে লাগেনি তেজস্বীর। বিহারে সামান্য ব্যবধানে হলেও সরকার গড়তে মরিয়া ছিল বিজেপি। কারণ একটাই। পরপর পাঁচ রাজ্যে পরাস্ত হওয়ার পর মনোবল ও আত্মবিশ্বাস বাড়ানো। যা নিয়ে ঝাঁপাতে হবে পরবর্তী লক্ষ্যে। সেই টার্গেটের নাম পশ্চিমবঙ্গ!

সূত্র : বর্তমান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *