যশোরে বাসের মধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণ

Slider জাতীয় নারী ও শিশু


যশোর: যশোরে বাসের মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক কর্মজীবী নারী (২৫)। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ৬ বাস শ্রমিককে আটক করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। গণধর্ষণের শিকার ওই তরুণীকে চিকিৎসার জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তরুণীর মেডিকেল পরীক্ষা করা হয়েছে। আটক বাস শ্রমিকদের পুলিশ হেফাজতে কোতোয়ালি থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে ধর্ষিতা তরুণী বাদী হয়ে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেছেন। ওই মামলায় ৬ জনের নাম উল্লেখ করে ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। গণধর্ষণের শিকার ওই তরুণীর বাড়ি মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার শতখালী এলাকায়।

আলামত হিসেবে বাসটি জব্দ করেছে পুলিশ। আটক বাস শ্রমিক মনিরুজ্জামান মনির যশোর সদর উপজেলার রাজারহাট এলাকার আলী হকের ছেলে। সে পরিবার নিয়ে শহরের খড়কী এলাকায় ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতো।

বাদীর এজাহার ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মাগুরা শাখিলা উপজেলার শতখালী এলাকার স্বামী পরিত্যক্ত ওই নারী রাজশাহীর একটি হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে কাজ করে। বৃহস্পতিবার দুপুরে সে বাড়ি আসার উদ্দেশ্যে এম কে পরিবহনের (যশোর-ব ১১-০১২৪) একটি বাসে চড়ে রাজশাহী থেকে রওনা হয়। বাসটি রাত ১১টার দিকে যশোর শহরের মণিহার বাস টার্মিনালে পৌঁছায়। কানেকটিং কোনো বাস না থাকায় মেয়েটি ওই রাতে গ্রামের বাড়ি শতখালী যেতে না পেরে বিপাকে পড়ে। উপায়ন্তু না পেয়ে মেয়েটি বাসের হেলপার পূর্ব পরিচিত মনিরুজ্জামান মনিরকে একটি আবাসিক হোটেলে তাকে রাতের মতো থাকার ব্যবস্থা করে দেয়ার অনুরোধ করে। হেলপার মনিরুজ্জামান মনির একা একটি মেয়েকে রাতে হোটেলে থাকা নিরাপদ নয় বলে বুঝিয়ে সুঝিয়ে তার নিজের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়ে মণিহার বাস টার্মিনাল এলাকার একটি হোটেলে রাতের খাবার খাওয়ায়। এভাবে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মনির মেয়েটিকে নিয়ে স্ট্যান্ডে ঘোরাফেরা করতে থাকে। এক পর্যায়ে মনির কাকে যেন ফোন দেয়। তারপর সে মেয়েটিকে বলে এতো রাতে তার বাড়ি খড়কী এলাকায় যাওয়া সম্ভব নয়। তাই রাতের মতো মেয়েটিকে এমকে পরিবহনের ওই বাসের মধ্যে থাকার পরামর্শ দেয় মনির। পূর্ব পরিচিত হওয়ায় মেয়েটি মনিরের কথা মতো এমকে পরিবহনের ওই বাসের একটি সিটে বসে রাত কাটিয়ে দেয়ার মানসে বাসে গিয়ে ওঠে। মনির বাসটি মণিহার বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে সরিয়ে নিয়ে বকচর কোল্ড স্টোর এলাকার একটি নির্জনে নিয়ে পার্কিং করে। ইতিমধ্যে মনিরের আরো ২ জন সহকর্মী ওই বাসের কাছে আসে। তাদের আনা কোকাকোলা মনির ওই নারীকে খেতে দেয়। নারীটি সরল বিশ্বাসে তাদের দেয়া কোলাকোলা পান করার কিছুক্ষণের মধ্যে সে অচেতন হয়ে পড়ে। এদিকে নির্জন এলাকা হওয়ায় মনিরসহ ওই ৩ যুবক মেয়েটিকে পালাক্রমে ওই বাসের মধ্যেই ধর্ষণ করে। রাত আড়াইটার দিকে স্থানীয় নৈশপ্রহরী বিষয়টি জানতে পেরে মণিহার এলাকায় অবস্থানরত তার পরিচিত মোটর শ্রমিকদের জানান। খবর পেয়ে আরো ৩-৪ জন বাস শ্রমিক ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই মেয়েটিকে ফের ধর্ষণ করে। এভাবে রাতভর গণধর্ষণের শিকার হওয়ায় মেয়েটি রক্তাক্ত জখম হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে মণিহার এলাকায় টহলরত কোতোয়ালি থানা পুলিশ বিষয়টি বুঝতে পেরে ওই বাসে অভিযান চালায়। তারা রক্তাক্ত অবস্থায় ওই তরুণীকে উদ্ধার করে। এ সময় ওই বাসের হেলপার মনিরুজ্জামান মনিরসহ বাসে থাকা ৬ শ্রমিককে আটক করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। ধর্ষণের শিকার ওই নারীকে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পর তার মেডিকেল টেস্ট করানো হয়েছে। তাকে জেনারেল হাসপাতালে রেখে পুলিশ প্রহরায় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

এদিকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ৬ বাস শ্রমিকদের পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানান যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিশেষ শাখা তৌহিদুল ইসলাম ।

যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জমান জানান, ঘটনাটি আসলে কীভাবে ঘটেছে তা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি সকাল থেকেই কাজ শুরু করেছে। তদন্ত শেষ করার আগে প্রকৃত ঘটনা কীভাবে ঘটলো তা বলা মুশকিল। তবে বর্তমানে মেয়েটি সুস্থ আছেন। এদিকে বাসে নারী ধর্ষণের ঘটনার বিচার দাবি করেছেন যশোরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তাদের বক্তব্য হচ্ছে নারী নির্যাতন ও নারী ধর্ষণ বন্ধে সরকারকে আরো কঠোর হতে হবে। ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করতে হবে। এদিকে গণধর্ষণের শিকার ওই তরুণী এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছে।

এদিকে যশোর পরিবহন সংস্থা শ্রমিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোর্ত্তজা আলী বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। দেশব্যাপী যেখানে নারী ধর্ষণ ও নির্যাতনের প্রতিবাদে মানুষ মুখর হয়ে উঠেছে সেখানে যশোর বাসের মধ্যে একটি নারীর ওপর নির্যাতনের ঘটনা সত্যিই লজ্জার। তবে এই ঘটনাটি প্রকৃত পক্ষে গণধর্ষণ না পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে পাতানো গেম তা তদন্ত করে দেখার জন্য তিনি পুলিশের প্রতি অনুরোধ করেন। একই সঙ্গে আটক বাস শ্রমিকদের মধ্যে যারা নির্দোষ তিনি তাদের মুক্তি দাবি করেন। দোষী শ্রমিকের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *