বৃষ্টিতে পানির নিচে দক্ষিণাঞ্চল দুর্ভোগ

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি


ঢাকা:বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে দু’দিনের টানা বর্ষণে ডুবছে দেশের বিভিন্ন জেলা শহরসহ নিম্নাঞ্চল। প্লাবিত হচ্ছে ফসলের জমি, বাড়িঘর, রাস্তাঘাট। ভেসে গেছে মাছের ঘের। বন্ধ রয়েছে চাঁদপুর থেকে সব ধরনের লঞ্চ চলাচল। টানা বর্ষণে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে উপকূলীয় এলাকা। সাগর তীরবর্তী কলাপাড়া, কুয়াকাটা, পটুয়াখালী, বরিশাল, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, ভোলার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বিস্তারিত আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্টে-

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল থেকে জানান, ২ দিনের টানা বৃষ্টিতে ডুবতে বসেছে দক্ষিণাঞ্চল। সাগর তীরবর্তী কলাপাড়া, কুয়াকাটা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ঝালকাঠি ভোলার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে।

ঘরের মধ্যে পানি উঠে গেছে। পাকা সড়কগুলোতে হাঁটু সমান পানি। গত ৪৮ ঘণ্টার অবিরাম বৃষ্টিতে বরিশাল মহানগরীর অধিকাংশ রাস্তাঘাট এখন পানির নিচে। পানির নিচে তলিয়ে থাকায় এ রাস্তাগুলো দিয়ে চলাচল হয়ে পড়েছে বিপজ্জনক। ঘটছে দুর্ঘটনা। সবচেয়ে করুণ অবস্থা কীর্তনখেলা নদী তীরবর্তী পলাশপুর, রনুলপুর বস্তিগুলোতে। ঘরের মধ্যে পানি উঠে যাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন নিম্নবিত্তের মানুষগুলো। খাটের ওপর মালামাল নিয়ে বসে রয়েছে পরিবার নিয়ে। রাস্তাঘাট সব তলিয়ে গেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৯৬ মিমি। এর মধ্যে গতকাল সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১১৬ মিমি। বৃষ্টির কারণে নাকাল নগরবাসী। অনেক বসতবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। নগরীর নিচু এলাকা কীর্তনখোলা তীরের জনপদ সাগরদী ধান গবেষণা সড়ক, পূর্ব রূপাতলী, জাগুয়া, ভাটিখানা, নিউ ভাটিখানা, আমানতগঞ্জ, রসুলপুর, পলাশপুর, নবগ্রাম রোডের কিছু এলাকাসহ আরো অনেক এলাকায় হাঁটু পানি দেখা গেছে। সবচেয়ে বড় সংকটে পড়েছে কীর্তনখোলা তীর-সংলগ্ন রসুলপুর, কলাপট্টি, পলাশপুর, বরফকল ও স্টেডিয়াম বস্তির বাসিন্দারা। ওই সব এলাকার বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, শনিবার বিকাল ৩টা থেকে শুক্রবার ৩টা পর্যন্ত ১১০ মিঃমিঃ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বাতাসের গতিবেগ ছিল সর্বোচ্চ ১৬ নটিক্যাল মাইল। ৪ নম্বর সংকেত থেকে এখন ৩ নম্বর বিপদ সংকেত দেখতে বলা হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে ৪ নম্বর বিপদ সংকেত দেখা দেয়ায় পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন উদ্যোগে বৃহস্পতিবার রাতে জেলা প্রশাসক দরবার হলে দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়।

ঝালকাঠি প্রতিনিধি জানান, গতকাল সকাল থেকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করছে। বৃষ্টির পাশাপাশি বইছে দমকা হাওয়া। এদিকে সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি ঢুকে পড়েছে শহরের রাস্তাঘাট, ফসলের ক্ষেত ও মাছের ঘেরে।

চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, চাঁদপুর থেকে সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। গতকাল বৃষ্টির কারণে বন্ধ রয়েছে ঢাকা-চাঁদপুর নৌরুটে যাত্রীবাহী লঞ্চ। এতে সাধারণ মানুষ পড়েছে কিছুটা ভোগান্তিতে। অনেকেই না যেনে লঞ্চঘাটে এসে ফিরে যাচ্ছে। কর্র্তৃপক্ষ বলছে, আবহাওয়া স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে লঞ্চ চলাচল। চাঁদপুর বন্দর উপ-পরিচালক কায়সারুল ইসলাম জানান, চাঁদপুর- নারায়ণগঞ্জ রুটের সব ধরনের যাত্রীবাহী লঞ্চ বন্ধ রয়েছে। তবে যাত্রী সংকটের কারণে চাঁদপুর-ঢাকা রুটের লঞ্চ থেমে থেমে চলছে।

আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি জানান, বৃষ্টিপাতের কারণে আমতলী ও তালতলী উপজেলাসহ গোটা উপকূলীয় এলাকায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। স্লুইসগেট ও ড্রেনগুলো দিয়ে পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে পৌর শহরসহ দু’উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন শহর ও গ্রামে বসবাসরত ভুক্তভোগী কয়েক হাজার মানুষ। বিশেষ করে বেড়িবাঁধের বাইরে নদী তীরবর্তী এলাকাসমূহে বসবাসরত বাসিন্দারা বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন। তলিয়ে রয়েছে রোপা আমন ধানের ক্ষেতসহ মাছের ঘের, পুকুর ও পানের বরজ। ভারী বর্ষণ ও হালকা দমকা হাওয়ায় দুই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গাছ উপড়ে গিয়ে লাইনের তার ছিঁড়ে বন্ধ রয়েছে দু’উপজেলার বিদ্যুৎ সরবরাহ।

মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, মির্জাগঞ্জের নিম্নাঞ্চল কাকড়াবুনিয়ার মকুমা, সুবিদখালী, চরখালী, সুলতানবাদ, ছৈলাবুনিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। তলিয়েছে ফসলের মাঠ এবং মাছের ঘের। বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় হাঁটু পানি। উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থিত লঘুচাপের কারণে উপকূলীয় এলাকায় তিনদিন ধরে অবিরাম বর্ষণেই এমনটি হয়েছে। সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৪ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, বাগেরহাটে গত দু’দিন ধরে অবিরাম ভারী বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলের কয়েক হাজার বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেছে সহস্রাধিক চিংড়িঘের। মোড়েলগঞ্জ, শরণখোলা, রামপাল, মোংলা, বাগেরহাট সদর, চিতলমারী, কচুয়া ও ফকিরহাট উপজেলার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার পরিবার। মোংলা বন্দরে পণ্য ওঠানামার কাজও ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বাগেরহাটের শরণখোলায় পোস্ট অফিসসহ তিনটি গ্রাম তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার। আঞ্চলিক মহাসড়কের বিশাল অংশ ধসে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে যান চলাচল। ডুবে আছে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ। প্লাবিত হয়ে ভেসে গেছে চিংড়ি খামার ও পুকুরের মাছ। সারা দিনে রান্না হয়নি কয়েকশ’ পরিবারে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দারা। উপজেলা সদরের রায়েন্দা বাজারের পূর্বাংশ এবং রায়েন্দা সরকারি পাইল হাইস্কুলের পশ্চিম পাশ থেকে টিএন্ডটি এলাকা, খাদ্যগুদাম এলাকা, পাঁচরাস্তা ও বান্দাঘাটা এলাকার প্রায় সহস্রাধিক পরিবারের বাড়িঘরে হাঁটু পর্যন্ত পানি জমে রয়েছে। রায়েন্দা বাজারের পুরাতন পোস্ট অফিস এলাকা, উত্তর কদমতলা পুরো গ্রাম ও কেজি স্কুল এলাকার দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সাইনবোর্ড-বগী আঞ্চলিক মহাসড়কের শরণখোলা উপজেলা সদরের রায়েন্দা সেতুর দক্ষিণের সংযোগ সড়কে দু’টি পয়েন্টে ব্যাপক ধস দেখা দিয়েছে। যেকোনো সময় পুরো সড়ক ধসে যানবাহন চলাচল বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *