সিলেট: সিলেটে রায়হান খুনের প্রধান সন্দেহভাজন আকবর লাপাত্তা। ১৩ দিনেও পুলিশ তাকে আটক করতে পারেনি। পুলিশের ধারণা- আকবর দেশে নেই। ইতিমধ্যে দেশের অভ্যন্তরে তাকে ধরতে একাধিক অভিযান চালানো হয়েছে। এদিকে আকবর লাপাত্তা হওয়ার দিন থেকেই ‘গায়েব’ সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের সাংবাদিক নোমানও। তারও কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। আকবরের সঙ্গে সাংবাদিক নোমানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। সম্পর্কে তারা খালাতো ভাই বলেও জানা গেছে।
বন্দরবাজার ফাঁড়ি পুলিশের দায়িত্ব থাকাকালে আকবরের নানা বিতর্কিত ঘটনার সঙ্গে নোমানেরও সম্পর্ক ছিল। নোমানের বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নোমানের কোম্পানীগঞ্জের বাড়িতে গিয়ে তাকে খুঁজেছে। তার পিতা ইসরাইল আলীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। রায়হান খুনের আগে ও পরে নোমানের সঙ্গে একাধিকবার আকবরের মোবাইল ফোনে কথা হয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে- রায়হান হত্যার ঘটনায় বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি থেকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার পর এসআই আকবরকে পুলিশলাইনে সংযুক্ত করা হয়। ওইদিন সন্ধ্যায় আকবর নিজের মোটরসাইকেল নিয়ে পুলিশলাইনে যায়। পুলিশলাইনের ক্যান্টিনে সন্ধ্যার দিকে নাস্তাও করেন। এর এক পর্যায়ে তার সঙ্গে এসে যোগ দেয় সাংবাদিক নোমান।
নোমানের পুরো নাম আব্দুল্লাহ আল নোমান। সে স্থানীয় একটি দৈনিক ও অনলাইন পোর্টালের কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি হলেও বসবাস করতেন নগরীর হাউজিং এস্টেট এলাকায়। পুলিশলাইন ক্যান্টিনে থাকা অবস্থায় এসআই আকবর সিনিয়র এক কর্মকর্তাকে ফোন দেন। ওই কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এবং তার কাছ থেকে বিদায় নিয়েই লাপাত্তা হয়ে যান। কোম্পানীগঞ্জের সীমান্তবর্তী বরমসিদ্ধিপুর গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা জানিয়েছেন- ঘটনার দিন গত ১১ই অক্টোবর রাতে তারা সাংবাদিক নোমানের সঙ্গে আকবরকে সেখানে দেখেছেন। তারা মোটরসাইকেলে হেলমেট পরে বরমসিদ্ধিপুর গ্রামের হেলালের বাড়িতে যান। সেখানে কয়েক ঘণ্টা অবস্থান করেন। এরপর নোমানকে সঙ্গে নিয়ে আকবর ভারত সীমান্তে ঢুকে পড়েন। আর এতে সহায়তা করেছে বরমসিদ্ধিপুরের হেলাল। সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দা হওয়ার কারণে হেলালের সঙ্গে সীমান্তের ওপারের খাসিয়াদের ভালো সম্পর্ক। এছাড়া হেলাল এক খাসিয়া নারীকে বিয়ে করেছেন বলে এলাকার মানুষ জানেন। এ কারণে হেলালও সব সময় ভারতের খাসিয়া এলাকায় অবাধে যাতায়াত করে। হেলালের মাধ্যমে ভোরের আগে ভারতে প্রবেশের সময় আকবরের সঙ্গে সাংবাদিক নোমানও ছিলেন।
কোম্পানীগঞ্জের স্থানীয় সাংবাদিকরা জানিয়েছেন- আকবরের সঙ্গে নোমানের সম্পর্ক পারিবারিক। এ কারণে নোমান সিলেটে বসবাস করতেন এবং আকবরকেই সঙ্গ দিতেন। রায়হান খুনের আগে নোমান কোম্পানীগঞ্জে ছিল। সেখান থেকে ঘটনার দিন সকালে সে সিলেটে যায়। সিলেটে পৌঁছে তিনি আকবরের কাজে ব্যস্ত হয়ে যান। তারা জানান- নোমানের সঙ্গে গত ১২ই অক্টোবর তারা যোগাযোগ করতে পারেননি।
ওইদিন নোমান তার ফেসবুক আইডিও রিএ্যাক্টিভ করে ফেলেন। ফলে নোমান কোথায় আছে সেটি তারাও জানেন না। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারাও কোনো উত্তর দিতে পারেনি। এরই মধ্যে নোমানের পিতা ইসরাইল আলীকেও কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে আইনশৃঙ্খলার রক্ষাকারী বাহিনী। সাদা পোশাকে পুলিশদল কোম্পানীগঞ্জ এলাকায় এ সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়েছে। তারা নোমানের সন্ধান বের করতে পারেনি। রায়হান খুনের ঘটনায় পুলিশ সদর দপ্তরের একটি তদন্তদল ইতিমধ্যে সিলেটে তদন্ত করে গেছেন। তারা আগামী ২-৩ তিনের মধ্যে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে তাদের প্রতিবেদন দাখিল করবে। তবে- সিলেটে তদন্তকালে পুলিশ হেডকোর্টারের কর্মকর্তাদের নজরে বন্দরবাজার ফাঁড়ির আরেক এসআই হাসানউদ্দিনের কর্মকাণ্ড। প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয় আকবরকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছেন এসআই হাসানউদ্দিন। এমনকি আকবরের অপরাধের সহযোগী নোমানকে নিয়ে হাসানউদ্দিন বন্দরবাজার ফাঁড়ির সিসিটিভি’র ফুটেজ গায়েব করতে কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক পরিবর্তন করেন। এ কারণে পুলিশ হেডকোয়ার্টারের প্রাথমিক তদন্তের প্রেক্ষিতে এসআই হাসানউদ্দিনকেও সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশলাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। এ সময় নোমানের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেয়া হলেও তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। নোমানেরও মোবাইল এবং ফেসবুক, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ সব বন্ধ।
সিলেটে ক্ষোভ: রায়হান হত্যা বিচারের দাবিতে বন্ধন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থা’র উদ্যোগে শুক্রবার বাদ জুমা সিলেট নগরীর কাজলশাহ্ এলাকায় মানববন্ধন হয়েছে। বন্ধন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থা সভাপতি সোহেল আহমদ পাপ্পুর সভাপতিত্বে এবং লিটন আহমদ ও সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক রুমেল আহমদের যৌথ পরিচালনায় মানববন্ধনে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল খালিক, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদ লায়েক। উপস্থিত ছিলেন- বিশিষ্ট সমাজসেবী ডা. নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া, ৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি ওয়ারিছ মিয়া, সমাজসেবী আব্দুর রব হাজারী, ৩ নং ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি মো. শামীম আহমদ, দুলাল আহমদ, সালাউদ্দিন বকস সালাই, আলী আহমদ, মুক্তা মিয়া, নাসিরুল ইসলাম, নাসির, অখিল চন্দ্র, সাংবাদিক আব্দুল বাসিত, আলী আহমদ, খোকন মিয়া, বন্ধন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থার উপদেষ্টা আওলাদ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সোহেল আহমদ রাব্বি সহ সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন আহমদ, সাবেক সাংগঠনিক এমএ রায়হান, রাসেল আহমদ অর্থ সম্পাদক ফাহাদ আহমদ, দপ্তর সম্পাদক এনামুল হক মুন্না, সমাজসেবা সম্পাদক রবিউল ইসলাম রবি,সহ সম্পাদক সোহাগ আহমদ, আপ্যায়ন সম্পাদক রাহেল আহমদ প্রমুখ।
এদিকে- পুলিশের নির্যাতনে রায়হানের মৃত্যু ও দেশব্যাপী খুন ও ধর্ষণের প্রতিবাদে সিলেট নগরীর ১৪ নং ওয়ার্ড ইসলামী যুব আন্দোলনের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। নগরীর ছড়ারপাড় থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে কোর্ট পয়েন্টে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সিলেট মহানগরের সহ-সভাপতি ডা. রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজ বলেন, দেশে আজ বিচারহীনতার কারণে খুন, ধর্ষণ সহ অরাজকতা দিন দিন বেড়ে চলছে। ইসলামী যুব আন্দোলন ১৪ নং ওয়ার্ড শাখার সভাপতি আনিসুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মো. শাহীন আলমের পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন যুব আন্দোলন সিলেট মহানগরের সাধারণ সম্পাদক হাফিজ মাওলানা শরফ উদ্দিন খান, জেলা অর্থ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন, যুব কল্যাণ ও কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক শাহিদুল ইসলাম, দক্ষিণ সুরমা থানা সভাপতি মো. আল আমিন, ১৪ নং ওয়ার্ডের সহ-সভাপতি মো. আবুল হোসেন সহ থানা ও ওয়ার্ডের নেতৃবৃন্দ।