পুরান ঢাকায় আধিপত্য বিস্তারে নিজস্ব গ্যাং বাহিনী ছাড়াও ইউনিফরমধারী নিরাপত্তারক্ষী ছিল গ্রেপ্তার হওয়া কাউন্সিলর ইরফান সেলিমের। তাদের হাতে থাকতো অস্ত্র। এ ছাড়াও ইরফানের বাসা থেকে র্যাব উদ্ধার করেছে ২টি আগ্নেয়াস্ত্র, ১টি এয়ারগান ও গুলি। তার এবং নিরাপত্তারক্ষীদের কাছে থাকা অস্ত্রগুলো বৈধ কিনা তা রিমান্ডে ডিবি পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কিছু জানাতে পারেননি ইরফান। এসব অস্ত্র কোথায় থেকে আসলো এবং তা বৈধ কিনা তার অনুসন্ধান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যাদের কাছে ওইসব অস্ত্র থাকতো তারা ইরফানের গ্রেপ্তার হওয়ার পর লাপাত্তা হয়ে গেছে। পুলিশের ধারণা, ইরফান চোরাকারবারিদের কাছ থেকে অস্ত্র সংগ্রহ ও সহযোগীদের বিতরণ করেছেন। ৩ দিনের রিমান্ড জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছে এমন আরো তথ্য পাওয়া গেছে।
আরো বিস্তারিত তথ্য জানতে তাকে আরো ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
সূত্র জানায়, প্রায় ১৫ দিন পর পর ইরফান লং ড্রাইভে যেতেন। এটা তার এক ধরনের নেশা ছিল। লং ড্রাইভে তিনি নিজেই গাড়ি চালাতেন। গাড়িতে কোনো বডিগার্ড থাকতো না। তবে তাকে প্রটেকশন দেয়ার জন্য পেছনে একটি গাড়ি থাকতো। তার এ লং ড্রাইভে প্রায় সময় সঙ্গী হতেন সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত এক নায়িকা যিনি একাধিক ফ্ল্যাট এবং দামি গাড়ি কিনে আলোচনায় এসেছেন। ইরফান গ্রেপ্তার হওয়ার পর তিনি চুপসে গেছেন। ৩ দিনের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি শুধু একটিই কথা বলেছেন, নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে পিটিয়ে আহত করার ঘটনায় তার বডিগার্ড জাহিদুল মোল্লা জড়িত। তিনি তাকে মারধর করেননি। তিনি বার বার এ ঘটনার দায় এড়ানোর চেষ্টা করেছেন। অথচ নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ অভিযোগ করেছেন যে, ইরফান তাকে মারধর করেছেন। ইরফান নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ওয়াসিফকে ঘটনার কোনো দায় নিতে চাওয়ার কারণে ডিবি পুলিশ তাকে আদালত হাজির করে রিমান্ডের প্রার্থনা করেন। আদালত তাকে এবং তার দুই সহযোগীকে আরো ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত ২৫শে অক্টোবর রাতে নিউমার্কেট থেকে স্ত্রীকে নিয়ে বই কিনে মোহাম্মদপুরের বাসায় ফিরছিলেন নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ। মোটরবাইকে ধাক্কা দেয়ার প্রতিবাদ করার কারণে ইরফান ও তার সঙ্গে থাকা বডিগার্ড ও গাড়িচালক ওয়াসিফ এবং তার স্ত্রীকে মারধর করেন। একাধিক পথচারীরা এ দৃশ্য ভিডিও ধারণ করেন যা মুহূর্তেই সারা দেশে ভাইরাল হয়ে যায়।
এ ঘটনায় ভিকটিম ধানমণ্ডি থানায় একটি মারধর এবং হত্যাচেষ্টার মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ইরফান সেলিম, তার দেহরক্ষী জাহিদুল মোল্লা ও নিরাপত্তারক্ষী এবি সিদ্দিক দীপুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ধানমণ্ডি থানা পুলিশ তাদের আদালতে হাজির করলে আদালত তাদের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার তদন্তের মুখ্য সমন্বয়কারী ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের রমনা জোনের ডিসি এইচএম আজিমুল হক গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানান, ‘রিমান্ডে ঘটনার মূল বিষয়টি আমরা জানার চেষ্টা করছি। আসামিদের কাছে আরো বেশি বিস্তারিত জানার জন্য তাদের রিমান্ডে আনা হয়েছে।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ধানমণ্ডি থানা সূত্রে জানা গেছে, ইরফান বিভিন্ন স্থানে পার্টি দিতেন। আসর জমাতে তিনি তার বান্ধবী এবং একাধিক মডেলকে ওই পার্টিতে নিমন্ত্রণ জানাতেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য এক নায়িকা রয়েছে।